Home জাতীয় গুলশান কার্যালয়ে অবরুদ্ধ খালেদা

গুলশান কার্যালয়ে অবরুদ্ধ খালেদা

467
0

Khaleda
স্টাফ রিপোর্টার: ৫ই জানুয়ারির সমাবেশকে ঘিরে অনঢ় অবস্থানের মধ্যেই গতরাতে বিএনপি চেয়ারপারসন ও ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতা খালেদা জিয়াকে তার রাজনৈতিক কার্যালয়ে অবরুদ্ধ করে রাখে পুলিশ। তার গুলশানের বাসার সামনেও পাথরের ট্রাক দিয়ে রাস্তা আটকে রাখার পাশাপাশি সেখানে মোতায়েন করা হয় পোষাকধারী ও সাদা পোষাকে আইন-শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্য। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তিনি অবরুদ্ধ অবস্থায় গুলশান কার্যালয়ে অবস্থান করছিলেন। ওদিকে রাত ১২টার সময় নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে অসুস্থ অবস্থায় ডিবি পুলিশ গ্রেপ্তার করে দলের দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদকে। পরে তাকে আটক অবস্থায় রাজধানীর এ্যাপোলো হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর আগে রাত সাড়ে ৮টার দিকে গুলশানের বাসভবন থেকে নিজের রাজনৈতিক কার্যালয়ে যান বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। রাত ১০টার দিকে তিনি সংবাদ পান দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অবস্থানরত যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। রাতে হঠাৎ পেটে ব্যাথা অনুভব করেন রিজভী আহমেদ। এর পর বমি করতে থাকলে খালেদা জিয়া কার্যালয়ে থেকেই তার খোঁজ খবর নেয়ার পর তার নির্দেশে নয়াপল্টন কার্যালয়ে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেয়া হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের গ্যাস্ট্রোলজি বিভাগের চিকিৎসক প্রফেসর ডা. এ এস এম রায়হান নয়াপল্টন গিয়ে রিজভী আহমেদকে চিকিৎসা দেন। পরে বেরিয়ে যাওয়ার সময় সাংবাদিকদের অধ্যাপক রায়হান বলেন, আপাাতত চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে নয়াপল্টনে রিজভীকে দেখতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন খালেদা জিয়া। এর কিছুক্ষনের মধ্যেই তার কার্যালয়ের সামনে পুলিশ ভ্যান দিয়ে দুইপাশে রাস্তা আটকে দেয় পুলিশ। এ সময় নয়াপল্টন যাবার জন্য রাত পৌনে ১২টায় গুলশানে রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে বের হয়ে গাড়িতে ওঠেন তিনি। তবে গাড়ি স্টার্ট নিলেও তাকে কার্যালয় থেকে বের হতে গেলে বাধা দেয়া হয়। গাড়িতে আধঘণ্টা অপেক্ষার পর এক পর্যায়ে গাড়ি থেকে নেমে তিনি কার্যালয়ে ঢুকে পড়েন। ওদিকে নয়াপল্টন বিএনপি কার্যালয় থেকে রিজভীকে চিকিৎসা দিয়ে ডা. রায়হান বের হওয়ার পর মুহুর্তে রাত ১২টার সময় ডিবি পুলিশের একটি টিম বিএনপি কার্যালয়ে ঢুকেন। তারা চিকিৎসার কথা বলে রিজভী আহমেদ বিছানা থেকে হাতে স্যালাইন লাগানো অবস্থায় তুলে নিয়ে যান। এ সময় রিজভী জিজ্ঞেসা করলে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য স্কয়ার হাসপাতালে নেয়ার কথা বলা হয়। এসময় গণমাধ্যমকর্মীদের কার্যালয়ে ঢুকতে দেয়নি পুলিশ। পরে পুলিশ তাকে এ্যাপোলো হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করায়। এদিকে রাত সাড়ে ১২টার সময় পুলিশের একটি দল নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঢুলে সেখানে অবস্থানরত কর্মচারীদের বের করে গেটে তালা লাগিয়ে দেয়।

রাত দেড়টার দিকে বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস সাংবাদিকদের বলেন, খালেদা জিয়ার অন্যান্য দিনের মতো কার্যালয়ে এসেছিলেন। রিজভী আহমেদ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন জানার পর তিনি নয়াপল্টনে যাবার জন্য বের হয়ে গাড়িতে উঠেছিলেন। কিন্তু পুলিশ তার কার্যালয়ের সামনে দুইপাশে গাড়ি দাঁড় করিয়ে আটকে দেয়। তিনি আধঘন্টা গাড়িতে অবস্থানের পর কার্যালয়ে ফিরে যান। শিমুল বিশ্বাস বলেন, খালেদা জিয়া বিএনপি ও জোটের নেতাকর্মী-সমর্থকসহ দেশবাসীর প্রতি চলমান গণতান্ত্রিক আন্দোলন অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ৫ই জানুয়ারি ঘোষিত জনসভা কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। খালেদা জিয়াকে গৃহবন্দি করা হতে পারে এমন আশঙ্কা করছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, সরকার পাগলা হয়ে গেছে। যে কোন কিছুই হতে পারে। এদিকে দলীয় সূত্র জানায়, অবরুদ্ধ হবার পর তিনি কার্যালয়ে অবস্থানের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সেখানে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা, সাবেক কয়েকজন মহিলা এমপি রেহেনা আক্তার রানু, সৈয়দা আশিফা আশরাফি পাপিয়া, নিলুফার ইয়াসমিন মনি, রাশেদা বেগম হিরা, সুলতানা আহমেদ, মহিলা দল নেত্রী ফারজানা রহমান হুসনা ও বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার টিএস আইয়ুবসহ কয়েকজন নেতাকর্মীও অবস্থান করছেন। এর আগে সন্ধ্যা ছয়টা থেকে রাত সাড়ে এগারোটা পর্যন্ত পুলিশের চৌদ্দটি টহল গাড়ি গুলশান কার্যালয় এলাকায় অবস্থান করে। একইসঙ্গে খালেদা জিয়ার গুলশানের বাসভবনের সামনেও পুলিশের দুটি পিকআপ ভ্যান রাখা হয়।
মাঠ দখলে মরিয়া দু’পক্ষ: ৫ই জানুয়ারি। কেউ বলেন গণতন্ত্রের কালো দিবস। কেউ বলেন গণতন্ত্র রক্ষা দিবস। দেশের নির্বাচনের ইতিহাসে দিনটি নানা আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। আলোচনা আছে সারা দুনিয়ায়। নয়া এক মডেলের গণতন্ত্রের যাত্রা শুরু হয়েছিল এ নির্বাচনের মাধ্যমে। দেশে-বিদেশে বিতর্কিত এই নির্বাচন ঘিরে ব্যাপক সহিংসতা ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছিল দেশজুড়ে। এই নির্বাচনের এক বছরপূর্তির দিনে ফের মুখোমুখি দুই রাজনৈতিক শিবির। এদিন মাঠ দখলে রাখতে মরিয়া দুই পক্ষই। তাদের পাল্টাপাল্টি হুঁশিয়ারি ও বক্তব্যে উত্তপ্ত রাজনীতির মাঠ। উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ছড়িয়ে পড়েছে দেশজুড়ে। এদিন ঢাকার রাজপথে বিরোধী জোটকে নামতে দেয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট ঘোষণা দিয়েছে যে কোন মূল্যে ঢাকায় সমাবেশ করার। এদিন রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, নয়াপল্টন অথবা শাপলা চত্বরে সমাবেশ করার অনুমতি চেয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের কাছে বিএনপি আবেদন করলেও গতকাল পর্যন্ত পুলিশের পক্ষ থেকে অনুমতি মিলেনি। বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল গত দুদিন ডিএমপি কার্যালয়ে গেলেও তারা পুলিশ কমিশনারের সাক্ষাৎ পাননি।

গতকাল স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বিএনপি’র সমাবেশ অনুমতির বিষয়ে জানিয়েছেন, বিষয়টি পুলিশের ওপর নির্ভর করছে। এদিকে পাঁচই জানুয়ারি ঘিরে সারা দেশে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ধরপাকড় শুরু করেছে। বিরোধী জোটের পক্ষ থেকে গতকাল অভিযোগ করা হয়েছে সারা দেশ থেকে ঢাকায় নেতাকর্মীদের আসতে বাধা দেয়া হচ্ছে। গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। এদিকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গুলশানের কার্যালয় ও বাসা ঘিরে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
এদিন বিরোধী জোটের কর্মসূচি ঠেকানোর ঘোষণা দিয়েছে ক্ষমতাসীন জোট। গতকাল ঢাকা মহানগর ১৪ দলের পক্ষ থেকে এ ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এছাড়া রাজধানীর ১৬টি স্পটে সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে আওয়ামী লীগ। ছাত্রলীগের পক্ষ থেকেও আলাদা অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।

Previous articleঢাকামুখী বাস চলাচল বন্ধ
Next articleরাজধানীতে সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ