ইংল্যান্ডে বিদেশী স্টুডেন্টদের স্থায়ী হওয়ার পথ বন্ধ

0
463

International-students-in-the-UKআবদাল হোসেন লন্ডন: স্টুডেন্ট ভিসায় আরো কড়াকড়ি আনতে যাচ্ছে ব্রিটেন। সরকারের ঘোষিত নতুন পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, ইউরোপিয় ইউনিয়নের (ইইউ) বাইরের দেশ থেকে পড়াশুনার জন্য ব্রিটেনে আসা শিক্ষার্থীদের (স্টুডেন্ট) কাজের সুযোগ বন্ধ করা হবে। কোর্স শেষ হওয়া মাত্র এসব শিক্ষার্থীদের দেশে ফেরত যেতে হবে এবং এক নাগাড়ে দুই বছরের বেশি সময়ের জন্য ভিসা দেয়া হবে না।
গত ১২ জুলাই রোববার হোম সেক্রেটারি  থেরেসা মে সরকারের এই পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন। শীগ্রই এই বিষয়ে চূড়ান্ত নির্দেশনা প্রকাশ করা হবে বলে জানান তিনি।
বর্তমানে পাবলিক ফান্ডেড কলেজে পড়ুয়া বিদেশী শিক্ষার্থীরা সপ্তাহে ১০ ঘন্টা কাজ করতে পারেন। কিন্তু নতুন নিয়ম চালুর পর সেই সুযোগ আর থাকবে না বলে জানিয়েছেন থেরেসা মে। ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা বর্তমানে সপ্তাহে ২০ ঘন্টা কাজ করতে পারেন। তবে নতুন নিয়মে এই বিষয়ে কোনো পরিকর্তন আসবে কিনা সে বিষয়টি এখনো পরিষ্কার নয়।
গত সপ্তাহে প্রকাশিত সরকারী এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৪ সালের জুন পর্যন্ত এক বছর সময়ে ইইউ’র বাইরের দেশ থেকে এক লাখ ২১ হাজার শিক্ষার্থী ব্রিটেনে পড়াশুনা করতে এসেছিলেন। ওই সময়ে মাত্র ৫১ হাজার শিক্ষার্থী যুক্তরাজ্য ছেড়ে গেছেন। ফলে শুধু স্টুডেন্ট ভিসার কারণে ওই বছর অভিবাসীর সংখ্যা ৭০ হাজার বৃদ্ধি পেয়েছে। এমন তথ্যের পরই থেরেসা মে নতুন পরিকল্পনা কথা ঘোষণা করলেন।
তেরেসা মে বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যবহার করে যুক্তরাজ্যে কর্মসংস্থান খোঁজার সুযোগ বন্ধ করতে এই উদ্যোগ।
২০১০ সালে কনজারভেটিভ নেতৃত্বাধীন কোয়ালিশন সরকার ক্ষমতায় আসার পরই ইমিগ্রেন্টদের ব্যাপকভাবে ধরপাকড়ের পাশাপাশি ইমিগ্রেশন আইনে বেশ কড়াকড়ি আরোপ শুরু হয়। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি কঠোরতার শিকার হয় স্টুডেন্টরা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর নানা কড়াকড়ি আরোপের পাশাপাশি স্টুডেন্টদের কাজের অনুমতিতেও আসে বড় পরিবর্তন। গত মেয়াদে সরকার মোট ৮৭০টি কলেজ বন্ধ করে দেয় বলে জানান থেরেসা মে। এছাড়া কলেজ পড় য়া শিক্ষার্থীদের কাজের অনুমতি রহিত করা হয়। বাতিল করা হয় কোর্স সম্পন্ন করার পর দুই বছর কাজের সুযোগও (পিএসডব্লিও)। শুধুমাত্র ইউনিভার্সিটি পড় য়া শিক্ষার্থীদের জন্য সপ্তাহে ২০ ঘন্টা কাজের সুযোগ চালু রাখা হয়। ওই মেয়াদেও থেরেসা মে হোম সেক্রেটারির দায়িত্বে ছিলেন।
থেরেসা মে গত মেয়াদেই স্টুডেন্ট ভিসার ঘোষিত পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তৎকালীন সরকারের কণিষ্ঠ অংশীদার লিবারেল ডেমোক্র্যাটস দলের আপত্তির কারণে সেটা সম্ভব হয়নি। তবে গত ৭ মে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে রক্ষণশীল সরকার এককভাবে ক্ষমতায় ফেরার কারণে তাদের পরিকল্পনায় বাধা দেয়ার আর কেউ রইলো না। ফলে থেরেসা মে যে পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন, তা বাস্তবায়ন হওয়া এখন কেবল সময়ের ব্যাপার বলে মনে করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন ২০১০ সালে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ২০১৫ সালের নির্বাচনের আগেই তিনি ব্রিটেনের নেট ইমিগ্রেশন বছরে এক লাখের নিচে নামিয়ে আনবেন। যে পরিমান লোক বছরে ব্রিটেনে আসে এবং যে পরিমান লোক বছরে ব্রিটেন ছেড়ে যায় তার পার্থক্যকে বলা হয় নেট ইমিগ্রেশন। কিন্তু ক্যামেরনের সরকার সেই প্রতিশ্রুতি পূরণে চরমভাবে ব্যর্থ হয় ক্যামেরনের গত সরকার। গত ৭ মে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের আগে ব্রিটেনের নেট ইমিগ্রেশন ছিলো প্রায় তিন লাখ।  গত মেয়াদে প্রতিশ্রুতি পূরণে ব্যর্থ হলেও ক্যামেরন বলেন, ইমিগ্রেশন নিয়ন্ত্রেণের সেই লক্ষ্য থেকে তিনি সরে আসেননি। ব্রিটেনে ইমিগ্রেশন নিয়ন্ত্রণে তিনি চেষ্টা অব্যহত রাখবেন। তবে ক্যামেরনের ইমিগ্রেশন নিয়ন্ত্রণের এই চেষ্টা কেবল ইইউ’র বাইরের দেশ থেকে আসা ইমিগ্রেন্টদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছে। কেননা ইইউভুক্ত  দেশ থেকে আসা ইমিগ্রেন্টদের সংখ্যা অব্যহতভাবে বাড়তে থাকলেও ইইউ আইনের কারণে ক্যামেরন এদের নিয়ন্ত্রণে কোনো পদক্ষেপ নিতে পারছেন না।
শুধু শিক্ষার্থী ভিসায় নয়, ওয়ার্ক পারমিট ভিসা, স্পাউস ভিসাসহ বিভন্ন ভিসা ক্যাটাগরিতে ইইউ’র বাইরের ইমিগ্রেন্টদের আমগন কঠিন করে তোলা হয়েছে।
ইইউর বাইরের দেশ থেকে আসা ব্যক্তিরা যাতে যুক্তরাজ্যে স্থায়ী হতে না পারেন, সেজন্য কনজারভেটিভ সরকার গত মেয়াদেই বেশ কিছু কঠিন শর্তের বাস্তবায়ন করে। বর্তমান আইন অনুযায়ী বৈধভাবে এক নাগাড়ে কেউ ১০ বছর যুক্তরাজ্যে বসবাস করলে স্থায়ীবাসের সুযোগ পান। এই পথ বন্ধ করতে ডেভিড ক্যামেরনের সরকার গত মেয়াদেই শিক্ষার্থী ভিসায় সর্বোচ্চ আট বছর এবং কর্মজীবী ভিসায় সর্বোচ্চ ৬ বছর থাকার সময় নির্ধারণ করে দেয়। এমন কড়াকড়ির পরও শিক্ষার্থী এবং কর্মজীবী ভিসা মিলে ১০ বছর পূর্ণ করে স্থায়ীবাসের সুবিধা আদায়ের একটি সুযোগ এত দিন ছিলো।  সরকারের নতুন পরিকল্পনায় এই সুযোগ বন্ধ করার বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে। নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী কোনো শিক্ষার্থীদের কোর্স শেষ করা মাত্রই  দেশে ফেরত যেতে হবে। সেখান থেকেই তাদের কর্ম ভিসার (ওয়ার্ক পারমিট) জন্য আবেদন করতে হবে। এক কোর্স শেষ করে অন্য কোর্সে ভর্তি হতে চাইলেও স্টুডেন্টদের নিজ দেশে গিয়ে আবেদন করতে হবে বলে ইঙ্গিত করেছেন হোম সেক্রেটারি। এতদিন স্টুডেন্ট ভিসার আট বছর এক নাগাড়ে ব্রিটেনে থাকা যেত। ব্রিটেনে থেকেই এক কোর্স শেষ করে অন্য কোর্সে ভর্তি কিংবা ভিসা ক্যাটাগরি পরিবর্তন করে ওয়ার্ক পারমিট ভিসা বা অন্য কোনো ভিসা ক্যাটাগরিতে আবেদনের সুযোগ ছিলো। নতুন নিয়মে সেই সুযোগ আর থাকবে না বলে জানিয়েছেন থেরেসা মে।
এর আগে ইমিগ্রেশন বিষয়ক মন্ত্রী জেমস ব্রোকেনশায়ার এবং বিজনেস সেক্রেটারি সাজিদ জাভিদ স্টুডেন্ট ভিসায় নতুন কড়াকড়ি আসছে বলে আভাস দিয়েছিলেন।
যুক্তরাজ্যের সুপারমার্কেট এবং ছোটখাটো ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো বিদেশী শিক্ষার্থীদের খন্ডকালীন কাজের ওপর বেশ নির্ভরশীল। ফলে শিক্ষার্থীদের কাজের সুযোগ রহিত করার প্রশ্নে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এসব ব্যবসায়ীরা। আবার ইউনিভার্সিটিগুলো আশঙ্কা করছে যে, কড়াকড়ির কারণে যুক্তরাজ্যে বিদেশী শিক্ষার্থীর আগমন কমে যাবে। তবে সরকার বলছে, ২০২০ সাল পর্যন্ত যুক্তরাজ্যে বিদেশী শিক্ষার্থীর আগমন বছরে ৬ শতাংশ করে বাড়বে।