ঢাকা: বেসরকারি গবেষণা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ সংস্থা (সিপিডি) জানিয়েছে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে রাজস্ব আয়ের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, তা অর্জন করা সম্ভব হবে না। কাঙ্খিত রাজস্ব আয় করতে বাকি সময়ে রাজস্ব আয় ৪০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি প্রয়োজন হবে। এ পরিস্থিতিতে বছর শেষে ২৫ হাজার কোটি টাকার মতো মোট রাজস্ব ঘাটতি থাকবে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মাধ্যমে নির্ধারণ করা রাজস্ব আয়েও বড় ধরনের ঘাটতি থাকবে।
শনিবার সকালে সিরডাপ মিলনায়তনে অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে দেশের অর্থনীতি পর্যালোচনা নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন প্রতিষ্ঠানটির সম্মানিত ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- সিপিডির নির্বাহী পরিচালক মুস্তাফিজুর রহমান, ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য্য, অতিরিক্ত গবেষক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম ও নির্বাহী গবেষক তৌফিকুল ইসলাম খান।
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বর্তমানে দেশের অর্থনীতিতে ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন স্বাভাবিক হলেও ব্যক্তিখাতে বিনিয়োগ ও শিল্পখাতে কর্মসংস্থান না বাড়লে চলতি অর্থবছর সরকার নির্ধারিত ৭ দশমিক ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন চ্যালেঞ্জ হবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন নতুন স্বাভাবিকে পরিণত হয়েছে, বাংলারেট অব গ্রোথ থেকে সুপার বাংলারেট অব গ্রোথে যাওয়াটাই এখন বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল চ্যালেঞ্জ। অর্থাৎ ৬ থেকে ৮-৯ শতাংশে নিয়ে যাওয়া।
ড. দেবপ্রিয় বলেন, বিনিয়োগ, সংস্কার ও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে প্রধান বাধা উল্লেখ করে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য্য বলেন, সরকারের প্রথম দিকে যে ধরনের সংস্কার দেখা গিয়েছিল, তা ২০১২-১৩ অর্থবছর থেকে দেখা যাচ্ছে না। গত কয়েক মাসে ব্যাংকিং খাত বিপর্যস্ত অবস্থায় চলে গেছে।
একদিকে, বিনিয়োগ হচ্ছে না; অন্যদিকে, দেশ থেকে টাকা বাইরে পাচার হয়ে যাচ্ছে। বিদেশ থেকে আমাদের যে পরিমাণ আয় হচ্ছে, তার থেকে বেশি পরিমাণ অর্থ পাচার হচ্ছে।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক মুস্তাফিজুল রহমান জানায়, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর বিনিয়োগের যে গতি আশা করা হয়েছিল, তা দেখা যাচ্ছে না। গ্যাস, বিদ্যুৎ, অবকাঠামো, জমি ও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে বিনিয়োগ হচ্ছে না। বিনিয়োগের যে ধারা, তা দিয়ে প্রবৃদ্ধির কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হবে না। জিডিপির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে প্রয়োজন বিনিয়োগে ত্বরণ।
তিনি বলেন, ২০১১ সালে জিডিপির যে (গ্রোথ) প্রবৃদ্ধি আমরা অর্জন করতে পেরেছিলাম, ২০১১ সালের পরে তার থেকে অনেক দূরে সরে যাচ্ছি। জিডিপির প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে যে ধরনের বিনিয়োগের ত্বরণ দরকার, তা অর্জন সম্ভব হচ্ছে না। যে পরিমাণ বিনিয়োগ বাড়ানো প্রয়োজন, তার থেকে আমরা অনেক দূরে আছি।
বিনিয়োগ বৃদ্ধির মাধ্যমে প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা সম্ভব হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকারি খাতে বিনিয়োগ বাড়লেও বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বাড়ছে না। বর্তমানে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ আছে, জিডিপির ১৯ শতাংশের মতো। প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে এ বিনিয়োগ বাড়িয়ে ২৫ শতাংশে নিতে হবে। আর বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য বিনিয়োগকারীরা নিশ্চয়তা চান। তবে নির্বাচনের পর বিনিয়োগকারীদের দুঃশ্চিন্তা কিছুটা কমেছে। কিন্তু, অনিশ্চয়তা এখনো কাটেনি।
তিনি বলেন, মূলধনী যন্ত্র কেনার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত মূল্য দেখিয়ে বিদেশে টাকা নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলে আমরা মনে করছি। আবার বিদেশি ঋণ নেওয়ার মাধ্যমে পাচার করা অর্থই আনা হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। এ বিষয়টি সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের উচিত খতিয়ে দেখা।