ঢাকা: নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে জাতিসংঘ এবং দাতা দেশ ও সংস্থাগুলোর দূরত্ব বাড়ছে। সর্বশেষ ২৮ নভেম্বর জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) প্রতিনিধিরা নির্বাচন কমিশনকে তাদের স্টেকহোল্ডার বা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য আলাপ-আলোচনার পরামর্শ দিলে কমিশন এ প্রস্তাবে নারাজি জানায়।
এর আগে জাতিসংঘ ৫ জানুয়ারির এবং পরে উপজেলা নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার বিষয়ে চলমান প্রকল্পের লক্ষ্য (এসএএমবি প্রকল্প) পরিবর্তনের ও এতে সহযোগিতা কমিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানায়।
সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনও বাংলাদেশে ইউএনডিপির ইলেকটোরাল রিফর্ম প্রোগ্রামে একজন চিফ টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজার নিয়োগে অসম্মতি জানায়। সম্প্রতি জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক নেল ওয়াকার প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীনের সঙ্গে দেখা করতে চাইলে তিনি রাজি হননি।
এর আগে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের একটি পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন নির্বাচন কমিশন আমলে নেয়নি। কমিশন সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, গত ১৮ বছরে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে দাতা রাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে এ ধরনের নেতিবাচক প্রতিবেদন ইসিতে আসেনি।
৫ জানুয়ারির নির্বাচন যুক্তরাষ্ট্রসহ ঢাকার বিদেশি দূতাবাসগুলো পর্যবেক্ষণ করেনি। তবে উপজেলা নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে রাষ্ট্রদূত ড্যান ডব্লিউ মজিনাসহ মোট ৫৪ জন পর্যবেক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা এনডিআইও এ নির্বাচন দেখার জন্য ছয়জন পর্যবেক্ষক নিয়োগ করে। জাপানও নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া আর কেউ পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন জমা দেয়নি।
স্থানীয় পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোর সংগঠন ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপের (ইডব্লিউজি) পরিচালক আবদুল আলীম জানান, তারা আগামী ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বছর পূর্তির দিনে ওই নির্বাচন সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন জমা দেবেন।
ইসি সচিবালয় সূত্র জানায়, ইউএনডিপির সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের দূরত্ব তৈরি হয় দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কয়েক মাস আগেই। ওই সময়ই ইউএনডিপি সহায়তা কমিয়ে দেয়।
গত অক্টোবরের শুরুতে ইউএনডিপির ইলেকটোরাল রিফর্ম প্রোগ্রামে একজন চিফ টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজার নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি নিয়ে দূরত্ব আরো বাড়ে। ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত একপক্ষীয় দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশের অর্ধেক আসনে ভোট হয়নি।
এছাড়া নির্বাচনের পর উপজেলা নির্বাচনও বিতর্কিত হয়েছে। ইউএনডিপির ওই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে আরো জানানো হয়, চিফ টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজার মূলত প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সিনিয়র পলিসি অ্যাডভাইজার হিসেবে কাজ করবেন এবং কৌশলগত কর্মপন্থা সম্পর্কে কমিশনের পক্ষে ইউএনআরসি, ইউএনডিপি ও উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখবেন। কিন্তু নির্বাচন কমিশন ও সরকারের নীতিনির্ধারণী মহল ওই বিরূপ মন্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়।
এর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ১২ অক্টোবর নির্বাচন কমিশন সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘এসইএমবি প্রজেক্টে ইউএনডিপি একজন চিফ টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজার নিয়োগ করতে চাচ্ছে বলে আমাদের জানানো হয়েছিল। কিন্তু ওই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে দশম জাতীয় সংসদ এবং উপজেলা নির্বাচন নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য অযাচিত।’
প্রকল্পে অর্থ সহায়তা কমিয়ে দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটি ইউএনডিপি ও দাতা সংস্থাগুলোর সিদ্ধান্তের বিষয়। এতে আমাদের কিছু বলার নেই।’
ইউএনডিপির ওই বিরূপ মন্তব্য গণমাধ্যমে প্রকাশের পরদিন রাত পৌনে ১১টায় ঢাকায় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশে ইউএনডিপির পরিচালক পলিন তামেসিস উল্লেখ করেন, ‘আমি স্পষ্ট জানাতে চাই, ওই বিজ্ঞপ্তিতে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও উপজেলা নির্বাচন নিয়ে যে অবস্থান প্রকাশ করা হয়েছে তা ইউএনডিপির নয়। এটি ভুলে হয়ে গেছে। এর জন্য ইউএনডিপি দুঃখও প্রকাশ করে।’
অ্যাডভাইজার নিয়োগের বিষয়টি এখন কোন পর্যায়ে আছে-এ প্রশ্নে কমিশন সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা না বলে দিয়েছি।’ তবে কি ইউএনডিপির ওই প্রকল্প বন্ধ হয়ে যাবে-এ প্রশ্নের জবাবে সিরাজুল ইসলাম বলেন, প্রকল্পের মেয়াদ এখনো শেষ হয়নি।
২৮ নভেম্বরের বৈঠকে ইউএনডিপির প্রতিনিধিরা কী প্রস্তাব দিয়েছিলেন-এ প্রশ্নে তিনি বলেন, তারা সে ধরনের কোনো প্রস্তাব দেননি। প্রসঙ্গক্রমে কিছু বিষয়ে কথা হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের বিষয়ে আলাপ হয়েছে কি না-এ প্রশ্নে সচিব বলেন, তাদের বলা হয়েছে এটা নির্বাচন কমিশনের কাজ নয়।