ছলিম উল্লাহ মেজবাহ: বিএনপির রাজপথের যুগপৎ আন্দোলনের একমাত্র ভরসা জামায়াত এখন মাঠছাড়া। হদিস পাওয়া যাচ্ছে না শীর্ষ নেতাসহ দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের। মাঠে বিচরণে দেখা যাচ্ছে না কর্মীরদেরও। এ ব্যাপারে দলটির গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বশীল নেতাদের নেই কোনো প্রতিক্রিয়া। সপ্তাহখানেক থেকে দলটির সাংগঠনিক বিষয়ের তথ্য জানতে গিয়ে এসব তথ্য উঠে আসে।
এদিকে যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে গত পাঁচ বছর ধরে আন্দোলন করে আসছে জামায়াত-শিবির। পাশাপাশি দলটি ২০ দলীয় জোটের প্রধান শরিক বিএনপির বি টিম হিসেবে কাজ করে আসছে। বিগত দিনে সংগঠনটির বিভিন্ন কর্মসূচিতে জনগণের সাড়া না মিললেও হরতাল-অবরোধই ছিল এক সময়ে তাদের আন্দোলনের প্রধান হাতিয়ার।
দলটির যেসব নেতা বাইরে আছেন তারাও আটকের ভয়ে চলছেন এখন পিঠ বাঁচিয়ে। প্রধান মিত্র হিসেবে জামায়াতকে রাজপথের আন্দোলনের প্রধান ভরসা হিসেবে বিএনপি মনে করলেও এখন সেই জামায়াতও মাঠ ছাড়া। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে ও পরে লাগাতার হরতাল-অবরোধ কর্মসূচিতে দেশজুড়ে পেট্রলবোমা নিক্ষেপের জন্য দলটিকে দায়ী করে আসছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
অপরদিকে রাজনৈতিক কৌশলে একের পর এক ব্যর্থতা, অন্যদিকে নাশকতার দায়ে জনরোষে নেতাকর্মীরা হয়ে পড়ছেন দিশেহারা। নির্বাচন প্রতিহত ও যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত জামায়াত নেতা ও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের ফাঁসি ঠেকানোর চেষ্টা পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে।
অতীতে দেখা গেছে, ২০ দলীয় জোটের যৌথ আন্দোলন কর্মসূচি আহ্বান করার পর আগের দিন সন্ধ্যায় গাড়ি ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ করে আতঙ্ক ছড়ানো হতো দলটির নেতাকর্মীদের পক্ষ থেকে।
এছাড়া হরতালে নেতাকর্মীরা ঝটিকা স্টাইলে মাঠে নেমে বিক্ষোভ মিছিল বা পিকেটিং করতে দেখা গেলও এখন সে রকম কিছুই হচ্ছে না। ৫ আগস্ট সারাদেশে নারী ও শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে জামায়াত কর্মসূচি আহ্বান করলেও দেশের দু’একটি স্থানে বিক্ষোভ ছাড়া কোথাও নামতে পারেনি নেতাকর্মীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দলটির নেতাকর্মীরা এখন রাজনীতিতে জীবন ঝুঁকি নিতে ইচ্ছুক নন। এ বিষয়ে জামায়াতের এ শীর্ষ নেতা প্রতিবেদককে বলেন, এ সরকারের অধীনে কিছুই নিরাপদ নয়, রাজনীতির স্বাধীনতা নেই, মানুষের নিরাপত্তা নেই।
এ নেতা বলেন, কেউ এ সরকারের নানা অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে মাঠে নামলে পরের দিন দেখা যায়, ওই ব্যক্তির হদিস পাওয়া যাচ্ছে না, হয় তাকে হত্যা করা হচ্ছে, না হয় গুম করা হচ্ছে অথবা মামলা দিয়ে জেলে পাঠানো হচ্ছে। এ অবস্থায় দেশে রাজনীতি চলতে পারে না বলেও মন্তব্য করেন জামায়াতের এ নেতা।
প্রায় ৫০টি জেলায় মাঠ ছাড়া জামায়াত। একই অবস্থা সংগঠনের সহযোগী সংগঠন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবিরের। তাই মাঠ ছাড়া জামায়াতকে মাঠে অবস্থানের জন্য নানা কৌশল নিয়েছে জামায়াত। কেন্দ্রীয় নেতাদের এ কৌশল নেতাকর্মীদের শক্তি ও মনোবল চাঙ্গা করতে জেলা সম্মেলন, শববেদারি, ৫/৬ দায়িত্বশীল নেতাদের মধ্যে সাংগঠনিক বিষয়ে গোপন আলোচনা, প্রত্যেকে নিজেদের নিরাপদে রাখা, কর্মীদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববন্ধন তৈরি, যথাসময়ে বায়তুল মাল সংগ্রহ, স্থানীয় ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে সু-সম্পর্ক বজায় ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে ধীরে ধীরে সখ্য তৈরির জন্য দেশের সব জেলা, উপজেলা নেতাদের নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় জামায়াত।
এদিকে সম্প্রতি গোপনে জামায়াত জেলায় নেতাদের সম্মেলন আহ্বান করলেও পরে কোনো এক অজ্ঞাতে কারণে তা বাতিল করা হয়। পরে ব্যাপকভাবে প্রস্তুতির পরিবর্তে আংশিকভাবে জেলা সম্মেলন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে দলটি এখন কাজ করে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম জামায়াতের এক স্থানীয় শীর্ষ নেতা।
তিনি বলেন, ৫ জেলা বা তার অধিক জেলা নেতাদের নিয়ে খণ্ড খণ্ডভাবে ৬৪টি জেলার সাংগঠনিক সম্মেলন করা হচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এ নেতা বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নজর এড়ানোর জন্য এই বিকল্প পদ্ধতি গ্রহণ করেছে কেন্দ্রীয় জামায়াত।
সূত্রে আরো জানায়, দলটির নেতাকর্মীরা এখন নীবর থেকে সাংগঠনিক কার্যক্রম খুব সতর্কতার সঙ্গে এগিয়ে নিচ্ছে। যখন পার্টির চূড়ান্ত নির্দেশ আসবে তখন পুরো শক্তি নিয়ে মাঠ দখলের লড়াইতে অংশ নেবে। দলটির অন্য একটি সূত্র জানায়, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে এখন সহিংসতার পরিবর্তে আদর্শিক রাজনীতির মাধ্যমে মোকাবিলা করতে দেশের প্রতিটি গ্রামে উচ্চশিক্ষিত সোসাইটিকে টার্গেট করে মাঠে কাজ করছে জামায়াত-শিবির।- মানবকণ্ঠ