পুলিশের বাড়াবাড়ির শেষ কোথায় !

0
1099

Police Action amar banglaশিব্বির আহমদ ওসমানী: পহেলা বৈশাখ বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় পুলিশের কঠোর নিরাপত্তার মধ্যেও মা-বোনেরা লাঞ্ছিত হয়েছেন। পুলিশ নারীদের মান-সম্মান রক্ষা করতে পারেনি। এ নিয়ে তাদের কারো কোনো লাজলজ্জা বলে কিছু নেই। টেলিভিশন ফুটেজে কয়েকজনকে গণমাধ্যম চিহিৃত করার পরেও তাদের গ্রেফতারে পুলিশের রয়েছে সীমাহীন ব্যার্থতা। নারী লাঞ্ছনাকারীদের কাউকেই ২৭ দিনেও চিহ্নিত করতে পারেনি পুলিশ। উল্টো যাঁরা নিপীড়কদের গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবি করছেন, গত রোববার পুলিশ তাঁদের ওপরই বর্বর হামলা চালিয়েছে। নারী লাঞ্ছনার বিচার চাইতে এসে উল্টো লাঞ্ছিত হয়েছেন ছাত্রীরা। পুলিশের লাথি-ঘুষি খেয়ে রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখা গেছে কয়েকজন ছাত্রীকে। ধাওয়া খেয়ে গাছের আড়ালে লুকিয়ে থাকা ছাত্রীটিকেও চুলের মুঠি ধরে টেনে বের করে রক্তাক্ত করেছে পুলিশ।
সারা দেশে নিন্দা ও ক্ষোভের ঝড় উঠেছে। গণমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ওইসব নষ্ট পুরুষের বিরুদ্ধে মানুষ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে ঘৃণার সঙ্গে। সিসিটিভি ক্যামেরায় সেই সব ফুটেজ দেখা যাচ্ছে। প্রায় এক মাস পার হতে চলছে পুলিশ অপরাধীদের গ্রেফতার করা দূরে থাক শনাক্ত করতেও পারেনি। তাই নিপীড়কদের গ্রেপ্তার ও শাস্তিসহ ছয় দফা দাবিতে রোবার দুপুরে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কার্যালয় ঘেরাও করতে গিয়েছিল ছাত্র ইউনিয়নসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিবাদী ছাত্র/ছাত্রীরা। তাঁদের ডিএমপি কার্যালয়ের সীমানায় ঘেঁষতে দেয়নি পুলিশ। বরং লাঠিপেটা করে রাস্তা থেকেই তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তাদেরকে জলকামানে গরম পানি দেয়া হয়েছে। বেপরোয়া লাঠিচার্জ করা হয়েছে। প্রশ্ন হলো- কয়েকজন যদি স্মারকলিপি নিয়ে যেতো- তাহলে ঠিক কতটা ক্ষতি হতো সরকারের বা পুলিশ কমিশনারের?
বর্ষবরণের দিনে নারী লাঞ্ছনার প্রতিবাদে অপরাধীদের গ্রেফতারের দাবিতে আসা ছাত্র/ছাত্রীদের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে ডিএমপি কমিশনারের সাক্ষাৎ করিয়ে দিলে তারা সন্তুষ্ট্র হয়ে ফিরে আসতেন এটি আমার বিশ্বাস। দু’পক্ষের ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও লাঠিচার্জের মত পরিস্থিতির সৃষ্টি হত না। পরবর্তী সময়ে দু’পক্ষই সীমা লঙ্ঘন করেছে। পুলিশ বেশি বাড়াবাড়ি করে করেছে। জলকামান ব্যবহার করেই থামেনি, বেধড়ক লাঠি চালিয়ে রক্তাক্ত করেছে। এর কয়েক মাস আগেও পুলিশ ৮ মাসের অন্ত:সত্ত্বা নারীকে আদালত ভবনে লিফট থাকা সত্ত্বেও তা ব্যবহার করতে না দিয়ে ৬ তলা পর্যন্ত সিড়ি দিয়ে উঠতে বাধ্য করেছে। শুধুমাত্র ধর্মীয় বই বাসায় রাখার অপরাধে গ্রেফতার হবার পর কারাগারে সন্তান প্রসব করেছে।
মা দিবসের এই দিনে নারী লাঞ্ছনার প্রতিবাদে আসা ছাত্রীদের একজন যখন ভয়ে রেলিংয়ের পাশে আশ্রয় নিয়েছিল তখন কয়েকজন পুলিশ তাকে তেড়ে গেছে। একজন বুট চালিয়েছে। আরেকজন চুলের মুঠি ধরে টেনে নিয়েছে। মনে হয়েছে এটি একটি পুলিশি রাষ্ট্র। তারা এখন নিজেদেরকে সকল আইনের ঊর্ধ্বে ভাবতে শুরু করেছে। ছাত্র/ছাত্রীদের অবস্থানে পুলিশের এ তাণ্ডব প্রমাণ করে তারা দোষীদের আড়াল করতে চায়। রাষ্ট্রের এমন ফ্যাসিবাদী ন্যাক্যারজনক আচরণ রুখে দিতে দেশব্যাপী প্রতিবাদ গড়ে তোলতে হবে। না হয় একদিন আপনিও এরকম নির্যাতনের শিকার হতে হবে।
বাংলাদেশের সংবিধানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক নির্যাতন, অমানবিক এবং লাঞ্ছনাকর আচরণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং সংশ্লিষ্ট আইন অনুযায়ী যেখানে পুলিশের এ জাতীয় আচরণ শাস্তিযোগ্য অপরাধ, সেখানে সরকারি কাজে বাধা প্রদানের অজুহাত দেখিয়ে আইনের রক্ষকের আইনের ভক্ষক হয়ে উঠা পুলিশ বাহিনীর গৌরবময় ঐতিহ্যের এক ভয়ানক কলঙ্ক। এরূপ নির্লজ্জ আচরণকারী পুলিশ সদস্যদের পক্ষে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাফাইয়ের বিষয়টি আরো গভীরভাবে উদ্বেগজনক। পুলিশের সকল কর্মকাণ্ডের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, নৈতিকতা এবং সর্বোপরি হৃত জন-আস্থা পুনরুদ্ধারে অনতিবিলম্বে বিচার-বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে দায়ী পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের করতে হবে। সেই সঙ্গে পুলিশকে মানুষের বন্ধুর ভাবমূর্তির ইমেজ পুনরুদ্ধারে এগিয়ে আসা উচিত। মনে রাখতে হবে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পুলিশ মানুষের জানমাল, সম্ভ্রমের হেফাজত করবে। হরণ নয়।

বিবেকের কাছে প্রশ্ন, আজ আমরা কোথায় কোন দেশে বাস করছি। যে দেশের প্রধানমন্ত্রী একজন নারী, বিরোধীদলীয় নেত্রী একজন নারী, বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের স্পিকার একজন নারী, অথচ আজ সেই দেশের নারীকে লাথি দিচ্ছে বর্তমান সরকারের পুলিশবাহিনী। তোমরা হয়ত ভুলে গেছ, এই নারীই তোমার মা, বোন, বউ এবং মেয়ে। যারা আজ এই কাজ করেছ তাদের কে বলছি, সাবাশ পুলিশ বাহিনী সাবাস, তোমরা প্রমান করলে তোমরা অমানুষ, তোমরা আজও পাকিস্তানের মত মা-বোনদের নির্যাতন করতে জান।

লেখক: শিব্বির আহমদ ওসমানী- শিক্ষক, সাংবাদিক ও সমাজকর্মী।