
বিএনপি চেয়ারপারসন ও ২০ দলীয় জোটের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে আবারও চরম দুর্ব্যবহার করেছে সরকার। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী ৫ জানুয়ারি কালো পতাকা দিবস পালন করার এবং নয়াপল্টনে অনুষ্ঠেয় সমাবেশে তার ভাষণ দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু আগের দিন ৪ জানুয়ারিই সরকার শত শত পুলিশ, গোয়েন্দা ও অন্যান্য বাহিনী দিয়ে বেগম জিয়ার গুলশানস্থ অফিস ঘিরে ফেলেছিল। ব্যারিকেড দেয়ার পাশাপাশি বালু আর ইট বোঝাই ১২টি ট্রাকও চারদিকের সড়কে এমনভাবে রাখা হয়েছিল যাতে গাড়ি দূরে থাকুক, কোনো মানুষের পক্ষেও যাতায়াত করা সম্ভব না হয়। এ পর্যন্ত এসেও থেমে পড়েনি সরকার। অফিস ভবনের প্রতিটি গেটেই বাইরে থেকে তালা লাগিয়ে দিয়েছিল পুলিশ। সব মিলিয়ে এমন আয়োজন করা হয়েছিল যাতে কেউই বাইরে থেকে ভেতরে এবং ভেতর থেকে বাইরে যাওয়া-আসা করতে না পারে। সরকারের উদ্দেশ্যেও কোনো রাখঢাক ছিল না। সরকার একদিকে পুরো নয়াপল্টন এলাকাকে মানবশূন্য করে ফেলেছিল, অন্যদিকে খালেদা জিয়াকেও বাইরে আসতে দেয়নি। তা সত্ত্বেও বেগম জিয়া নয়াপল্টন যাওয়ার জন্য বিকেলের দিকে গাড়িতে উঠেছিলেন। কিন্তু ঘণ্টার বেশি সময় তাকে সে গাড়িতেই বসে থাকতে হয়েছে। এর মধ্যে তার পক্ষ থেকে পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে দফায় দফায় কথা বলা এবং তাদের কাছে অনুরোধ জানানো হয়েছে। কিন্তু বাইরে যাওয়ার অনুমতি পাওয়া যায়নি। তারা বরং ঔদ্ধত্যপূর্ণ দুর্ব্যবহার করেছে। এটুকু হলেও হয়তো কথা বাড়াতে হতো না। অন্যদিকে বিএনপি নেত্রীর অফিসে পুলিশ পিপার (মরিচের ঝাল) স্প্রে করেছে। এতে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতা-নেত্রী, বেগম জিয়াও প্রচন্ড শ্বাসকষ্টে ভুগেছেন।
ওদিকে রাজধানীর পাশাপাশি সারা দেশেও এক ভয়ংকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। পুলিশ এবং আওয়ামী কর্মীদের হামলায় বিভিন্ন স্থানে অন্তত পাঁচজন নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন শতাধিক। পুলিশ গ্রেফতারও করেছে সহস্রধিক নেতা-কর্মীকে। দেশজুড়ে দমন-নির্যাতন ও হত্যাকান্ডের প্রতিকূলতার মুখেও বেগম খালেদা জিয়া তার বলিষ্ঠ অবস্থান বজায় রেখে সরকারের আচরণের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন এবং গণতন্ত্রের সংগ্রাম অব্যাহত রাখার জন্য জনগণের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন। বলেছেন, তাকে শুধু নয়, পুরো দেশকেই অবরুদ্ধ করে ফেলেছে সরকার। এর মধ্য দিয়ে ক্ষমতাসীনরা প্রকৃতপক্ষে গণতন্ত্রকেই হত্যা করতে চান। তাদের এই গণতন্ত্রবিরোধী চেষ্টাকে প্রতিহত করতে হবে। আর সেজন্যই বিদায় করতে হবে ফ্যাসিস্ট সরকারকে। গত বছরের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত একদলীয় নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সংসদ বাতিল এবং ‘অবৈধ ও দখলদার’ সরকারকে অবিলম্বে পদত্যাগ করার দাবিরও পুনরাবৃত্তি করেছেন তিনি। বলেছেন, স্বল্পতম সময়ের মধ্যে নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নতুন একটি সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে, যে নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দল অংশ নিতে পারবে এবং সব দলের জন্য সুযোগের সমতা নিশ্চিত করা হবে।
বালু ও ইটের ট্রাক এবং শত শত পুলিশ দিয়ে বেগম খালেদা জিয়ার অফিস ঘিরে রাখা ও মরিচের গুঁড়া ছিটানোসহ পুলিশের দুর্ব্যবহার থেকে দেশজুড়ে চালানো দমন-নির্যাতন, গ্রেফতার ও হত্যাকান্ড পর্যন্ত সরকারের প্রতিটি পদক্ষেপের নিন্দা করা হচ্ছে। কারোই ভুলে যাওয়া উচিত নয় যে, বেগম খালেদা জিয়া শুধু দেশের প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির চেয়ারপারসন ও ২০ দলীয় জোটের নেত্রী নন, তিন-তিনবার প্রধানমন্ত্রীও হয়েছেন তিনি। সংসদে বিরোধী দলের নেত্রী হিসেবেও ভূমিকা পালন করেছেন। সুতরাং তার মতো একজন জনপ্রিয় জাতীয় নেত্রীর সঙ্গে এ ধরনের আচরণ কোনোক্রমেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। অন্যদিকে বিএনপিসহ প্রধান দলগুলোকে তাড়া করে বেড়ানো। পুলিশ এবং আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোকে দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করা হচ্ছে। কোনো সভ্য ও গণতান্ত্রিক দেশে এমন অবস্থা চলতে পারে না। অন্যদিকে অবরুদ্ধ ও অসম্মানিত অবস্থায়ও বেগম খালেদা জিয়া কিন্তু গণতন্ত্রের স্বার্থে দেশপ্রেমিক প্রধান জাতীয় নেত্রীর ভূমিকা পালন থেকে নিবৃত্ত হননি। গণতন্ত্র বিপন্ন হয়ে পড়ার আশংকা থেকেই তিনি সাত দফা পেশ করেছেন। বেগম জিয়া একই সঙ্গে প্রশাসন ও আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি জনগণের প্রতিপক্ষ না হওয়ার এবং নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। আমরা মনে করি, সংকট আরো ঘনীভূত হয়ে ওঠার আগেই বেগম খালেদা জিয়ার উপস্থাপিত সাত দফা মেনে নেয়া এবং বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীসহ ব্যাপকভাবে জনসমর্থিত দলগুলোর সঙ্গে সমঝোতা প্রতিষ্ঠার ভিত্তিতে নিরপেক্ষ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নতুন জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা নেয়া উচিত।