ঢাকা: সরকারের ওপর প্রেসার ক্রিয়েট করার জন্য বিএনপি জাতিসংঘকে আনার চেষ্টা করছে। তবে জাতিসংঘ সহিংসতা কমাতে বিএনপির ওপরও জোর দেবে এবং সংলাপ ও আলাপ-আলোচনার ব্যাপারে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ওপরও জোর দেবে। তবে এর মাধ্যমে বর্তমান সংকটের সমাধান হবে এমনটি আমি মনে করি না।
এমন মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ও বিশিষ্ট রাজনৈতিক ভাষ্যকার ড. আমেনা মহসীন। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, বর্তমান পরিস্থিতির পরিণতিতে আমি দীর্ঘমেয়াদে দেখতে পাচ্ছি আমাদের রাজনীতির প্রতি মানুষের আস্থা হারিয়ে যাচ্ছে। দেশে বিরাজনীতিকরণ চলছে।
আমেন মহসীন বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতি এমন একটা জায়গায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে, যেখানে মনে হয় পুরো দেশটাকে ভাগ করে ফেলা হয়েছে। এটা কিন্তু বেশ ভয়াবহ একটা বিষয়।
বিশিষ্ট এই রাজনৈতিক ভাষ্যকার বলেন, জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় যদি কোনো সমাধান না হয় তাহলে এর পরিণতি হবে খুবই ভয়াবহ। এখনই আমরা যে জায়গায় অবস্থান করছি সেটা দেশের জন্য কোনো স্বাভাবিক জীবন না। পুরো দেশ অবরুদ্ধ হয়ে আছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান সমস্যাটি রাজনৈতিক। আর তারই উপসর্গ হিসেবে আমরা আইন শৃঙ্খলার অবনতি দেখছি। আর যেহেতু এটা রাজনৈতিক সমস্যা সে কারণে রাজনৈতিকভাবে এটার মোকাবেলা করতে হবে। আর যদি বর্তমানের মতো করে দেশ শাসন করতে চায় তাহলে গুপ্তহত্যা, সন্ত্রাস এগুলো দিন দিন আরো বাড়বে এবং সেটাকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে না।
অধ্যাপক আমেনা মহসীনের পুরো সাক্ষাৎকারটি উপস্থাপন করা হলো। সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেছেন গাজী আবদুর রশীদ।
প্রশ্ন: বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানে নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে একটি প্রস্তাব দেয়া হয়েছে যার নেতৃত্বে রয়েছেন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার এটিএম শামসুল হুদা। কিন্তু আওয়ামী লীগ এরই মধ্যে তা প্রত্যাখ্যান করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বুধবার সংলাপের সম্ভাবনা নাকচ করে বলেছেন ‘খুনীদের’ সঙ্গে আলোচনা নয়। নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে সংলাপের প্রস্তাব দেয়া এবং তা নাকচ করার ঘটনাকে আপনি কিভাবে দেখবেন?
আমেনা মহসীন: দেখুন এ বিষয়ে বিশ্লেষণ করতে হলে কতগুলো জিনিসকে আমাদের মাথায় রাখতে হবে। সংলাপের জন্য যে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে সে ব্যাপারে যে বিষয়টি ভাববার সেটি হচ্ছে যাদেরকে সংলাপের জন্য আহবান জানানো হয়েছে সে পক্ষের মধ্যে কতটুকু শ্রদ্ধার জায়গা আছে, কতটুকু আস্থা আছে এবং তারা কতটুকু ছাড় দিতে রাজি আছে।
সরকার যে সংলাপের আহবানকে প্রত্যাখ্যান করল তাতে কিন্তু আমি মোটেও আবাক হইনি। বরং আমি অবাক হতাম যদি তারা এটা মেনে নিত।
আমরা যদি গত ১ বছর দেশের দিকে দৃষ্টি দেই তাহলে অবশ্যই দেখব দেশে উন্নয়ন হয়েছে। তবে একই সময় আমরা দেখেছি বিএনপিসহ বিরোধী মতকে খুব কমই স্পেস দেয়া হয়েছে। শুধু বিরোধী দল না একচেটিয়াভাবে নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে যখনই দেখেছি ডিসেনডিং ভয়েসেস এসেছে তখনই অনেক ধরনের বাধা দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশের রাজনীতি এমন একটা জায়গায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে, যেখানে মনে হয় পুরো দেশটাকে ভাগ করে ফেলা হয়েছে। বিভক্ত করা হয়েছে এভাবে যে কারা স্বাধীনতা যুদ্ধের পক্ষে এবং কারা এর বিপক্ষে। এটা কিন্তু বেশ ভয়াবহ একটা বিষয়। কারণ জামায়াতকে নিয়ে এক ধরনের পলিটিক্স করতে পারা যায়। তবে সেই জামায়াতকে কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার এখনও নিষিদ্ধ ঘোষণা করেনি। আমি মনে কর, এসব বিষয় নিয়ে রাজনীতি করাটা কিন্তু আগুন নিয়ে খেলা।
নাগরিক সমাজের প্রস্তাব প্রত্যাখানের কারণ হিসেবে তারা দেখালো- নাগরিক সমাজ দেশের চলমান সহিংসতাকে নিন্দা জানায়নি। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে নাগরিক সমাজ যে প্রস্তাবটা এনেছে সেটা সহিংসতার বিরুদ্ধে। অর্থাৎ সহিংসতা আছে বলেই তারা প্রস্তাব এনেছে। তবে যদি তর্কের খাতিরে আমি মেনেও নেই যে এখানে নাগরিক সমাজের একটা দুর্বল জায়গা ছিল, সহিসংতাকে কনজাম করার প্রয়োজন ছিলো।
এটাও মাথায় রাখতে হবে যে সহিংসতাকে বিএনপি বা তাদের জোট ‘ওন’ করছে না। বিশেষ করে বিএনপি তো ‘ওন’ করছেই না। বরং বিএনপি বলছে এসব সহিংসতা রাষ্ট্র করছে। সেক্ষেত্রে নাগরিক সমাজ কাকে ব্লেম করবে। তারা কি বিএনপিকে ব্লেম করবে। যদি সেটা করা হয় তাহলে একটা পক্ষপাতমূলক আচরণ করা হবে।
ফলে নাগরিক সমাজ কিন্তু বর্তমান সহিংসতার বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে সংলাপের প্রস্তাব দিয়েছে।
আর আমার মনে হয় সরকার যেহেতু তাদের অবস্থানে অনড় থাকতে চায় আর সে কারণেই তারা নাগরিক সমাজের প্রস্তাবকে প্রত্যাখ্যান করেছে।
প্রশ্ন: এদিকে, চলমান সংকট সমাধানে বিএনপি জাতিসংঘের সহায়তা চেয়েছে। তাদের এই আহ্বানকে আপনি কিভাবে মূল্যায়ন করবেন আর জাতিসংঘের সহায়তায় কি সমস্যার সমাধান হবে?
আমেনা মহসীন: দেখুন আসলে জাতিসংঘকে দিয়ে বিএনপি একটা প্রেসার ক্রিয়েট করতে চায় সরকারের বিরুদ্ধে এবং জাতিসংঘ হয়তো একটা প্রেসার ক্রিয়েট করতে পারে বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে। তবে আমি মনে করি এখানে কিন্তু অনেকগুলো ফ্যাক্টর বিএনপির বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছে। অন্যতম যে বিষয়টি সেটি হচ্ছে জাতিসংঘ বা পশ্চিমা বিশ্ব সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে।
দ্বিতীয় বিষয়টি হচ্ছে গ্লোবালাইজ পৃথিবীতে আমরা উন্নয়নের ওপর জোর দিচ্ছি। সেখানে বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিএনপির পক্ষে যুক্তি দাঁড় করানোর চান্সেস কম আছে। তবে তারা মানবাধিকারের ব্যাপারগুলো সামনে নিয়ে আসতে পারে। সবমিলেয়ে বলতে গেলে আমার মনে হয়, জাতিসংঘ বিএনপির ওপরও জোর দেবে যে সহিংসতা কমাতে হবে এবং সংলাপ ও আলাপ-আলোচনার ব্যাপারে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ওপরও জোর দেবে। তবে এর মাধ্যমে বর্তমান সংকটের সমাধান হবে এমনটি আমি মনে করি না। এটার সমাধান ভেতর থেকে আসতে হবে।
জাতিসংঘের কি ধরনের ক্ষমতা আছে সেটা তো আমাদেরকে দেখতে হবে। আর বিএনপির কাছে অস্ত্রগুলো খুব কমই আছে। তারা যখন ভেতর থেকে পারছে না তখন তারা তো চাইবেই এটাকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য। তারা সেরকম একটা উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু আমি মনে করি না, বিএনপিও মনে করে না যে জাতিসংঘ এ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করবে এবং তার মাধ্যমে সমাধান হবে।
প্রশ্ন: প্রসঙ্গক্রমে জানতে চাইব, যদি জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় কোনো সমাধান না হয় তাহলে তার পরিণতি কী হবে?
আমেনা মহসীন: জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় যদি কোনো সমাধান না হয় তাহলে এর পরিণতি হবে খুবই ভয়াবহ। এখনই আমরা যে জায়গায় অবস্থান করছি সেটা দেশের জন্য কোনো স্বাভাবিক জীবন না। পুরো দেশ অবরুদ্ধ হয়ে আছে, গোটা দেশ পুড়েছে ফলে এর পরিণতি তো খুবই খারাপ। পরিণতির ব্যাপারে কয়েকটি সিনারিও বলতে পারি।
সবাই বলে তৃতীয় শক্তি আসতে পারে। আবার তৃতীয় শক্তি হিসেবে মনে করা হয় ক্যান্টনমেন্ট। তবে আমার মনে হয় না বাংলাদেশে আবার ক্যান্টনমেন্ট হস্তক্ষেপ করবে। সেটা হওয়া উচিতও না আমাদের কাম্যও না। আমরা আবার এটাও দেখি যে সরকার বিভিন্ন রকমের সুযোগ সুবিধা দিয়ে মিলিটারিকে সন্তুষ্ট রেখেছে। তারপর সেনাবাহিনীর একটি বিশেষ ইন্টারেস্ট রয়েছে সেটা হচ্ছে তারা জাতিসংঘে যায়। আর যদি আর্মি এখানে চলে আসে তাহলে তারা আর জাতিসংঘের শান্তি মিশনে যেতে পারবে না।
আবার আমরা গত কয়েকদিন ধরে দেখছি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বলছে বিএনপি একটি সন্ত্রাসী দল। তাছাড়া প্রধানমন্ত্রী বললেন, জনগণ চাইলে বিএনপিকে নিষিদ্ধ করা হতে পারে। এখন যদি বিএনপিকে নিষিদ্ধ করে দেয়া হয় তাহলে তার ফল কী হবে? তাতে কি বর্তমান সমস্যার সমাধান হবে? তাতে কখনই সমস্যার সমাধান হবে না।
আমরা জানি ১৯৭১ সালে জামায়াতে ইসলামীর ভূমিকা কি ছিল, তারপরও তাদেরকেই সরকার নিষিদ্ধ করেনি। আর যদি সরকার এসব করে তাহলে সন্ত্রাস দিন দিন আরো বাড়বে।
বর্তমান অবস্থা নিয়ে আমি বারবার একটা কথা বলছি সেটা হচ্ছে বাংলাদেশের বর্তমান সমস্যাটি রাজনৈতিক। আর তারই উপসর্গ হিসেবে আমরা আইন শৃঙ্খলার অবনতি দেখছি। আর যেহেতু এটা রাজনৈতিক সমস্যা সে কারণে রাজনৈতিকভাবে এটার মোকাবেলা করতে হবে। আর যদি বর্তমানের মতো করে দেশ শাসন করতে চায় তাহলে গুপ্তহত্যা, সন্ত্রাস এগুলো দিন দিন আরো বাড়বে এবং সেটাকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে না।
প্রশ্ন: বাংলাদেশের চলমান আন্দোলনে ব্যাপক মাত্রায় সহিংসতা হচ্ছে এবং মানুষ মারা যাচ্ছে অনেক। এর আগে কোনো আন্দোলনে এত বেশি মানুষ হতাহত হয়নি। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে ক্রসফায়ার। এসব হত্যাকাণ্ড বন্ধের উপায় কী বলে আপনি মনে করেন?
আমেনা মহসীন: এসব হত্যাকাণ্ড বন্ধের উপায়টা তো আসলে খুবই সহজ। এখানে দু’পক্ষকেই ছাড় দিতে হবে। খালেদা জিয়াকে এবং বিএনপিকে বুঝতে হবে দেশকে অবরুদ্ধ রেখে তারা জনগণের কাছে যেতে পারবে না, এখানে জনসম্পৃক্ততা থাকবে না।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগকেও মাথায় রাখতে হবে তারা গায়ের জোরে দেশ শাসন করতে পারবে না। এখানে যেমন একদিকে বিএনপির বিপক্ষে জনমত চলে যাচ্ছে একইভাবে আওয়ামী লীগের বিপক্ষেও তো যাচ্ছে। তারা নির্বাচনমুখী দল তাদেরকে এসব বিষয় মাথায় রাখতে হবে।
আমরা এ ধরনের দলগুলোকে কিভাবে সমর্থন জানাবো। যেসব রাজনৈতিক দলের জনগণের প্রতি বিন্দুমাত্র শ্রদ্ধা নেই। একটা দল ক্ষমতাকে আঁকড়ে ধরে রাখতে চাইছে। আরেকটা দল নির্বাচন নির্বাচন করছে। নির্বাচন তো হবেই। আমার মনে হয় নাগরিক সমাজের বিভিন্ন পক্ষ থেকে এ দাবি তুলতে হবে যে আমরা নির্বাচন কমিশনের পুনর্গঠন চাই। এখানে সবকিছুকে সার্বিকভাবে ঢেলে সাজাতে হবে। আমরা জনগণ আমাদের মেনুফেস্টো তাদেরকে দেব। আমি দু’দলের উদ্দেশেই একথা বলছি।
প্রশ্ন: আজকের আন্দোলনের যে কারণ তা নিয়ে সরকার ও বিরোধী পক্ষে দুই রকমের মত রয়েছে। তবে দু’পক্ষই বলছে তাদের দাবি সঠিক। আপনার দৃষ্টিতে আসলে কার অবস্থান সঠিক? একইসঙ্গে জানতে চাইব, চলমান এই আন্দোলনের পরিণতি কী হতে পারে?
আমেনা মহসীন: দেখুন, আপনার এ প্রশ্নের কোনো হ্যাঁ বা না উত্তর নেই। আমার বিশ্লেষণ হচ্ছে, দু’পক্ষই তারা যে অবস্থান নিয়েছে তাতে যথেষ্ট যুক্তি আছে।
যদি বলা হয়, কেয়ারটেকার সরকার বাতিলের বিরুদ্ধে বিএনপি বর্তমানের এই আন্দোলন করছে। বিএনপির এই অবস্থান ঠিক। কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে বিতর্কিত করেছে বিএনপি এ বিষয়টিও আমাদের মাথায় রাখতে হবে। আর এর পেছনে একটা প্রেক্ষাপট রয়েছে। ইয়াজউদ্দিনের সময় আমরা দেখেছি প্রধান বিচারপতির বয়স বাড়ানো হলো অথচ সেটার কোনো প্রয়োজন ছিল না।
আমার মনে হয় বর্তমান পরিস্থিতির জন্য দু’পক্ষই দায়ী। তবে পরস্পরের প্রতি ব্লেম-গেম দিয়ে কোনো লাভ নেই। কোনটা সঠিক কোনটা বেঠিক সেটা বলেও লাভ নেই। কারণ দু’পক্ষের মধ্যে সঠিকও আছে বেঠিকও আছে।
তবে এই মুহূর্তে নির্বাচন হলেই তো আর সব সংকটের সমাধান হচ্ছে না। নির্বাচনের আগে ফর্মুলা বের করতে হবে কিভাবে আমরা নির্বাচন করব। আর নির্বাচনের পরে আমরা কী ধরনের সংবিধান চাই।
আর বর্তমানে যা হচ্ছে সেটাকে আন্দোলন বলব না অন্য কী বলব সেটাও আমি জানি না। এটাকে আমি আন্দোলন বলছি না, আমি বলছি এটা রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি। এটাকে কিভাবে মুভমেন্ট বলা যাবে সেটা একটা প্রশ্ন। কারণ যেখানে এত মানুষ পুড়ে মারা যাচ্ছে। তাছাড়া আন্দোলনে বিভিন্ন রূপরেখা থাকে। এখানে তো সেগুলো নেই। বিএনপি ক্লেম করতে পারে যে তারা একটা রাজনৈতিক আন্দোলন করছে এবং তারা কিছু কর্মসূচি দিয়েছে। রাজনৈতিক আন্দোলন হলে সেখানে আমরা ভেঙে ভেঙে দেখতে চাই আরো কী কী দাবি তাদের রয়েছে। সরকার পতনের একটা দাবি নিয়ে তো কেউ আন্দোলন হতে পারে না।
স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে যখন আন্দোলন হয়েছিল সেটা ছিল আদর্শের দ্বন্দ্ব। তবে বর্তমানের দুটি বড় দলের মধ্যে আমি তেমন কোনো আদর্শিক দ্বন্দ্ব দেখতে পাই না।
বর্তমান পরিস্থিতির পরিণতিকে আমি যদি দীর্ঘমেয়াদে দেখতে চাই তাহলে দেখব—আমাদের রাজনীতির প্রতি মানুষের আস্থা হারিয়ে যাচ্ছে। দেশে বিরাজনীতিকরণ চলছে।
একটা বিষয় লক্ষ্য করেন ভারতে আম আদমি পার্টি ক্ষমতায় এলো। অথচ আমাদের দেশে একটা তৃতীয় ফোর্স আসছে না! কারণ জনগণ রাজনীতিকে পছন্দ করে না। বাংলাদেশে বর্তমানে যে ধরনের রাজনীতি চলছে তাকে মানুষ পছন্দ করছে না। বর্তমান যুব সমাজ এই রাজনীতি চাচ্ছে না। ফলে আমরা আদর্শ বিবর্জিত একটি দেশে পরিণত হতে যাচ্ছি।
দেশে যেসব অস্বাভাবিক মৃত্যু ঘটছে তা আমাদের গা-সওয়া হয়ে যাচ্ছে। আমরা এগুলো মেনে নিয়েই চলছি। ফলে আমরা আদর্শ বিবর্জিত জাতিতে পরিণত হতে যাচ্ছি। আর এর দায় বাংলাদেশের বড় দুটি দলকেই নিতে হবে।
আর সবচেয়ে ভয়াবহ যে বিষয়টি সেটা হচ্ছে— এখানে উগ্রবাদী এবং মৌলবাদী শক্তি ভীষণভাবে শক্তিশালী হয়ে যাচ্ছে। আর সেটাকে না বিএনপি সামাল দিতে পারবে না আওয়ামী লীগ সামাল দিতে পারবে।
সূত্র: রেডিও তেহরান