ঢাকা: বাংলাদেশে তামাকজনিত ক্ষতির পরিমাণ জিপিডি’র ১-২ শতাংশ। রাষ্ট্রীয় কোষাগারের এ ক্ষতি না হলে জিডিপি’র আকার ১ শতাংশ বেড়ে ৭.৫ শতাংশ হতো। তামাক নিয়ন্ত্রণ করলে জিডিপির এই ক্ষতির পরিমাণ কমে আসবে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান’র (বিআইডিএস) ফেলো ড. এম আসাদুজ্জামান। বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এন্টি ট্যোবাকো মিডিয়া এলায়েন্স (আত্মা) আয়োজিত ‘ভুক্তভোগী কৃষকের কন্ঠস্বর, তামাক চাষ লাভজনক নয়, ক্ষতিকর লাভের প্রলোভন’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে তিনি অভিমত দেন।
আসাদুজ্জামান বলেন, তামাক বিষের পেছনে সরকার প্রতিবছর জিডিপি’র ১-২ শতাংশ ব্যয় করে। দেশে টোব্যাকোর বিষ না থাকলে জিডিপি ৬.৫ থেকে ৭.৫ শতাংশ হয়ে যেত।
১ শতাংশ বাড়লে যে হারে দারিদ্র কমছে তার চেয়ে দ্রুত গতিতে দারিদ্র কমতো। অর্থনীতির মধ্যে ১ শতাংশ বাড়তি মানে বিরাট পাওয়া বলে মনে করেন তিনি।
তামাক উৎপাদন, বিপণন, প্রক্রিয়া ও ব্যবহারে অর্থনীতিতে প্রত্যক্ষ অভিঘাত রয়েছে। সমন্বিত এ অভিঘাত অর্থনীতির বিশাল ক্ষতি করে থাকে।
এ অভিঘাত থেকে বাঁচতে সচেতন হতে হবে। তবে উন্নত রাষ্ট্র এ বিষয়ে এগিয়ে এলেও বাংলাদেশ আসছে না। তামাক চাষের ফলে অতিরিক্ত খাদ্য আমদানি করতে হয় বলে মনে করেন তিনি।
সাম্প্রতিক একটি প্রতিবেদন উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী তামাকজনিত ক্ষতি প্রায় ১.২ ট্রিলিয়ন ডলার। তবে তামাকে বিশ্ব জিপিডি’র ১-২ শতাংশ ক্ষতি করে।
ফিলিপ মরিস, ব্রিটিশ টোব্যাকোসহ বহুজাতিক টোব্যাকো কোম্পানি নিজের দেশে কিছু করতে পারছে না বলে তাদের চোখ বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল রাষ্ট্রগুলোর দিকে বলে মনে করেন তিনি।
এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ তামাকজনিত মৃত্যুর সবচেয়ে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে তামাকজনিত রোগে ৩০ বছরের ওপরের মৃত্যু ৩১ শতাংশ।
তামাকের অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ অংক কষে দেখতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
তামাক কোম্পানি নব্য নীলকরের চেয়েও ভয়ঙ্কর উল্লেখ করে আসাদুজ্জামান বলেন, কোম্পানিগুলো প্রলোভন দেখিয়ে কৃষকদের তামাক চাষে বাধ্য করে।
এ থেকে ভূমির উর্বরতা নষ্ট, স্বাস্থ্য হানি, বন ধ্বংস হচ্ছে। এসবের ফলে বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
অর্থমন্ত্রীর সমালোচনা করে আসাদুজ্জামান বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণের কথা বললে অর্থমন্ত্রী তো বলবেন এ খাত থেকে সবচেয়ে বেশি ট্যাক্স পাই। আপনাকে তামাকজনিত কারণে রাষ্ট্রীয় ক্ষতির হিসেব কষতে হবে।
বিধিমালা প্রণয়ন, উৎপাদনে নিরুৎসাহিত করতে ট্যাক্স বৃদ্ধি, তামাকজনিত রোগে মৃত্যুর ক্ষেত্রে বীমা দাবি, তামাকের পরিবর্তে অন্য ফসল উৎপাদনে কৃষকদের বাধ্য করতে সরকারকে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান।