ঢাকা: একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানকে রিভিউ রায় পড়ে শোনানো হয়েছে। বুধবার সন্ধ্যা ছয়টার দিকে তাকে এই রায় পড়ে শোনানো হয়। একই সঙ্গে জামায়াতের এই নেতা রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাইবেন কিনা তা জানতে চাওয়া হয়েছে বলে কারা সূত্রে জানা গেছে।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার নেছার আলী বলেছেন, আমরা রায়ের কপি পাওয়ার পর মার্সি পিটিশন কামারুজ্জামানকে দিয়েছি। তিনি যদি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা (মার্সি পিটিশন) চান তাহলে তিনি তাতে স্বাক্ষর করবেন। আর না করলে তিনি তা অবহিত করবেন।
বিকেল ৫টা ৪৫ মিনিটে ট্রাইব্যুনালের পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি দল রায়ের কপিটি নিয়ে কারাগারে পৌঁছান। সেখানে ট্রাইব্যুনালের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ আফতাবুজ্জামান রায়ের কপিটি সিনিয়র জেল সুপার ফরমান আলীর কাছে হস্তান্তর করেন একই সময়ে রায়ের একটি করে কপি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ঢাকার জেলা প্রশাসক (জেলা ম্যাজিস্ট্রট), অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয় ও আসামিপক্ষের আইনজীবীদের কাছে পাঠানো হয়।
এর আগে সুপ্রিমকোর্ট থেকে বিকেল চারটা ৫২ মিনিটে রায়ের কপি আসে ট্রাইব্যুনালে। সুপ্রিমকোর্টের সহকারী রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ মেহেদী হাসানের কাছ থেকে সেটি গ্রহণ করেন ট্রাইব্যুনালের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান।
কামারুজ্জামান রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাওয়ার কথা জানালে রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। প্রাণভিক্ষা না চাইলে ফাঁসি কার্যকরের প্রক্রিয়া শুরু করবে কারা কর্তৃপক্ষ।
এর আগে দুপুরে ৩৭ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়ে স্বাক্ষর করেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে আপিল বেঞ্চের চার সদস্য। বেঞ্চের অন্য তিন সদস্য হলেন- বিচারপতি আব্দুল ওয়াহহাব মিয়া, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী।
চূড়ান্ত অনুলিপি প্রিন্ট দেয়ার পর চার বিচারপতি সই করেন। সইয়ের পর রায়ের কপি সুপ্রিমকোর্টের বিচার শাখায় প্রেরণ করা হয়।
গত সোমবার কামারুজ্জামানের ফাঁসির রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন খারিজ করে দেয় প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ।
রায়ের পর কামারুজ্জামানের সঙ্গে দেখা করতে তার পরিবারকে চিঠি দেয় কারা কর্তৃপক্ষ। সন্ধ্যার পর কারাগারে কামারুজ্জামানের সঙ্গে দেখা করেন তার স্ত্রী নুরুন্নাহার বেগম, দুই ছেলে হাসান ইকবাল ও হাসান ইমাম, মেয়ে আতিয়া নূর, ভাগ্নি রুখসানা জেবিনসহ পরিবারের ১২ সদস্য।
এতে সোমবার রাতেই কামারুজ্জামানের ফাঁসি কার্যকরের গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে। তবে রায়ের কপিতে বিচারপতিরা সই না করায় তা কারাগারে পৌঁছায়নি। ফলে পিছিয়ে যায় ফাঁসি কার্যকর।
এদিকে, মঙ্গলবার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘রায় কার্যকরে কারা কর্তৃপক্ষ সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। আদালতের নির্দেশনা পেলেই আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে রায় কার্যকর করা হবে।’