ওরা যে দলেরই হোক, ওদের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি দিন

0
1205

PR Placid
পি.আর.প্ল্যাসিড: বেশ কয়েক বছর আগের একটি ঘটনার কথা মনে পড়ছে। ইংরেজী নববর্ষ বরণ করতে রাত করে কাছের এক আত্মীয়র সাথে বাইরে বেরিয়েছিল লাল বাগের এক ( মেয়ে ) বাসিন্দা, নাম ছিল তার বাধন। বাধন নামের মেয়েটিকে কতিপয় ছাত্র-জনতা ভীড়ের মাঝে সুযোগ বুঝে পরিকল্পিত ভাবে বিবস্ত্র করে রাস্তায় অপদস্ত বা শ্লীলতা হানী করেছিল। তখন ছিল শীতের গভীর রাত। পরেরদিন ঢাকার সব পত্রপত্রিকাতে ঘটনা ক্ষেত্রের ছবি সহ বিষয়টি ফলাও করে ছাপা হয়। সেই ঘটনার বিচার অনেক চাপের মুখে শুনেছি হয়েছে ঠিকই কিন্তু তার ফলাফল বা রায় কার্য্যকর হয়েছে কিনা আমার মনে পড়ছে না এখন আর।
সেই ঘটনার পর দুঃখ পেয়েছিলাম এই জন্য যে, তখনকার সেই ন্যাক্কার জনক ঘটনার কিছুদিন পরই তখনকার সরকারী দলের একজন ক্ষমতাবান সাংসদ রাস্তায় মিছিল করেছিলেন মেয়েটির বিপক্ষে। সেই মিছিলের শ্লোগান এবং পরবর্তী বক্তব্য ছিল হামলাকারীদের পরোক্ষ সমর্থন করার মতন। সেটা দেখে অনেকটা বিবেক বর্জিত মনে হয়েছিল। শ্লীলতা হানীর সেই বিষয় নিয়ে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় ছাপা সংবাদের পেপার কাটিং দিয়ে একটি বইও প্রকাশ করেছিলেন সেই সাংসদ। বইটির গুকীর্তন করে বেশ ফলাও করে আবার প্রচারও করা হয়েছিল বিভিন্ন মিডিয়াতে। সেখানেই যদি বিষয়টির শেষ হতো, তাহলে কথা ছিল না। কথা হচ্ছে তখন দোষীদের নানা ভাবে অনুপ্রাণীত করেছিলেন পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষ ভাবে তিনি। তখনই মনে করেছিলাম এমন ঘটনার শেষ এখানেই নয়, ভবিষ্যতে আরো ঘটতে পারে। বাস্তবে ঘটেছেও, যার প্রমাণ পেলাম এবারে পহেলা বৈশাখ (১৪২২) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকায়।
বাধন নামের মেয়েটির উপর এমন ঘটনার পর দেশে ইংরেজী বর্ষবরণ বা খ্রীষ্টিয় বর্ষের বরণ উপলক্ষে দেশের রাজধানীতে নেওয়া হয়েছিল নানা ধরনের বাস্তব পদক্ষেপ। সেই সব পদক্ষেপ ছিল অনেকের মতে পরোক্ষ ভাবে খ্রীষ্টিয় বা ইংরেজী এই বর্ষবরণ উদসব যেন মানুষ সতস্ফূর্ত ভাবে সুন্দর ও স্বাধীন চেতনায় উদযাপন করতে না পারে, তারই সামিল। ঘটনার পরবর্তী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পদক্ষেপ গুলো ছিল মাথা ব্যথা হলে মাথা কেটে ফেলার মতন। এর পর থেকে কোন মেয়ে-ছেলে ৩১ শে ডিসেম্বর রাতে আর ঘর থেকে বের হতে সাহস করে নি। বর্ষ বরণ উৎসব দূরের কথা, অনেকের মতে বিষয়টি ধর্মীয় দৃষ্টি কোন থেকে বাংলাদেশে এর চর্চা ঠিক নয় বলে নিষিদ্ধ করার পক্ষে ছিল সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। ভেবে ছিলাম তাতেও হয়তো মেয়েদের বিবস্ত্র করন ও শ্লীলতা হানী করন করা বন্ধ হবে।
কিন্তু একথা সত্য যে, রাতে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন অনুষ্ঠনে মেয়েদের বিবস্ত্র করা এবং শ্লীলতা হানী করা বন্ধ হলেও দিনের বেলা তা বেড়ে গেছে অতি মাত্রায়। সম্প্রতি আমি প্রায় প্রতি বছর একুশের বই মেলা এবং বৈশাখী উৎসবে উপস্থিত থাকার জন্য দেশে যাই। এ জন্যই দেশের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী না হলেও ভোক্তক্তভুগীদের কাছ থেকে সরাসরি তার বিবরণ শোনার সুযোগ হয়। ভোক্তভুগীদের মুখ থেকে এমন সব কথা শোনা যায় যা সামাজিকতার কথা চিন্তা করে বা ভয়ে তারা কখনো দেশের মিডিয়াতে প্রচার করে না। এ ধরনের ঘটনার প্রতিবাদ বা কোন বিচার চেয়েও তারা যথাযত বিচার পায় না। যে কারণে বিচার চাওয়া তাদের জন্য ”অরণ্যের রোদন” মনে করে নীড়বে সহ্য করে। কেউ এসবের প্রতিবাদ না করার ফলে এর পরিমান ক্রমেই বেড়ে যাচ্ছে। এ বিষয়ে আমার সাথে কেউ এক মত পোষণ না করলেও কিছু করার নেই। তবে কেউ অবিশ্বাস করলে অনুরোধ করবো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আশে পাশে যে কোন জন সমাবেশ বা লোক জনের ভীড়ে কোন মেয়েকে নিয়ে হেটে দেখুন। আপনি নিশ্চয়ই কানে ধরবেন, আর কোনদিন এসব অনুষ্ঠানে না যেতে।
সম্প্রতি আমার ফেইসবুক একাউন্টের লিস্টে কম বয়সী একটি সুন্দরী মেয়েকে বন্ধু হিসাবে এড করেছি। স্বভাবত ভাবেই এড করার পর কিছু সময় ওর সাথে চেট করে ওর সাথে কথা বলার ইচ্ছা হলো। এরপর মেয়েটির কাছে আমি আমার কথা বলার ইচ্ছার কথা জানিয়ে ওর ফোন নম্বর চাইলাম। মেয়েটি তাৎক্ষণিক ভাবে তার মোবাইল নম্বর আমাকে দিতে অস্বীকার করলো। শুধু তাই নয়, মেয়েটি কঠিন ভাষায় ছেলে বিদ্বেষী কিছু কথাও বলল আমাকে। এমন কিছু কথা সে বলল, যা শুনে আমি তখনই তাকে আনফ্রেন্ড করে দেবার কথা ভাবী। কিন্তু তখন অন্য কাজে মন ছিল বলে তখনই আর মেয়েটিকে লিষ্ট থেকে বাদ দেওয়া বা আনফ্রেন্ড করা হয়নি। তবে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম ওর সাথে আর কখনো চেট বা যোগাযোগ না করার।
পরের দিন ফেইসবুক সাইন ইন করে কিছু নোটিফিকেশন দেখে সাথে সাথে ইনবক্স চেক করলাম। দেখি মেয়েটি আমার উদ্দেশ্যে ইনবক্সে বেশ কিছু ম্যাছেস লিখে পাঠিয়েছে। যার শুরুতেই ক্ষমা চেয়ে সে লিখেছে যে, সে আমার প্রোফাইল দেখে বুঝতে পারে যে আমি অন্যদের মত না। আমি দেশের বাইরে থাকি এবং আমাকে তার মোবাইল নাম্বার দিলেও আমি যে তাকে সময়-অসময় বিরক্ত করবো না। তাই সে তার মোবাইল নাম্বার স্বেচ্ছায় লিখে আমার ফেইসবুক ইনবক্সে দিয়ে সময় পেলে ফোন করার অনুরোধ করে লিখেছে। সেখানে আমি মেয়েটির নাম্বার পেয়ে তৎক্ষণাত আর ফোন করি নি, যতক্ষণ পর্যন্ত সে নিজে থেকে সরাসরি ফোন করে কথা বলতে না বলেছে।
মেয়েটির নাম মনে করুন জুলি। জুলি যখন আমার প্রোফাইল ঘেটে দেখেছে বা জেনেছে আমি লেখালেখি করি, তখন নাকি ও সিদ্ধান্ত নেয় ওর জীবনের সব কাহিনী আমাকে বলবে। এরপর আমাকে ফোন করার জন্য অনুরোধ করলো। ওর অনুরোধে আমি একদিন গভীর রাতে জাপান থেকে ওকে ফোন করলাম। ফোন করার পর বিরতিহীন ভাবে ওর জীবনে ঘটে যাওয়া অনেক কথাই বলতে শুরু করলো। আমি মন দিয়ে শুনলাম ওর সব কথা। শুনে মনে হলো, ওর সব কথা যদি লিখতে বসি, তা’হলে মোটা একটি বই লেখা যাবে।
জুলি জানালো, তার ছোট একটি ভাই আছে, বয়সে তার থেকে অনেক ছোট। ভাইটি এখন কলেজে পড়ে। তাকে না কি অনেক অনুরোধ করে বলেছে, বৈশাখী অনুষ্ঠান কিম্বা একুশের কোন অনুষ্ঠানে যেন তাকে নিয়ে যায়। অনুষ্ঠান গুলোতে এমন সব ঘটনা ঘটে তা তার ভাই জানে বলেই না কি তাকে কখনো নিয়ে যেতে চায় নি বা নিয়েও যায় নি। অনেক বলে কইয়েও কখনো বাইরে কোনদিন কোন অনুষ্ঠানে সে তার ভাইয়ের সংগে এক সাথে ঘুরতে যেতে পারে নি। ভীড়ের কথা চিন্তা করে না কি কখনো বড় কোন অনুষ্ঠানেও নিয়ে যায় নি। ঢাকার বন্দী জীবন থেকে কিছুটা হলেও খোলা আকাশের নীচে স্বাধীন ভাবে ঘুরে বেড়ানোর স্বাদ পেতে বন্ধুবান্ধবদের সাথে ঘুরতে যেতে মন চাইতো সবসময়। যে কারণে পরিবারের অন্য কাউকে না জানিয়ে বান্ধবীদের সাথে গত বছর ১৪২১ এর পহেলা বৈশাখ সে বাইরে ঘুরতে বেরিয়েছিল। সাথে ছিল তার এক খালাতো ভাইও। এই ভাইয়ের সাহসেই না কি সেদিন সে বান্ধবীদের সাথে ঘরের বাইরে গিয়েছিল আমাদের বাংলা বর্ষ উদযাপন উপলক্ষে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ও বাংগালীর প্রানের অনুষ্ঠানে।
সেদিন সাড়া বেলা ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় অনুষ্ঠিত বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ঘুরে যখন সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলো, তখন বাড়ি ফেরার কথা ভাছিল ওরা সবাই। শেষ বারের মত আনন্দ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষক মিলনায়তন (টিএসসি )-র সামনে দিয়ে হেটে আসছিল ওরা সবাই মিলে। টিএসসিতে ভীড়ের মধ্যে পড়ে অন্য বান্ধবীদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে জুলি। ভীড়ের মধ্যে তখন একদল ছেলে তাকে একা পেয়ে ঘিরে ধরে। এর পরের কথা গুলো বলতে গিয়ে জুলি কান্নায় ভেংগে পড়ল। সে আমাকে বলল, ছেলে গুলো তার গায়ের কাপড় ছিড়ে ফেলল। চারি পাশ থেকে অনেক গুলো হাত এসে খাবলে ধরলো ওকে। ওরা একে একে ওর শরীরের সাথে লেপ্টে ধরে ওর পুরো শরীর খাবলে ধরলো। অনেকক্ষণ কান্না কাটি করেও পারলো না ওদের ভীড় থেকে বেরিয়ে এসে নিজেকে বাঁচাতে। আমাকে ওর কথা গুলো বলছিল আর কান্না করছিল। এর আগে না কি কখনো অন্য আর কাউকে শেয়ার করে নি আমার মতন ওর খারাপ এই অভিজ্ঞতার কথা গুলো। এই ঘটনার পর সে আর এখন ঘর থেকেই বের হতে সাহস পায় না। ছেলেদের পাশ দিয়ে রাস্তায় হেটে যাবার সময় এক ধরনের ভয় আর ঘৃণা কাজ করে ওর মনে। তার এই ঘটনার পর কয়েকবার না কি সে ঘুমের বড়ি খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু ব্যর্থ হয়েছে ডাক্তারদের সুচিকিৎসা ও আন্তরিকতার জন্য।
জুলি আমাকে আরো জানালো এর আগে কোন ছেলের হাত তার শরীর স্পর্শ করতে পারে নি। সতীত্ব নিয়ে খুব বেশী অহংকার করতে চেষ্টা করছিল। কিন্তু এমন ভাবে ছেলেদের হাতের স্পর্শ পেল সে, যে কারণে অন্য কোন ছেলেদেরই সে আর বিশ্বাস করতে পারছে না এখন আর। ঘটনা যখন ঘটেছিল তখন সে ছিল তেজগাঁও এলাকার একটি কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রী।
এর আগেও আমি জুলির মত কয়েকটি মেয়ের সাথে কথা বলে তাদের এমন বাজে অভিজ্ঞতার কথা শুনেছি, যারা একুশের বই মেলাতে গিয়ে অর্জন করেছে ভিড়ের মাঝে এমন অভিজ্ঞতা। তাদের এই খারাপ অভিজ্ঞতার জন্য কখনো আর বই মেলাতে যাবার নাম করে না তারা। আমার ধারনা, অনেক মেয়েই এমন বাজে অভিজ্ঞতার কারণে দেশের বড় কোন অনুষ্ঠানে, যেখানে আমাদের সংস্কৃতির ধারা বহন করে, সেখানে যেতে চায় না। দেশের বর্তমান এমন অবস্থার কথা চিন্তা করলে মনে হয়, আমাদের দেশে এসব ঘটনার আর বোধ হয় কখনো শেষ হবে না। কারণ সম্প্রতি টিএসসিতে মেয়েদের বিবস্ত্র করার ঘটনা ঘটার পর সংশ্লিষ্টরা যে ভাবে এর তদন্ত না করে এটাকে সাজানো নাটকে পরিণত করার চেষ্টা করছে, এটা দেখে বলতে ইচ্ছে হয়, আগামীতে ওরাই শিউর আবার ঘটাবে এমন জঘন্য ঘটনা। আর এই ঘটনার ব্যপ্তী বাড়াতেই কর্তৃপক্ষ পরোক্ষ সমর্থন দিচ্ছে বা উৎসাহিত করছে যেন সকলের চেনা জানা এই চক্রটিকে।
এবার পহেলা বৈশাখ (১৪ এপ্রিল) এর আগের দিন দেশ থেকে জাপান ফিরে আসি। জাপানে পৌছেই আমার আইফোন অন করে যে সংবাদ পেলাম ফেইসবুকে, তা দেখে আৎকে উঠছিলাম। অবিশ্বাস্য ঘটনা যেন ঘটে গেল আমাদের বাংলা নববর্ষবরণ অনুষ্ঠানে। তাও আবার দিনের বেলা, আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যদের দ্বারা শান্তি শৃংখলা রক্ষা করতে দ্বায়ীত্ব পালন করার সময়। সেও আবার দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকায়।
পরের দিন ১৫এপ্রিল বুধবার ঘটনার আরো বিস্তারিত বিবরণ জানতে পেলাম ফেইসবুকে আপ করা বিভিন্ন পত্রিকার লিংক দেখে। প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য শুনে মনে হয়েছে একটি রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনের সদস্যদের দ্বারা ঘটেছে সেখানে ইতিহাসের জঘন্যতম ন্যাক্যার জনক ঘটনা। কোন কোন মিডিয়া আবার তাই বলতে চাচ্ছে। কিছু কিছু মিডিয়াতে প্রত্যক্ষদর্শী ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতা লিটন নন্দী, সেখানে মেয়েদের বিবস্ত্র করা অতপর যা বর্ণনা করেছেন তাতে অনেক বিষয় স্পস্ট ফুটে উঠেছে যা আমাদের বর্তমান সরকারের আমলে এবং শিক্ষিত, সচেতন সমাজে মোটেও কাম্য নয়। এবং ঘটে যাওয়া এই ঘটনা মোটেও মেনে নেওয়ার মতন না। জুলির বলা অভিজ্ঞতার সাথে এবারের ঘটনার তুলনা করলে গা শিউরে উঠার মত যেন।
তার বক্তব্য শুনলে স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে মনে, আমাদের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কর্তা ব্যক্তিগণ কাজে এত অবহেলা করছে কেন? লিটন নন্দী ছাড়াও অন্যদের অভিযোগের কথা শুনে মনে হয়, তারা সরকারী দলের ছাত্র সংগঠনকেই দোষী করতে চাইছে। সার্বিক বিষয় চিন্তা করলে আরো বেশী ভাবতে হয়, লিটন নন্দীদের সংগঠন আর অন্য কোন ছাত্র সংগঠনের মধ্যে এত বেশী দুরত্ব কেন? অন্য যে কোন ছাত্র সংগঠনের সাথে লিটন নন্দীদের সংগঠনের মধ্যে এমন কি বিরোধ যে কারণে ছাত্র ইউনিয়ন নেতা লিটন বা অন্য কেউ সরকারী দলের ছাত্র সংগঠনের সদস্যদের প্রতিদ্বন্দী ভেবে তাদের ফাঁসানোর জন্য মিথ্যা অপবাদ দিতে পারে?
ধরে নিলাম ছাত্র নেতা লিটন মিথ্যাই বলেছেন। কিন্তু তার যে হাত ভাংগা। সেই সব আইন শৃংখলা বাহিনীর কর্মকর্তা বৃন্দ, যারা মিডিয়াতে অহেতুক কথা বলে বিতর্ক সৃষ্টি করছেন তাদের উদ্দেশ্য করে বলছি, কোথায়, কি ভাবে ভেংগেছে তার এই হাত, সেটারই তদন্ত করুন না, তবেই না হয় ঘটনার কিছুটা বেরিয়ে আসবে। কিন্তু তা না করে মিডিয়াতে যে ভাবে বক্তব্য দেওয়া হচ্ছে তদন্তর আগেই, তা মোটেই ভালো মনে হচ্ছে না। বরং এতে করে আমার ধারনা, উৎসহিত করা হচ্ছে যারা ঘটনা ঘটিয়েছে তাদেরকে।
ধরে নিচ্ছি যা ঘটেছে, তার চেয়ে বেশী রটনা করছে আমাদের মিডিয়া গুলো। কিন্তু এর সত্যতা উদঘাটন কেন করতে জোড় দেওয়া হচ্ছে না এখনো। যারা এধরনের ঘটনা ঘটায় তারা সুস্থ্য মস্তিস্কের হতে পারে না। এদের রুচিবোধ বলতে কিছু আছে কি না তাও জানি না। তবে এদের কুরুচী সম্পন্ন বলা যায়। কেন যে এদের এখনো সনাক্ত করে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি দেবার ব্যবস্থা করা হচ্ছে না, বুঝি না। অতি সত্বর সত্য উদঘাটন করে প্রকৃত দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। ঘটনা যে সত্যি তা গোপন করা যাবে না। কারণ, সত্য কখনো গোপন থাকে না। আমি জানি, শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করলে ফল কখনো ভালো হয় না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকার ঘটনা ছাড়াও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাহাংগীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ে একই দিনে প্রায় একই ধরনের ঘটনা প্রসংগে বলতে গিয়ে, বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর ছেলে জয়ের অপ্রিয় সত্য একটি কথার উল্লেখ করছি, সজীব জয় বলেছিলেন, আওয়ামী লীগের শত্রু আর কেউ না। আওয়ামী লীগই আওয়ামী লীগের শত্রু। তার এই কথার সত্য প্রমাণ অনেক ক্ষেত্রেই হয়েছে। এখানেও সত্য হবে যদি ছাত্র নেতা লিটন নন্দী সহ অন্যদের অভিযোগ সত্যি হয়। তা না হলে সরকার এবং আওয়ামী লীগ তাদের কোন অংগ সংগঠন কেন এগিয়ে আসছে না ঘটনার প্রতিবাদ করতে বা দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির জন্য বিচার চাইতে। বিচার চেয়ে সাড়া জীবনের জন্য এসব বন্ধ করতে কেন মানব বন্ধন করছে না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার কাছাকাছি যখন দিনে দুপুরে আমাদের জাতির সর্বজন স্বীকৃত উৎসবে মেয়েদের বস্ত্রহীন করে কুরুচী পূর্ণ একদল ছেলে আনন্দ উল্লাস করছিল তখন হাজার লোকের দর্শনার্থীর ভূমিকার কথা শুনলেও, লিটন নন্দীদের মতন কয়েকজন দ্বায়ীত্বশীল ছাত্রর এগিয়ে আসাকে ছোট করে দেখছি না। আমার বিশ্বাস, যে কোন ছাত্র সংগঠনে হাজারটা অকর্মন্য সদস্য না রাখার চেয়ে শূণ্য আরো ভালো। এসব ছাত্র সংগঠনে লিটন নন্দীদের মতন একজন সদসই যথেষ্ট। কারণ বর্তমান সরকার যত ভালো কাজই করুক না কেন, সরকারের ইমেজ নষ্ট করে সরকারের পতন ঘটাতে এরাই যথেষ্ট ভূমিকা পালন করতে পারে। এর বেশী কিছু করা আর দরকার পরবে না।
প্রবাসে বসে আমি পুরাতন ঢাকায় বিশ্বজিত হত্যা কান্ডের ঘটনা দেখেছি। দেখেছি কোন এক অদৃশ্য শক্তির চাপের মুখে এর বিচার করতেও। যদিও এখনো কার্য্যকর করা হয় নি বিচারের সেই ফলাফল বা রায়। বিশ্বজিতের হত্যা কান্ডের ঘটনার মত প্রধানন্ত্রীকে পহেলা বৈশাখ টিএসসির নিকটেই ঘটে যাওয়া ঘটনার বিষয়টি নিয়ে ভাবতে হবে। আমার বিশ্বাস, দেশের সার্বিক পরিস্থিতির কথা চিন্তা করেই এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে এর সঠিক বিচার করা প্রয়োজন। নতুবা এই ঘটনাই যথেষ্ট হবে সরকারের পরিবর্তন ঘটাতে।
আপনারা যে কয়জন নারী ক্ষমতার শিখরে আছেন, তাদের কথা বাদ দিলেও দেশের প্রায় মেজরিটি এখন মনে হয় মহিলা। সুতরাং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মহিলাদের উপর এমন ন্যাক্কার জনক ঘটনার বিচার করা আপনার সরকারের উচিৎ বলে আমি মনে করছি। এবং এর বিচার করা উচিৎ আমাদের দেশের উন্নয়নের চাবী কাঠি হিসাবে এই মহিলাদের কথা ভেবেই। এই কথা জোড় দিয়ে বলতাম না, বলছি এই জন্য যে, আপনার সরকার দেশে মানবতা বিরোধীদের বিচার ও ফাঁসির অর্ডার কার্য্যকর করছে। যখনই আপনার সরকার এই বিচারের রায় কার্য্যকর করতে অটল ঠিক তখনই ঘটনা গুলি ঘটানো হচ্ছে দেশের অভ্যন্তরে মনে হয় পরিকল্পিত ভাবে। যখন জাতির শত্রু সেই ধর্ষণকারীদের ফাঁসির রায় কার্য্যকর করা হচ্ছে, তখন একই ঘটনা ঘটিয়ে ওরা পার পেয়ে যাচ্ছে এটা কি করে সম্ভব? আমি কোন মানুষকেই খুন বা ফাঁসির পক্ষে না। তারপরেও যেহেতু স্বাধীনতা বিরোধী ও মানবতা বিরোধীদের বিচারে ফাঁসির আদেশ কার্য্যকর করা হচ্ছে তাই এসব ঘটনার হোতাদের ফাঁসি হওয়া উচিৎ বলে আমি মনে করি অবশ্যই।
সবচেয়ে অবাক হই বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তাদের দ্বায়ীত্ব পালনে ব্যর্থ হলেও তাদের পদত্যাগ না করতে দেখে। পদত্যাগতো তারা করেই না উল্টো দেখি, তারা মিথ্যা কথা বলে, শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করে তারা। তারা নিজেদের পদ ও অবস্থান ঠিক রাখতে নানা রকম মিথ্যা কৌশল অবলম্বন করছে। আমার মনে হয় এসব ঘটনার পুনরাবৃত্তি দেখতে না চাইলে, প্রথমেই ঘটনা কালে দ্বায়ীত্ব প্রাপ্তদের বরখাস্ত করা দরকার, যেন যে কোন তদন্ত কাজ সুষ্ঠু ভাবে পরিচালনা করতে এদের দ্বারা প্রভাবীত হতে না হয়। এরপর বিচার বা অন্য কিছু করা হোক।
তবে এসব ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের বিচার করার অনেক পথই খোলা আছে। যার যে কোন একটি অবলম্বন করলেই এরা দ্বিতীয়বার আর এমন ঘটনা না ঘটানোর কথা চিন্তা করবে। বাংলাদেশে এবার ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যে এলাকায় মংগল যাত্রা অনুষ্ঠিত হয়েছে, সেখানেই আবার কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে ঘটে গেল অমংগল যাত্রা। সেখানে যদি একটি মেয়ের উপর একজন দ্বারা বিবস্ত্র করনের ঘটনা ঘটতো, তাহলে ছিল ভিন্ন কথা। বিষয়টিকে অন্য ভাবে চিন্তা করলেও কথা বলা যেতো অন্য ভাবে। কিন্তু কয়েকজন মেয়েকে করেছে কয়েক ঘন্টা ধরে বিবস্ত্র ও ঘটিয়েছে ধর্ষণের মতন ঘটনা। তাও আবার দলবদ্ধ হয়ে বাজনা বা বাঁশি বাজিয়ে, তাই বিষয়টি অবশ্যই পরিকল্পিত ভাবে হয়েছে বলা যায়, এতে সন্দেহ নেই। এই ঘটনার কথা চিন্তা করলে, আমরা এপর্যন্ত পত্র-পত্রিকাতে পড়া পাকিস্তান আমলে বা স্বাধীনতা যুদ্ধে ঘটে যাওয়া ঘটনার সাথে তুলনা করতে পারি। যা না কি অতীতকেও হার মানিয়েছে আমাদের দেশের জানোয়ারের মতন স্বভাবের ছেলেরা।
শুনতে কষ্ট হলেও সত্য যে, আমি ছাত্র নেতা লিটন নন্দীর কথা বিশ্বাস করছি। লিটন নন্দী ঘটনার সাথে সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রক্টর স্যারের কাছে অভিযোগ করে সহযোগিতা চাইতে গেলে ঘরে বসে যে খেলা খেলতে দেখার কথা উল্লেখ করেছেন, তা তার ব্যক্তিগত সময়ে খেলতেই পারেন মনে করে আমলে না আনলেও তার একজন ছাত্র হাত ভাংগা অবস্থায় বিপদে পরে কোন কূল কিনারা না পেয়ে যখন কর্তৃপক্ষের দ্বারস্থ হয় তখন তাৎক্ষণিক ভাবে তার কর্তব্যের রুটিনে পরিবর্তন আনতে পারেন। এটা একান্তই মানবিকতার খাতিরেই হতে পারে। লিটন গিয়ে এত বড় একটি ঘটনার কথা বললে প্রক্টর তখন কোন আমলে আনলেন না এটা ভাবতে অবাক লাগে। বিষয়টি বলার সাথে সাথে না হোক একদিন পরে হলেও দ্বায়ীত্ব পালনে ব্যর্থতার জন্য পদত্যাক করলে বোঝতাম যোগ্য শিক্ষক তিনি। কিন্তু তা না করে সেখানে কিছু ঘটেনি, সিসিটিভির ফুটেজে কিছু নেই বা আইন শৃংখলা বাহিনীর দায়ীত্ব পালনে কোন ভুল ছিল না এমন বক্তব্য গুলি আমলে নিয়ে কর্তৃপক্ষের ধীর গতিকে কোন ভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। এমন বিবেকবর্জিত দ্বায়ীত্ব পালনের জন্য জাতি কখনোই তাদের ক্ষমা করবে না।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিষয়টির জন্য দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, উনি দেশের জন্য অনেক কিছুই করছেন। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করছেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করে আইনের আওতায় এনে ফাঁসির আদেশ কার্য্যকর করার ব্যবস্খা করছেন, দেশকে করছেন ডিজিটাল। সব কিছুই করছেন তিনি দেশের উন্নতি ও জনগনের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য। আর তার দেশের জনগনই যদি অনিরাপদ জীবন কাটায় তাহলে এত কিছুর লাভ হবে কি? এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন শিক্ষকদের দিয়ে ছাত্র সমাজকে শিক্ষিত করতে চাইলে জাতির আর ভাগ্যের উন্নয়ন সম্ভব হবে না। সে সাথে আপনার এবং জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা কখনোই হবে না এই দেশ। অবশ্যই দেশ হবে পাকিস্তানের সেই হায়েনাদের মতন যারা মেয়েদের বিবস্ত্র করে শ্লীলতা হানী করেছে ওদেরই কাংখিত দেশ।
অনেক কিছু বলার ছিল। অল্প পরিসরে বলার সুযোগ নেই। তবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট আকুল আবেদন, জুলির মতন কোন মেয়ের যেন আর বিনা দোষে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে না হয়, কোন সন্তানের সামনে যেন কোন মাকে বলতে না হয়, আমার সাথে বাচ্চারা আছে আমাকে ছেড়ে দিন প্লিজ। এই জন্য অচিরেই ওদের ধরে কাদের মোল্লার মতন ফাঁসি কাষ্ঠে ঝুলানোর ব্যবস্থা করুন। এই দেশে মানুষের সুষ্ঠু বিচার আদায়ের জন্য এটা আপনাকে দিয়েই সম্ভব। এই জন্য ছাত্রদল, ছাত্রলীগ আর ছাত্র শিবির বলার দরকার নেই। যেমনটি আপনার সরকার করেছিলো পুরাতন ঢাকার বিশ্বজিৎ হত্যার বিচার।
আমি কোন ছাত্র সংগঠন করি না, অতীতেও সমর্থক ছিলাম না। কোন ছাত্র সংগঠনের আদর্শ সম্পর্কেও তেমন কিছু জানি না। তবে প্রশংসা করছি ছাত্র ইউনিয়নের ছেলেদের। ওরা নিজের গায়ের কাপড় খুলে পড়িয়ে দিতে পারে বিবস্ত্র মেয়েদের গায়ে লজ্জা ঢাকার জন্য। আর অন্য দলের ছাত্র সংগঠনের ছেলেরা কি করে? ওরা পারে লাজ্জা ঢাকার জন্য পড়া মেয়েদের গায়ের কাপড় খুলে নিতে। সবই স্বাধীন দেশে আপনার সরকারের আমলেই ঘটছে। অতীতে অন্য কোন সরকারের আমলে যে এমন ঘটনা ঘটে নি, তা নয়। তবে আপনার সরকারের আমলে এমন ঘটনা কেউই প্রত্যাশা করে না। আপনার সরকারের কাছে দেশের মানুষের প্রত্যাশা একটু বেশী এবং ভিন্ন তর। তাই বলা।
তাই সময় এসেছে, এর বিহিত করুন, নতুবা এক সময় দেখবেন দেশের জনগন আইন হাতে তুলে নিতে বাধ্য হবে। সরকার ব্যর্থ হলে দল মত নির্বিশেষে এক সাথে এর প্রতিবাদ জানানোর জন্য আর প্রতিহত করতে রাস্তায় নামবে এই দেশের শান্তি প্রিয় মানুষ। তখন মনে হবে, এটাই যেন হওয়া উচিৎ ছিল। তা না হলে বাংগালীর উৎসব আর উৎসব থাকবে না, হয়ে যাবে অন্য কিছু।
পি.আর.প্ল্যাসিড- জাপান প্রবাসী লেখক ও সাংবাদিক।