Home বিভাগীয় সংবাদ পুলিশ-ছাত্রলীগ ব্যাপক সংঘর্ষে চট্টগ্রাম রণক্ষেত্র

পুলিশ-ছাত্রলীগ ব্যাপক সংঘর্ষে চট্টগ্রাম রণক্ষেত্র

408
0

চট্টগ্রাম: পুলিশ-ছাত্রলীগ সংষর্ঘে রণক্ষেত্রে পরিণত বন্দরনগরী চট্টগ্রাম। নগরের আউটার স্টেডিয়ামে সুইমিং পুল নির্মাণের কাজ বন্ধ করতে ছাত্রলীগের ব্যাপক ভাংচুরের পর পুলিশের সঙ্গে এই সংঘর্ষে হয়। এসময় উভয় পক্ষের মধ্যে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ, গুলি বিনিময়ের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষ চলাকালে আউটার স্টেডিয়াম, কাজীর দেউরী, লালখানবাজার এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এতে তিন পুলিশসহ অর্ধশতাধিক আহত হয়েছে। মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে কাজীর দেউরি মোড়ের কাছে ছাত্রলীগের মানববন্ধন ও সমাবেশ কর্মসূচির একপর্যায়ে এই সংঘর্ষ বাঁধে। এর জের ধরে বিকালে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা মেহেদীবাগ, গোলাপাহাড়, সিইজি মোড়সহ নগরের বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষিপ্তভাবে দোকানপাট, যানবাহন ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাংচুর করে।
মঙ্গলবার দুপুরে সুইমিংপুল নির্মাণে ষড়যন্ত্রকারীদের রুখে দাঁড়াও শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন থেকে সুইমিংপুল নির্মাণের ঘোষণা দেয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই নগর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা স্টেডিয়াম চত্বরে জড়ো হয়ে সুইমিংপুল নির্মাণের বিরোধিতায় নামেন। আর এই বিরোধিতা ঠেকাতে গিয়ে পুলিশ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এসময় বিক্ষুব্ধ ছাত্রলীগকর্মীরা আশপাশের অন্তত ৫০টিরও বেশি দোকান ও গাড়ি ভাংচুর করেছে। এ সময় দৈনিক নয়াদিগন্তের চট্টগ্রাম ব্যুরো’র ফটো জার্নালিস্ট আখতার হোসেনের মোটরসাইকেলসহ বেশ কয়েকজন গণআধ্যম কর্মীর মোটরসাইকেল ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
দুপুর ১টা থেকে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা আউটার স্টেডিয়ামে অবস্থান নিয়ে সমাবেশ করে। তারা পুলিশের বাধায় আউটার স্টেডিয়ামে সুইমিং পুল নির্মাণ এলাকায় প্রবেশ করতে না পেরে সড়কের ওপর অবস্থান নিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়। প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা ধরে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের মধ্যে কয়েকজন পুলিশ সদস্যসহ বেশ কয়েকজন আহত হন। ভাংচুর করা হয় বেশ কয়েকটি গাড়ি। পরে পুলিশ শটগানের গুলি ছুড়ে ছাত্রলীগকর্মীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পুনরায় বিকেল চারটা থেকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন এলাকা থেকে মিছিল নিয়ে আউটার স্টেডিয়ামের প্রবেশমুখে আসতে থাকে। কিন্তু আগে থেকেই প্রবেশমুখে পুলিশের অবস্থানের কারণে তারা সেখানে প্রবেশ করতে পারেনি। পরে তারা সড়কের ওপর অবস্থান নিয়ে মিছিল-সমাবেশ করতে থাকে। সমাবেশ শেষে পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে আউটার স্টেডিয়ামের ভেতরে ঢুকে পড়েন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। তারা টিনের বেস্টনী উপড়ে নির্মাণসামগ্রী ভাংচুর করে এবং পুলিশের উপর হামলা চালায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ কয়েক রাউণ্ড টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরাও পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট, পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। এসময় পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। লালখান বাজার থেকে আসকারদীর্ঘ সড়ক ও কাজীর দেউরী থেকে নিউ মাকের্ট সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে।
সিএমপির কোতোয়ালী থানার ওসি জসিম উদ্দিন জানান, ছাত্রলীগের কিছু কর্মী আউটার ষ্টেডিয়ামে নির্মাণাধীন সুইমিংপুল কমপ্লেক্সে প্রতিবাদে সেখানে প্রবেশ করতে চাইলে নিরাপত্তা বিঘ্ন ঘটার আশঙ্কায় পুলিশ তাদের বাধা দেয়। এতে তারা পুলিশের উপর হামলা চালায়। পুলিশ তাদের সরিয়ে দিতে লাঠিচার্জ করেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, পুলিশের দুজন সদস্য গুরুতর আহত হয়েছেন। এদের একজনের পায়ে গুলি এবং আরেকজনের মাথায় ইটের আঘাত লেগেছে। ছাত্রলীগের অন্তত ২০ জন নেতাকর্মীও পুলিশের পিটুনিতে আহত হয়েছেন।
নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি জানান, আউটার স্টেডিয়ামের ঐতিহ্যবাহি মাঠ দখলে নিয়ে মেয়র নাছির বিনা টেণ্ডারে সিডিএর অনুমতি না নিয়ে এবং ইমারত নির্মাণ আইন উপেক্ষা করে সুইমিং কমপ্লেক্সের নামে ব্যবসায়িক কেন্দ্্র তৈরী করছে। ছাত্রলীগ নিয়মতান্ত্রিকভাবে ভাবে আন্দোলন চালিয়ে আসছে।
এদিকে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত নগরীর মেহেদীবাগ, গোলপাহাড়, লাভলেইন, নিউমার্কেটসহ নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ব্যাপক ভাংচুর করেছে। সড়কের উপর টাইয়ার জ্বালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। তারা ব্যাপক গাড়ি ভাংচুর চালায়।
প্রসঙ্গত, গত ১০ এপ্রিল লালদিঘীর সমাবেশে চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী সুইমিংপুল নির্মাণ বন্ধের জন্য ১৫ দিনের সময় বেধেঁ দেন; অন্যথায় সন্তানরা গিয়ে স্থাপনা ভেঙে দেবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। এর আগে গত রোববার সুইমিংপুল নির্মাণ বন্ধ করতে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেয় মহিউদ্দিন চৌধুরী অনুসারী নগর ছাত্রলীগের নেতারা। এর মাঝেই মঙ্গলবার দুপুরে এমএ আজিজ স্টেডিয়ামের সম্মেলনক্ষে সুইমিংপুলের যৌক্তিকতা তুলে ধরে সুইমিংপুল নির্মাণের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয় সুইমিংপুল বাস্তবায়ন কমিটি।
‘সুইমিং পুল নির্মাণে ষড়যন্ত্রকারীদের রুখে দাঁড়াও’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে সুইমিংপুল নির্মাণ বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক আলী আব্বাস জ্ঞানের অভাবে ক্রীড়াসংশ্লিষ্ট নয় এমন কিছু ব্যক্তি এবং সংগঠন শুধুমাত্র বিরোধিতার খাতিরেই চট্টগ্রামের আউটার স্টেডিয়ামে সুইমিংপুল নির্মাণের বিরোধিতা করছে বলে লিখিত বক্তব্যে অভিযোগ করেন। এর মাত্র কয়েকঘণ্টা পরই সুইমিংপুল ইস্যুতে মহিউদ্দিন চৌধুরী অনুসারী নগর ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের উপস্থিতিতে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে পুলিশের সংঘর্ষের এই ঘটনা ঘটল।

Previous articleহাওরের মানুষ না খেয়ে থাকবে না: রাষ্ট্রপতি
Next articleফাতেমা আহমেদ লিজার জেএসসি পরীক্ষায় বৃত্তি লাভ