ঢাকা: গুম হচ্ছে, এটি অস্বীকার করার উপায় নেই, তবে সরকার এসব ঘটনায় মোটেও নিষ্ক্রিয় নয় বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য বিষয়ক উপদেষ্টা ও দ্যা অবজারভার এর সম্পাদক ইকবাল সোবহান চৌধুরী। শনিবার বিবিসি বাংলাদেশ সংলাপে তিনি এমন মন্তব্য করেন। সংলাপের এই পর্বের বিষয়বস্তু ছিল বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি।
বেশিরভাগ দর্শকই বাংলাদেশের মানবাধিকার কমিশন যথাযথভাবে কাজ করতে পারছেনা বলে সংলাপে মত প্রকাশ করেন।
সংলাপের শুরুতে একজন দর্শক জানতে চান সাম্প্রতিক সময়ে অনেকগুলো গুমের ঘটনায় অনেক ক্ষেত্রে তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়নি। গুমের ঘটনাগুলোর ক্ষেত্রে কি রাষ্ট্রের এক ধরনের নিষ্ক্রিয়তা লক্ষ্য করা যাচ্ছে?
এই প্রশ্নের যৌক্তিকতা বোঝাতে এই দর্শক তার পরিবারের একজন সদস্যের গুম হওয়ার পরের ঘটনার বিবরণ তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, ‘আমার ভাইকে গুম করা হয়েছে এক বছর আগে। এরপর আমরা র্যারব সদর দপ্তর, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তিনবার আবেদনের পরও কোনো তদন্ত হয়নি, আমরা এখনো উত্তর পাইনি।’
তবে প্রধানমন্ত্রীর তথ্য বিষয়ক উপদেষ্টা ও দ্যা অবজারভার এর সম্পাদক ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন গুম হচ্ছে এটি অস্বীকার করার উপায় নেই, তবে সরকার এসব ঘটনায় মোটেও নিষ্ক্রিয় নয়।
তিনি বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জের ঘটনা কি উদঘাটিত হয়নি? যারা জড়িত ছিল তাদের আটক করা হয়েছে। ইলিয়াস আলী গুম হয়েছে। কিন্তু সরকার নিষ্ক্রিয় সেটা বলা যাবে না।’
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী শাজাহান ওমর বলেন, গুম-খুনের সঙ্গে সরকারের বিভিন্ন বাহিনীর সম্পৃক্ততার কারণেই সরকার কোনো পদক্ষেপ নিতে পারছে না।
তিনি বলেন, ‘যেখানে সরকার এসব বাহিনীকে রাজনৈতিক কাজে ব্যবহার করে সেখানে বাহিনীগুলো সরকারের ওপর নিয়ন্ত্রণ পায়। সরকার যেহেতু তাদের ব্যবহার করছে তাই এখন মুখে কুলুপ দিয়ে বসে আছে।’
মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় র্যা বের ভূমিকা এবং এ বাহিনী বন্ধের যে দাবি উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে তার যৌক্তিকতা কতটুকু সে বিষয়টিই আলোচনায় উঠে আসে সংলাপের এ পর্বে।
এ সময় একজন দর্শক তার সন্তানকে তার সামনেই নির্যাতনের ঘটনার বর্ণনা দেন। তিনি বলেন, ‘আমার ছেলে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে সাংগঠনিক সম্পাদক ও যুবলীগের নেতা ছিল। তাকে র্যািব আমার সামনে, আমার বউয়ের সামনে ধরে আমাকে চারদিকে আক্রমণ করে ওরা নিয়ে যায়।’
তবে আলোচনায় অংশ নিয়ে অনেকেই আবার র্যা।বকে বিলুপ্ত না করে সংস্কার বা নাম পরিবর্তনের প্রস্তাব করেন।
আরেকজন দর্শক জানতে চান বাংলাদেশের নাজুক মানবাধিকার পরিস্থিতির জন্য কি জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের কোন রকম দায়ভার রয়েছে?
জবাবে গবেষণা প্রতিষ্ঠান উবিনীগের নির্বাহী পরিচালক ফরিদা আকতার বলেন, মানবাধিকার কমিশন ঠিক মতো কাজ করতে পারলে দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির অনেক উন্নতি হতো।
তিনি বলেন, ‘মানবাধিকার কমিশন হওয়ার পর যতটা আশাবাদী হয়েছি ততটা হতাশ হয়েছি। কমিশনকে ওভাবে সক্রিয় হতে দেখিনি।’
অপর প্যানেল আলোচক মানবাধিকার কমিশনের অনারারী মেম্বার ও জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ফওজিয়া করিম ফিরোজ বলেন, কমিশনকে আরো কার্যকর করতে হলে এর মর্যাদা, ক্ষমতার পাশাপাশি মানবাধিকার সংস্কৃতিরও উন্নয়ন ঘটাতে হবে।
তিনি বলেন, ‘সাধারণ মানুষ যদি কমিশনকে কমিশন হিসেবে না দেখেন, ওটুকু মর্যাদা না দেন, আস্থা না দেখান তাহলে কমিশন কোন ভরসায় কাজ করবে?’
অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে সঞ্চালক দর্শকদের কাছে জানতে চান মানবাধিকার রক্ষায় মানবাধিকার কমিশন কি তার দায়িত্ব পালন করতে পারছে? জবাবে শতাধিক দর্শকের মধ্যে কয়েকজন ছাড়া বাকিরা সবাই মত দেন যে, কমিশন দায়িত্ব পালন করতে পারছে না।