ঢাকা: বিএনপির শীর্ষ দুই নেতাই বর্তমানে অবরুদ্ধ হয়ে আছেন। বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া গত শনিবার রাত থেকে গুলশানের কার্যালয়ে আর দলটির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম সোমবার বিকাল ৪টা থেকে জাতীয় প্রেস ক্লাবে কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে আছেন।
৫ জানুয়ারিকে কেন্দ্র করে সোমবার বিকাল ৪টায় বিএনপিপন্থী পেশাজীবীদের অনুষ্ঠানে যোগদান শেষে মির্জা ফখরুল প্রেস ক্লাবে প্রবেশ করেন। এরপর থেকে প্রেস ক্লাবের তিনটি গেটে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের তিনটি টিম অবস্থান নেয়। সেখানে প্রস্তুত রাখা হয়েছে তিনটি মাইক্রোবাস। প্রেস ক্লাব ও আশপাশের এলাকায় বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এরপর রাত কয়েকবার তিনি বের হতে চাইলেও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সতর্ক প্রহরার কারণে বের হতে পারেননি। সেখানে গুঞ্জন রয়েছে প্রেস ক্লাব থেকে বের হওয়া মাত্র গ্রেফতার হতে পারেন বিএনপির এই ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব।
এর আগে গত শনিবার রাতেও বিএনপির এই শীর্ষ নেতার বাসভবনের সামনে অবস্থান নেয় পুলিশ। কিন্তু এর আগেই বাসা থেকে বের হয়ে অন্যত্রে চলে যান তিনি। সেখান থেকে সোমবার আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে পেশাজীবীদের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে প্রেস ক্লাবে অবস্থান নেয়ার সঙ্গে সঙ্গে ডিবি ও পুলিশ সদস্যরা প্রেস ক্লাবের সামনে ও আশে পাশে অবস্থান নেয়।
মির্জা ফখরুল ইসলাম মঙ্গলবার সকাল ১০টা পর্যন্ত প্রেস ক্লাবের দোতলায় ভিআইপি গেস্ট রুমে অবস্থান করছেন। সেখানে জাগপা প্রধান শফিউল আলম প্রধান, পেশাজীবী পরিষদের আহ্বায়ক রুহুল আমিন গাজী, বিএফইউজের (একাংশ) সভাপতি ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শওকত মাহমুদ, মহাসচিব এম এ আজিজ, প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমদ, ডিইউজে (একাংশ) সভাপতি কবি আবদুল হাই সিকদার, পেশাজীবী পরিষদের নেতা আ ন হ আকতার হোসেন, মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম দলের নেত্রী শ্যামা ওবায়েদসহ বিএনপিপন্থী পেশাজীবীদের বেশ কয়েকজন নেতা রয়েছেন।
গত শনিবার রাতে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া অসুস্থ নেতা রিজভী আহমেদকে দেখতে গুলশান কার্যালয় থেকে নয়াপল্টনের কার্যালয়ে আসার উদ্যোগ নিলে বিপুল সংখ্যক পুলিশ সেখানে অবস্থান নেন। এরপর আর গুলশান কার্যালয় থেকে বিএনপি নেত্রীকে বের হতে দেয়া হয়নি। এমনকি আইনজীবী ও সাংবাদিক প্রতিনিধি ছাড়া কেউ ওই কার্যালয়ে প্রবেশ করতে পারেনি।
৫ জানুয়ারির কর্মসূচিকে ঘিরে পুলিশের ভ্যান, ইট-পাথর ও বালুভর্তি ট্রাক দিয়ে বিএনপি নেত্রীর গুলশান কার্যালয় ঘিরে ফেলা হয়। সমাবেশের যাওয়ার প্রাক্কালে সোমবার দুপুর ১২টার দিকে পুলিশ শেষ পর্যন্ত চেয়ারপার্সনের গুলশান কার্যালয়ের মূল ফটকসহ দুটি ফটকেও তালা লাগিয়ে দেয়।
এ অবস্থায় কার্যালয়টি থেকে বের হতে পারেননি তিনি। এরপর বিকেলে কার্যালয়টির মুল ফটকের ভেতরে গাড়িতে দাঁড়িয়েই সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন বিএনপি চেয়ারপার্সন। তাকে অবরুদ্ধ করার প্রতিবাদ করেন ও দেশের সঙ্কট নিরসনে সরকারের প্রতি সংলাপের আহ্বান জানান তিনি। পাশাপাশি তাকে অবরুদ্ধ, সমাবেশ করতে না দেয়া ও নেতাকর্মীদের নির্যাতন-গ্রেফতারের প্রতিবাদে সারাদেশে লাগাতার অবরোধের ঘোষণা দেন।
এদিকে মঙ্গলবার বেলা ১০টার দিকেও দেখা গেছে বিএনপি চেয়ারপার্সনের গুলশান কার্যালয়ের দুটি ফটকে এখনো তালা ঝুলানো। একই সঙ্গে ১০ প্লাটুন পুলিশ ও পুলিশের গাড়ি দিয়ে কার্যালয়টি ঘিরে রাখা হয়েছে।
এবস্থায় বিএনপির শীর্ষ দুই নেতাই এখন পৃথক দুটি স্থানে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নজরধারীর পাশাপাশি কার্যত অবরুদ্ধ অবস্থায় আছেন।