ঢাকা: হাজারো মানুষের ফুলেল শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে চির নিদ্রায় শায়িত হলেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের বরেণ্য শিক্ষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক পিয়াস করিম। শুক্রবার বাদ জুমা জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে মরহুমের জানাজা নামাজ শেষে বনানী কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। তার নামাজে জানাজায় সর্বস্তরের মানুষের ঢল নেমেছিল। রাজনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবী, শিক্ষক, চিকিৎসক, সাংবাদিকসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ নামাজে জানাজায় শরিক হন। বায়তুল মোকাররমের ভেতরে এবং বাইরের বারান্দা, উত্তর ও দক্ষিণ প্লাজায় ব্যাপক লোকসমাগম চোখে পড়ে। পিয়াস করিমের জানাজাকে ঘিরে মসজিদের চারপাশে কড়া নিরাপত্তায় নিয়োজিত ছিল বিপুল সংখ্যক পুলিশ।
এরআগে সকাল ৯টা ৪০ থেকে ১১টা ২০ পর্যন্ত পিয়াস করিমের কফিন ধানমন্ডির ৭ নম্বর রোডের ৩২ নং বাসায় রাখা হয়। সেখানে তার পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়-স্বজন ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক সংগঠন, বিশিষ্ট ব্যক্তি, কলামিষ্ট, কবি, সাহিত্যিক, শিক্ষাবিদসহ সর্বস্তরের জনগণ তার কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। পরে পরিবারের সিদ্ধান্তে ধানমন্ডিস্থ বাসার পাশে ‘বায়তুল আমান’ মসজিদের সামনে পিয়াস করিমের প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
ধানমন্ডির বাসভবনে পিয়াস করিমের স্ত্রী অধ্যাপক ড. আমেনা মহসিন, বোন তাহমিনা করিম, তৌফিকা করিম, তৌহিদা করিম ছাড়াও আত্মীয় স্বজন এবং শুভাকাঙ্খীরা তার লাশ শেষবারের মতো দেখেন। এসময় কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তারা। অনেকে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।
ধানমন্ডিতে পিয়াস করিমের বাসায় এসময় দেশের বিশিষ্ট নাগরিকরা উপস্থিত ছিলেন। তারা পিয়াস করিমের লাশ শহীদ মিনারে নিতে বাধা দেয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমিরেটাস অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, মুক্তিযুদ্ধ এবং গণতন্ত্রের পক্ষে কথা বলতেন পিয়াস করিম। তার বলার ভঙ্গি ছিল খুবই সাবলীল। তিনি সমাজ ও রাজনীতি নিয়ে নিজস্ব মতামত ব্যক্ত করতেন। এ জন্য অপূরণীয় ক্ষতি হলো। কিন্তু সম্প্রতি তাকে রাজনৈতিকভাবে বিতর্কিত করার চেষ্টা হয়েছে। এ ঘটনা খুবই দু:খজনক।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীন আহমদ বলেন, জাতীয় স্বার্থে এবং জনগণের পক্ষে গ্রহণযোগ্য শুভ এ কথা বলতে পিয়াস করিমের বিন্দুমাত্র দ্বিধা হত না। এটাই হয়তো তার বিপক্ষে গেছে। কারণ এটা প্রতিবাদের প্রতীক। তার লাশ শহীদ মিনারে গেলে সম্মানিত হত। তরুণ প্রজন্ম যেমনটি ভাবে তেমন ভাষায় কথা বলতেন পিয়াস করিম। আল্লাহ তায়ালা তার মতো সৎ মানুষকে সুখে রাখুক বেহেস্তবাসী করুন বলে এসময় তিনি দোয়া করেন।
ফরহাদ মজহার বলেন, শহীদ মিনার জাতীয় ঐক্যের প্রতীক। কিন্তু সরকার হীন উদ্দেশে ড. পিয়াস করিমের প্রতি সম্মান প্রদর্শণে সেখানে বাধা সৃষ্টি করেছে। সরকারের কর্মকাণ্ডে বায়তুল মোকাররম মসজিদকে এখন ধর্মবিশ্বাসী মানুষের জাতীয় ঐক্যের প্রতীক করতে বাধ্য করেছে।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, যারা অবৈধভাবে ক্ষমতায় আছেন তাদের সব কাজই মানুষ এবং মানবতা পরিপন্থী। পিয়াস করিম ভয়াল পরিস্থিতির মধ্যেও সাহসিকতার সাথে সত্য কথা বলেছেন। পিয়াস করিমের লাশ শহীদ মিনারে নিতে না দেয়া রাজনৈতিক হীনমন্যতা। তিনি মরহুমের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন।