ঢাকা: জাপানি নাগরিক হত্যায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বিএনপি বলেছে, বাংলাদেশকে শাসকদল সন্ত্রাসের অভয়ারণ্যে পরিণত করেছে। বিএনপি বলছে, ‘গত কয়েকদিনে একজন ইতালীয় এবং একজন জাপানি নাগরিকের নিহত হওয়ার ঘটনা খুবই উদ্বেগজনক।
গত সোমবার ঢাকার গুলশানে এক ইতালীয় নাগরিককে গুলি করে হত্যার ৫ দিনের মাথায় আজ রংপুরের কাউনিয়া উপজেলায় হোসি কুনিও নামে এক জাপানি নাগরিককে গুলি করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা।
শনিবার সকালে বিএনপির নয়া পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির বর্তমান মুখপাত্র ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, ‘আমরা এসব ঘটনার তীব্র নিন্দা করি এবং দোষীদের ধরে বিচারের আওতায় এনে কঠিন শাস্তি প্রদানের দাবি জানাচ্ছি।’
রিপন বলেন, ‘রাষ্ট্র ও সমাজে মানুষ এখন ঘরে-বাইরে আর কোনোভাবেই নিরাপদ বোধ করছে না। বিনা ভোটের এমপিরা, শাসকদলের ক্যাডাররা সারাদেশে যেভাবে তাণ্ডব ও নৈরাজ্য বিস্তার করছে-তাতে এখন মায়ের পেটের শিশু যেমন নিরাপদ থাকেনি, সাধারণ মানুষসহ অবুঝ শিশুরাও তাদের সন্ত্রাসের শিকারে পরিণত হচ্ছে প্রতিদিন।’
তিনি বলেন, শুক্রবার গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে বিনা ভোটের এক এমপি প্রত্যুষে পাখি শিকারের মতো গুলি করে এক শিশুকে পঙ্গু করে দিয়েছে। সুন্দরগঞ্জের এমপি মন্জুরুল ইসলাম লিটনকে অবিলম্বে গ্রেপ্তারের দাবি জানাচ্ছে আমাদের দল।
রিপন বলেন, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কাটাবাড়ী ইউনিয়ন বিএনপির সদস্য শাহ আলম-পিতা মৃত আজিজুল হককে গত বৃহস্পতিবার রাতে জবাই করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা।
‘শাসকদলের দুর্বৃত্তপনা, অস্ত্রবাজি, টেন্ডারবাজি, দখলবাজির দৌরাত্ম্যে আজ সাধারণ মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছে,’ মন্তব্য রিপনের।
তিনি বলেন, দেশে সুশাসনের কোনো বালাই নেই, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় অসহায় হয়ে পড়েছে।
অপরদিকে সরকার বিরোধী দলের রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনে সারাদেশে ব্যাপক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে চলেছে এবং ক্রমেই একদলীয়-কর্তৃত্ত্ববাদী শাসনব্যবস্থাকে পাকাপোক্ত করার পথে অগ্রসর হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের দল পূণর্গঠনের প্রক্রিয়ায় সারাদেশে গ্রাম-ইউনিয়ন পর্যায় থেকে শুরু করে জেলা পর্যায়ে যে কাউন্সিল অনুষ্ঠানের কার্যক্রম হাতে নিয়েছে-তাকে বাধাগ্রস্থ করার জন্য সরকার কখনো আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে নির্বিচারে ব্যবহার করছে এবং এর পাশাপাশি দলীয় ক্যাডারদের নামিয়ে বিভিন্ন অঞ্চলে আমাদের কাউন্সিল অনুষ্ঠানে হামলা করছে।’
শুক্রবার লক্ষ্মীপুর জেলায় সাবেক সংসদ সদস্য আশরাফ উদ্দিনের বাড়িতে একটি ইউনিয়ন পর্যায়ের সম্মেলনে হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করে রিপন বলেন, এছাড়া জেলার সাংগঠনিক সম্পাদক হাসিবুর রহমানের গাড়ি ভাংচুর করেছে। বিএনপি কর্মী আবু তাহের দোলন, করিম, মানিকসহ ৫ জন আহত হয়েছে ঐ হামলার ঘটনায়।
রিপনের অভিযোগ, কমলনগর উপজেলার যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক মেজবাহউদ্দিন ও উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতির নেতৃত্বে এ হামলা পরিচালিত হয়। এধরণের ঘটনা সারাদেশেই সংঘটিত হচ্ছে।
‘আমরা শাসকদলীয় ক্যাডারদের সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা করছি এবং তাদের গ্রেপ্তারের দাবি করছি এবং একইভাবে বিশ্বাস করি, শাসকদের আসকারায়-পৃষ্ঠপোষকতায় এ ধরনের হামলার ঘটনা ঘটছে এবং বুঝতে অসুবিধার কোনো কারণ নেই যে, বিএনপির পুনর্গঠন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করাই এর লক্ষ্য।’
রিপন বলেন, বিনা ভোটের এমপিদের অনেকেই বর্তমান সংসদে আছেন। এতে করে সংসদীয় গণতন্ত্রের ঐতিহ্য মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে এবং সংসদ সদস্য পদের মর্যাদা সম্পর্কে জনগণের মাঝে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হচ্ছে। বিনা ভোটে একটি সংসদ গঠিত হওয়ায় এ সংসদের সদস্যরা অনেকেই নিজেদের আইনের ঊর্ধ্বে ভাবছেন।
রিপন বলেন, এই সরকারের ক্ষমতায় থাকার কোনো নৈতিক ভিত্তি নেই। এই কারণে আমরা অবিলম্বে সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে একটি নতুন নির্বাচনের আয়োজনের পথকে সুগম করে নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটি দ্রুত নির্বাচন দিয়ে প্রকৃত জনপ্রতিনিধিদের দ্বারা নতুন একটি সংসদ গঠনের প্রক্রিয়া শুরুর আহ্বান জানাই।’
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী বিদেশে বসে ‘২০১৯ সালের পূর্বে নির্বাচন নয়’-এ কথা বলার পর শাসকদলের দুর্বৃত্তরা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
রিপন বলেন, ‘আমরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করেছি-সরকারের মন্ত্রী-সরকার ঘনিষ্ঠ কিছু ব্যবসায়ীর মালিকানাধীন প্রচারমাধ্যম-বিরোধী দলের দেয়া বক্তব্য-বিবৃতি বিকৃত করে প্রকাশ করার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সানাউল্লা মিয়া, সহ দপ্তর সম্পাদক শামীমুর রহমান শামীম, সহ স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক এবিএম মোশাররফ হোসেন প্রমুখ।