ঢাকা: আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র, অর্থনীতি সব কিছুকে ধ্বংস করে দেশ একদলীয় বাকশাল কায়েম করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ মুখে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বললেও তারা দুর্নীতিতে নিমজ্জিত। তাদের শাসনামলে শুধু দুর্নীতি আর দুর্নীতি। আন্তর্জাতিক সংস্থ টিআইবির সদ্য প্রকাশিত রিপোর্ট তারই প্রমাণ। বর্তমান সংসদকে ভুয়া আখ্যা দিয়ে মঈন খান বলেন, সেখানে কোনো দেশে কোনো নির্বাচিত এবং জনপ্রতিনিধিত্বশীল সরকার নেই। জনগণের কাছে বর্তমান সরকারের কোনো জবাবদিহিতা নেই। এ জন্যই আওয়ামী লীগ সর্বত্র লুটপাট আর দুর্নীতি করছে বলে মন্তব্য করেন ড. মঈন খান।
বুধবার সন্ধ্যায় জাতীয় প্রেসকাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল আয়োজিত সদ্য কারামুক্ত ‘স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ জিয়াউর রহমান বীর উত্তমই আমাদের প্রেরণার উৎস এবং সদ্য কারামুক্ত মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমানের সংবর্ধনা’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. আব্দুল মঈন এ কথা বলেন আব্দুল মঈন খান।
আয়োজক সংগঠনের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাতের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন- কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম (বীর প্রতীক), বিএনপির প্রচার সম্পাদক জয়নাল আবদিন ফারুক, কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাধারণ সম্পাদক এস এম শফিউজ্জামান খোকন, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা প্রমুখ। অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধা দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. মঈন খান বলেন, আওয়ামী লীগ মুখে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে ফেনা তুলে অথচ মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত গণতন্ত্রকে হত্যা করে বাকশাল কায়েম করেছিল। বর্তমানেও দেশের গণতন্ত্রকে হত্যার মাধ্যমে একদলীয় বাকশাল শাসন কায়েম করতে চায়। কিন্তু আমরা বলব- যারা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের তালিকায় নাম লেখান তারা কখনো প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হতে পারেন না। আওয়ামী লীগ হচ্ছে সীমান্ত পাড়ি দেয়া দল। তারা কখনো রণাঙ্গণে থেকে মুক্তিযুদ্ধ করেনি। আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের ঊষালগ্নে ২৬ মার্চের আগে একটি পলায়নপর নেতৃত্ব ছিল।
তিনি ক্ষমতাসীনদের উদ্দেশে বলেন, ক্ষমতায় থেকে ইতিহাস যেভাবেই লিখুন না কেন, সত্য ইতিহাস একদিন জাতির সামনে প্রকাশিত হবেই। যেভাবে এইচটি ইমাম বিগত ৫ জানুয়ারির প্রহসণের নির্বাচনের কথা প্রকাশ করে দিয়েছেন।
সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, যে নির্বাচনে ১৫৪ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয় সেই সংসদ জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে না। এই সংসদ ও তার মাধ্যমে নির্বাচিত সরকার ভূয়া। জনগণের কাছে এই অবৈধ সরকারের কোনো জবাবদিহিতা না থাকায় দেশের সর্বত্র আজ লুটপাট চলছে। ব্যাংক-বীমাসহ সব আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে আজ ধ্বংস করে দিয়েছে।
সরকারের দুর্নীতির কথা তুলে ধরে ড. আব্দুল মঈন খান আরো বলেন, টিআইবি বলেছে, বাংলাদেশের একটি বিশেষ শ্রেণি জনগণের অর্থ লুট করে চুষে খাচ্ছে। ফলে স্বাধীনতার এতদিন পরও ধনী-গরিবের বৈষম্য কমেনি। পাকিস্তান আমলে যেমন ২২ টি পরিবার অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণ করতো বর্তমানে বাংলাদেশে ১২২ টি পরিবারের হাতে দেশের অর্থনীতি জিম্মি বলে তিনি মন্তব্য করেন।
তিনি দেশবাসীর কাছে প্রশ্ন রেখে বলেন, মুক্তিযুদ্ধের ৪৩ বছর পর আজ পর্যন্ত আমরা কতটুকু স্বাধীনতা অর্জন করতে পেরেছি।? আওয়ামী লীগ শুধু দুর্নীতিই উপহার দিয়েছে। টিআইবি বলছে, এবছর বাংলাদেশ দুর্নীতিতে ১১ ধাপ নিচে নেমেছে। দেশে প্রতিনিধিত্বশীল ও জবাদিহিতামূলক সরকার না থাকায় এ অবস্থা বলে তিনি মন্তব্য করেন।
তিনি অভিযোগ বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে অর্থনীতি, শাসন ব্যবস্থা, সচিবালয়, আইন বিভাগ, র্যা ব-পুলিশ, শিক্ষা ব্যবস্থা, পাবলিক সার্ভিস কমিশন সহ বিভিন্ন সংস্থা ধ্বংস করে ফেলেছে।
তিনি বলেন, একাত্তর সালে মুক্তিযুদ্ধ করেছি পরাজয়ের গ্লানি পাওয়ার জন্য নয়। আমাদের দেশ বর্তমানে স্বাধীন নয়। অন্যরা এদেশকে শাসন করছে। দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় মুক্তিযোদ্ধাদেরকে প্রয়োজনে আরো একবার রাজপথে রক্ত দেয়ার জন্য প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বান জানান তিনি।