টাঙ্গাইল: টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে পুলিশের গুলিতে চার জন নিহতের ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছেন জাতীয় মানাবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, আমি যদি কালিহাতীর জনগণ হতাম তাহলে তাদের সঙ্গে আমিও প্রতিবাদ সভায় অংশ নিতাম। পুলিশ তাদের ক্ষমতার অপব্যবহার করে গুলি চালিয়েছে। যা কোনভাবেই উচিত হয়নি। পুলিশের উচিত কাউকে রক্ষা না করে ফৌজদারি বিধি অনুযায়ী মামলা দায়ের করে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা। এ ঘটনায় যেসব পুলিশ জড়িত তাদের শুধু প্রত্যাহার করলে চলবে না। তাদের আইনের আওতায় এনে বিচার করতে হবে।
গতকাল দুপুরে টাঙ্গাইল মেডিক্যাল কলেজে হাসপাতালে কালিহাতীর ঘটনায় নির্যাতনের শিকার মা ও ছেলেকে দেখতে গিয়ে এসব কথা বলেন ড. মিজানুর রহমান। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক মো. মাহবুব হোসেন, ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার সঞ্জয় সরকার। পরে তিনি পুলিশের গুলিতে নিহতদের বাড়িতে যান এবং তাদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান।
এদিকে টাঙ্গাইলের কালিহাতী ও ঘাটাইলে পুলিশ-জনতার সংঘর্ষে তিনজন নিহতের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে দুটি মামলা দায়ের করেছে। মামলা দুটিতে আট শতাধিক অজ্ঞাত গ্রামবাসীকে আসামি করা হয়েছে। পুলিশের কাজে বাধা প্রদান, ভাঙচুর ও হত্যার অভিযোগ এনে ঘাটাইল ও কালিহাতী থানায় আলাদা আলাদা দুুট মামলা দুটি দায়ের করা হয়েছে।
ঘাটাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোখলেছুর রহমান জানান, ঘাটাইল থানার মামলায় বাদী হয়েছেন এসআই মোহাম্মদ ওমর ফারুক। মামলায় ঘাটাইলের কালিয়াগ্রাম, হামিদপুর, সালেংকা, আঠারদানাসহ বিভিন্ন গ্রামের ৫০০/৬০০ জন অজ্ঞাত গ্রামবাসীকে আসামি করা হয়েছে। মামলায় পুলিশের কাজে বাধা প্রদান, আইনশৃঙ্খলা বিঘ্ন ঘটানো ও ভাঙচুরের অভিযোগ আনা হয়েছে। এদিকে কালিহাতী থানার এস আই মোশারফ হোসেন বাদী হয়ে একই অভিযোগ এনে কালিহাতী উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের ৩০০/৪০০ গ্রামবাসীকে আসামি করে আরেকটি মামলা করেছেন। কালিহাতী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শহিদুল ইসলাম কালিহাতী থানায় মামলা হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। দুটি মামলাতেই গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। ঘাটাইল থানার মামলায় অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, দুইপক্ষের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও গোলাগুলির কারণে শামীম আহত হয়। পরে কালিহাতী হাসপাতালে তিনি মারা যান। কালিহাতী থানায় দায়ের করা মামলায় অপর দুইজন ফারুক ও শ্যামল নিহতের ঘটনায় একই বর্ণনা দেয়া হয়েছে। এদিকে, ঘাটাইল থানার ওসি মোকলেছুর রহমান ও কালিহাতী থানার ওসি মো. শহিদুল ইসলামকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ১৫ই সেপ্টেম্বর কালিহাতীতে মা ও ছেলেকে দিগম্বর করে শ্লীলতাহানি করার ঘটনার প্রতিবাদে ১৮ই সেপ্টেম্বর শুক্রবার বিকালে ঘাটাইলের হামিদপুরে ও কালিহাতীতে প্রতিবাদ বিক্ষোভের আয়োজন করে এলাকাবাসী। এই প্রতিবাদ সমাবেশে কালিহাতী ও ঘাটাইল উপজেলার কয়েক হাজার জনতা যোগ দিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়। পরে নিরীহ লোকের ওপর গুলি চালালে নিহত হয় ঘাটাইল উপজেলার সালেংকা গ্রামের শামীম ও কালিহাতী উপজেলার কুষ্টিয়া গ্রামের ফারুক হোসেন ও ঘুনি সালেংকা গ্রামের শ্যামল চন্দ্র দাস। গুলিবিদ্ধ হয় আরও চারজন। আহত হয় প্রায় ৩০ জন।