ঢাকা: ক্রসফায়ার ও বন্দুকযুদ্ধের নামে র্যাব ও পুলিশ দেশে ফ্রি-স্টাইলে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ। বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে বিএনপি নেতা সালাহ উদ্দিন আহমেদসহ গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করে সংগঠনটি এই অভিযোগ করে। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক রুহুল আমিন গাজী।
তিনি বলেন, ‘গড়ে প্রতিদিন দুজন এবং কোনো কোনো দিন চার-পাঁচজনও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হচ্ছেন, যাদের বেশিরভাগই বিরোধী দলের নেতাকর্মী।’
সালাহ উদ্দিন আহমেদের নিখোঁজের বিস্তারিত ঘটনা তুলে ধরে রুহুল আমিন গাজী বলেন, ‘এই নিখোঁজের ঘটনায় দেশি ও আন্তর্জাতিক মহলের উদ্বেগ সত্ত্বেও রাষ্ট্র সম্পূর্ণ নির্বিকার ভূমিকা পালন করছে। এই ঘটনা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের মন্ত্রীরা এমন মন্তব্য করেছেন, যা নিষ্ঠুর পরিহাস ছাড়া কিছুই নয়।’
গত কয়েক মাসে দেশে গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নিয়ে দেশে-বিদেশের মানবাধিকার সংস্থার পরিসংখ্যানও তুলে ধরা হয় সংবাদ সম্মেলনে।
মানবাধিকার সংস্থার রিপোর্টের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত পুলিশ বাহিনীর কথিত বন্দুকযুদ্ধে ১২৮ জন সাধারণ মানুষ নিহত হয়েছেন। এ সময়ে গুম হয়েছেন ৫৩ জন, যার মধ্যে দুজনের লাশ পাওয়া গেছে। আর ১৮ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। বাকি ৩৩ জনের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।
২০১৪ সালে গুম হয়েছে ৩৯ জন। এর মধ্যে ১০ জনের লাশ পাওয়া যায়, ১৮ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। বাকি ১১ জনের কোনো হদিস মেলেনি। ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ২১ জন গুম হন। এর মধ্যে পাঁচজনের লাশ ও ১০ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। বাকি ছয়জনের সন্ধান পাওয়া যায়নি। ২০১৩ সাল থেকে ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১১৩ জন গুম হয়েছেন।
রুহুল আমিন গাজী বলেন, ‘রাষ্ট্রের প্রধান দায়িত্ব নাগরিকের সম্পূর্ণ নিরাপত্তা দেয়া। এ ব্যাপারে রাষ্ট্র ব্যর্থ হলে নাগরিকরা কোথায় যাবেন? সালাহ উদ্দিনকে উদ্ধারের দায়িত্ব সরকারের। কিন্তু উল্টো সরকার পরিহাস করে চলেছে।’
বাংলাদেশ যেন এক গুমের রাজ্যে পরিণত হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে একের পর এক গুম আর গুপ্ত হত্যার ঘটনায় মানুষ ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছে।’
রুহুল আমিন গাজী অভিযোগ করেন, পাইকারী হারে হতাকাণ্ড চালাতে গিয়ে পুলিশ বাহিনী ঘাতক বাহিনীতে পরিণত হচ্ছে, যার পরিণাম শুভ হতে পারে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও আইনের প্রতি মানুষের আস্থা নষ্ট করার এই ফল বুমেরাং হতে বাধ্য।
আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আয়োজনকে সরকারের অপকৌশল আখ্যা দিয়ে বিএনপিপন্থি এই পেশাজীবী নেতা বলেন, ‘গুম, আর বিচারবহির্ভূত হত্যার পাশাপাশি নীল নকশার অংশ হিসেবে সরকার হঠাৎ করে তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে। তারা ৫ জানুয়ারির ভুয়া নির্বাচনের মতো সিটি করপোরেশনকে দখলে নেয়ার অপকৌশল নিয়েছে।
রুহুল আমিন গাজী অবিলম্বে সুষ্ঠুভাবে সিটি করপোরেশন নির্বাচনের স্বার্থে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির আহ্বান জানান।
সংবাদ সম্মেলনে সালাহ উদ্দিন আহমেদের স্ত্রী হাসিনা আহমেদ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন- বিএনপি চেয়ারপারনের উপদেষ্টা ও বিএফইউজের (একাংশ) সভাপতি শওকত মাহমুদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রো-ভিসি ও উইট্যাবের প্রেসিডেন্ট আ ফ ম ইউসূফ হায়দার, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ, অ্যাবের মহাসচিব ইঞ্জিনিয়ার হারুন-অর রশীদ প্রমুখ।