
আবুল হোসাইন, দিরাই থেকে: সুনামগঞ্জের দিরাই শাল্লায় কৃষিতে ব্যাপক পরিবর্তনের হাওয়া বইলেও আধুনিক সুবিধা বঞ্চিত রয়েছেন বগাচাষীরা। বর্গা আইন যুগোপযোগী না হওয়ায় জমির মালিক উৎপাদিত ফসলে অর্ধেক ভাগ বসালেও আবাদ প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে ধান কাটামাড়াই পর্যন্ত সবকিছুর ব্যয়ভার বর্গাদারকেই বহন করতে হচ্ছে। আইন অনুযায়ী বর্গাকৃষক ও জমির মালিকের মধ্যে পাচঁ বছর মেয়াদী লিখিত চুক্তির নিয়ম থাকলেও বাস্তবে এক বছর মেয়াদী মৌখিক চুক্তিই প্রচলিত রয়েছে। লিখিত চুক্তিনামা না থাকায় ব্যাংক থেকে কৃষি ঋণ প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হয়ে গ্রাম্য মহাজনের চড়া সুদের ঋণজালে আটকে আছেন ১০-১২ হাজার বর্গা কৃষক। জমির মালিক ও বর্গা কৃষকের মধ্যে সুষমব জন্য বর্গা আইন যুগোপযোগী করার দাবি জানিয়েছেন জনপ্রতিনিধিগন। চাপতির হাওর পারের বাসিন্দা আলাউদ্দিন (৫৫), শীষ মিয়া(৫০),শামসুদ্দিন(৪৫), মইনুদ্দিন(৪২),ও নাছির উদ্দিন(৪০)। এদের কারো এক ছটাক জমি নেই। অন্যের জমি বর্গা চাষ করতে গিয়ে আটকে পড়েছেন চড়া সুদের ঋণজালে। ব্যাংকের কৃষি ঋণ তাদের ভাগ্যে জুটে না। দিরাই উপজেলার জগদল ইউনিয়নের মাতারগাঁও গ্রামের একই পরিবারের এ পাচঁ বর্গা কৃষকের জীবন-জীবিকার চালচিত্র তুলে ধরে একই গ্রামের আরেক বর্গা কৃষক ইছরাখ মিয়া জানালেন, জমি চাষ করে বর্গাদারের হিস্যা আর গ্রাম্য মহাজনের চড়া সুদের পাওনা মিটিয়ে ২-৩ মাস পরিবার-পরিজন নিয়ে কোনোভাবে চলা যায়।
উপজেলা পরিসংখ্যান অফিস সূত্রে জানাযায়, দিরাই-শাল্লা উপজেলায় ছোটবড় ২৮ হাওরপারে গ্রাম রয়েছে ৩শতাধিক। এসব গ্রামে গ্রামে বসবাস করছেন,অর্ধলক্ষাধিক কৃষক পরিবার । এর মধ্যে বর্গা কৃষক পরিবারের সংখ্যা ২০শশ্রাধিক। উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানাগেছে, জমি চাষাবাদ থেকে শুরু করে বীজ সার ,সেচ,কীটনাশক ও শ্রমিকসহ সবকিছুর ব্যবস্থা করতে হয় বর্গা কৃষককেই। অথচ উৎপাদিত ফসলের অর্ধেক দিয়ে দিতে হয় জমির মালিক কে । যে কারণে জমির মালিকসহ উৎপাদন খরচ বাদ দিয়ে বর্গাদারের ভাগে তেমন কিছুই থাকেনা। এতে অনেকেই কৃষি বিমূখ হয়ে পড়েছেন।
কৃষকরা বলেছেন, ‘আগে যেখানে তারা হালের বলদ আর লাঙ্গল দিয়ে জমি চাষ করতেন , এখন সেখানে ব্যবহার করতে হচ্ছে ট্রাকটর । সেচের জন্য বৃষ্টির পানি বদলে সেচ যন্ত্র আর ধান মাড়াইয়ের জন্য মাড়াই কল । এসব যন্ত্রপাতি ব্যবহারে যে খরচ হয় তার সবটাই কড়া সুদে আনতে হচ্ছে গ্রাম্য মহাজনের কাছ থেকে । বরাম হাওর পারের ভাঙ্গাডহর গ্রামের কৃষক প্রফুল্ল, কৃতিষ ও জ্যোতির্ময় দাস জানান, একযুগ আগেও বর্গা চাষের ক্ষেত্রে আধাভাগি ও তে ভাগি নিয়ম ছিল। আধাভাগির ক্ষেত্রে জমির মালিক জমি চাষ করে দিতেন এবং তে ভাগির বেলায় বর্গাদার নিজেই সব খরচ বহন করতেন। সেই সময় স্থানীয় জাতের ধান চাষ হত সার ও কটিনাশকের কোনো প্রয়োজন ছিল না। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে চাষাবাদ পদ্ধতি বদলালেও বর্গা আইনের কোনো পরিবর্তন হয়নি। এতে বর্গা কৃষকরা সুষম বন্টন থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।