Home ফিচার একমাত্র বাগানের বিনিময়ে স্ত্রী’র স্বপ্ন পূরণ !

একমাত্র বাগানের বিনিময়ে স্ত্রী’র স্বপ্ন পূরণ !

1105
0

শিব্বির আহমদ ওসমানী: আসলে আমি খুব একটা টিভি দেখি না। দেখার সময় ও সুযোগ খুবই কম। আজ সারাদিন বাহিরে কাজকর্ম করে একরকম ক্লান্ত হয়ে বাসায় ফিরে ফ্রেশ হয়ে সিটিং রুমে বসে চায়ের কাপে চুমোকের ফাকেঁ টিভিতে সংবাদ দেখছি। পরে রিমোট টিপ্তে টিপ্তে সনি টিভির জনপ্রিয় গানের অডিশন ‘ইন্ডিয়ান আইডল’-এ চোখ পড়লো। এখানে সারাদেশ থেকে বাচাইকৃত তরুন-তরুনীরা এসে বিচারকের সামনে গান করে। বিজয়ীরা বিভিন্ন পুরস্কার ও স্বীকৃতি পায়। 

এমন সময় এক প্রতিভাবান যুবতী গান করছে। সকলেই তার গানে মুগ্ধ। নাম তার  সাগরিকা। তার গানে মুগ্ধ হয়ে  বিচারকের আসনে বসা জনপ্রিয় শিল্পী নেহা কাক্কর তার সম্পর্কে জানতে চাইলেন। সে বলল আমার স্বামীকে নিয়ে আসছি। সে আমার অনুপ্রেরনা। তখন বিচারক তার স্বামীকে স্টেজে ডাকলেন। স্বামী এসে বউয়ের প্রশংসা করে বললেন, সে এতদূর আসতে পেরেছে তার কঠোর পরিশ্রম ও সাধনার মাধ্যমে।

স্বামী জানালেন তার বউয়ের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন ছিল এরকম একটি বড় অডিশনে পারফরমেন্স করতে। আজ করাতে পেরে আনন্দিত। কিন্তু আসাম থেকে কলকাতা আসতে তাদের কাছে কোনো খরচের টাকা-পয়সা ছিল না। পরে তিনি তার একমাত্র বাগান বাড়ির বিনিময়ে লোন নিয়ে আজ এই অডিশনে অংশগ্রহন করে বিজয়ী হয়েছেন। তার এ আবেগপ্রবণ কথায় বিচারক সহ উপস্থিত সকলের চোখে জল আসে। তখন বিচারকের আসনে বসা বড় হৃদয়ের অধিকারী শিল্পী নেহা কাক্কর ভিজা কন্ঠে ঘোষণা করলেন সকল লোন তিনি পরিশোধ করে বাগান বাড়িটি তাদের কাছে ফিরিয়ে দিবেন।  

আবেগাপ্লোত সাগরিকা নেহা ম্যামের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে অডিশনকে জানান, অর্থবিত্ত্ব না থাকলেও তার স্বপ্ন ছিল অনেক বড়। ভারতের আসামের বিদ্যুৎহীন গ্রামের এক গরীব পরিবারে তার জন্ম। গানের প্রতি তার ভীষন টান ছিল। সে গান গাইতে খুব ভালোবাসতো। পরিবার চালাতে বাবার হিমশিম খেতে হয়। আর গানের স্কুলে ভর্তি করাতো তার জন্য স্বপ্ন। বাসায় টিভি না থাকায় শিল্পীদের গানও নিয়মিত শুনতে পারতো না। সুযোগ পেলেই গান শুনত। বন্ধুদের আড্ডায় বা স্কুলে কোথায় সুযোগ পেলে গান গাইতো। গানের স্কুলে ভর্তি হতে না পারলেও বড় কোনো অডিশনে গান গাইতে তার ভীষন স্বপ্ন ছিল। টানাটানির পরিবারে হঠাৎ তার বিয়ের ডাক আসলো। তখন তার স্বপ্ন ভেঙ্গে যেতে বসেছিল। কিন্তু তার প্রতিভা থেমে থাকে নি।

বিয়ের পরে তার স্বামী ও শাশুড়ী তাকে খুব সাপোর্ট করেছেন। মাত্র দুই বছর আগে তার বাড়িতে বিদ্যুৎ আসে। তিনি তার স্বামীর মোবাইলে গান শুনে প্রেক্টিস করতেন। মোবাইল ছাড়া গান শুনার আর কোনো মাধ্যম তার কাছে ছিল না বলে ডুকরে ডুকরে কাঁদছিলেন।

তখন সাগরিকার স্বামীকে দাড়িয়ে সম্মান জানিয়ে শিল্পি নেহা বলেন, আপনি বড় ভাগ্যবান এত ভাল স্বামী পেয়ে। প্রত্যেক মেয়েরা এরকম স্বামী পাবে এই প্রত্যাশা করি।

সাগরিকার কঠোর পরিশ্রম ও স্বামীর অকৃত্রিম ভালোবাসা তাকে সফল করে। আসুন আমরাও একে অপরকে ভালবাসি ও সহযোগিতা করি। হয়ত আপনার সামান্য ভালবাসা ও সহযোগিতা অনেক বড় স্বপ্ন পূরনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

লেখক: শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক ও উদ্যোক্তা।

www.facebook.com/ShibbirAOsmani

Previous articleজমিয়তের (ইমামবাড়ী-কাসেমী) একাংশের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত
Next articleযে কোন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের পাশে থাকবে ভারত: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী