
গাজীপুর: সাদামাটা চাল-চলন ছিল নির্মাণ শ্রমিক আবুল হোসেনের (২৮)। সাদাসিধে হওয়ার কারণে তাকে অধিকাংশ সময় ‘আহম্মকের ধাড়ি’ বলেই সম্বোধন করতেন তার স্ত্রী হামিদা। যে স্বামীর সঙ্গে প্রায় এক বছর ঘর-সংসার করেছেন সেই স্বামীকেই দাওয়াত দিয়ে বাপের বাড়ি এনে বিষ মেশানো খাবার খাইয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে তারই স্ত্রী ও শ্বশুর-শাশুড়ির বিরুদ্ধে।
এমনই এক হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার দরদরিয়া গুচ্ছগ্রামে। যেখানে গত শনিবার শ্বশুর তার মেয়ের জামাই আবুল হোসেনকে দাওয়াত দিয়ে শ্বশুর বাড়িতে নেয়ার পর রোববার সকালে তাদের বাড়িতেই জামাইর লাশ পাওয়া যায়। নিহত আবুল হোসেন কাপাসিয়া উপজেলার রায়েদ মধ্যপাড়া গ্রামের আবদুর রহমানের ছেলে। তিনি পেশায় নির্মাণ শ্রমিক ছিলেন।
নিহতের স্বজনদের অভিযোগ, রাতে বিষ মেশানো খাবার খাইয়ে আবুল হোসেনকে হত্যা করা হয়েছে। নিহতের পারিবারিক সূত্র জানায়, কাপাসিয়া উপজেলার রায়েদ মধ্যপাড়া গ্রামের আবদুর রহমানের ছেলে নির্মাণ শ্রমিক আবুল হোসেনের সঙ্গে প্রায় এক বছর আগে পাশের দরদরিয়া গুচ্ছগ্রামের আবুল হাসেমের মেয়ে হামিদা বেগমের পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। বিয়ের পর সাদাসিধে আবুল হোসেনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারেনি হামিদা। ফলে যখন-তখন তিনি বাবার বাড়ি চলে যেতেন।
তারা আরও জানায়, হামিদা বেগম বাবার বাড়ি গিয়ে স্বামীর বিরুদ্ধে মিথ্যা নির্যাতনের অভিযোগ করতেন। অভিযোগ বিশ্বাস করে গত আট দিন আগে আবুল হাসেম তার কন্যার স্বামীর বাড়ি গিয়ে আবুল হোসেনকে গালাগাল করেন। এক পর্যায়ে তিনি আবুল হোসেনকে ‘তোমার মরার সময় অইয়া গেছে’ বলেও হুমকি দেন।
আবুল হোসেনের বড় ভাই মুদি দোকানদার ওমর ফারুক জানান, গত শুক্রবার কাউকে কিছু না জানিয়ে বাবার বাড়ি যান হামিদা। পরদিন তার ছোট ভাইকে দাওয়াত করেন হামিদার বাবা আবুল হাসেম।
তিনি অভিযোগ করেন, শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার পর রাতে আবুল হোসেনকে বিষ মেশানো খাবার খেতে দেওয়া হয়। খাবার খাওয়া অবস্থায় বিষক্রিয়ায় ঢলে পড়েন আবুল। টের পেয়ে প্রতিবেশীরা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে কাপাসিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও পরে অবস্থার অবনতি হলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়ার পথে আবুল হোসেন মারা যান। পরে রাতেই প্রতিবেশীদের কাছ থেকে মরদেহ নিয়ে যায় আবুলের স্ত্রী ও শ্বশুর-শাশুড়ি।
ওমর ফারুক আরও অভিযোগ করেন, সকালে মরদেহ আটকে রেখে তাদের কাছে মিমাংসার প্রস্তাব পাঠায় শ্বশুর আবুল হাসেম। পরে খবর পেয়ে পুলিশ আবুলের মরদেহ উদ্ধার করে গাজীপুর সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।
নিহত আবুল হোসেনের চাচাত ভাই আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, ‘হামিদা বেগমের পরকীয়ার কোন ঘটনা থাকতে পারে। যার ফলে তিনি স্বামীর প্রতি ক্ষিপ্ত ছিলেন। মৃত্যুর পর লাশ আটক করে শ্বশুর বাড়ির লোজজন আপোষ-মিমাংসা প্রস্তাব দেয়, এতেই বুঝা যায় ঘটনা রহস্য জনক।’ তবে হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ অস্বীকার করে আবুল হাসেম বলেন, ‘আবুল হোসেনের মৃত্যুর কারণ আমি জানি না। কেউ তাকে খাবারে বিষ মিশিয়ে হত্যা করেনি।’
রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে কাউকে গ্রেপ্তার করেনি পুলিশ। এ ব্যাপারে কাপাসিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আহসান উল্লাহ বলেন, ‘ঘটনাটি তদন্ত করা হচ্ছে। তাছাড়া ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়া গেলেই রহস্য উন্মোচিত হয়ে যাবে।’