ডেস্ক রিপোর্ট: দেশে চলমান রাজনৈতিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে সরকারের প্রতি কড়া হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন জাতিসঙ্ঘ মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশন। কমিশনের বিবৃতিতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সঙ্কটের শান্তিপূর্ণ সমাধানে ব্যর্থতার জন্য গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে অবিলম্বে সঙ্ঘাত বন্ধের আহ্বান জানানো হয়েছে। একই সাথে কমিশনের বিবৃতিতে বিরোধী নেতৃবৃন্দকে গ্রেফতার এবং আটকের ক্ষেত্রে সরকার যেন স্বেচ্ছাচারিতার আশ্রয় না নেয় সে বিষয়ে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়েছে।
পাশপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করতে গিয়ে যেসব পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে সে ক্ষেত্রে যেন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের লঙ্ঘন না ঘটে সে বিষয়েও সরকারকে সতর্ক করা হয়েছে কমিশনের পক্ষ থেকে।
গতকাল জেনেভায় জাতিসঙ্ঘ মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনের মুখপাত্র রাভিনা শামদাসানি বাংলাদেশের অব্যাহত রাজনৈতিক সঙ্ঘাত বিষয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। এর আগে সকালে বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক সঙ্কট নিয়ে জাতিসঙ্ঘ মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের পক্ষ থেকে বিবৃতি দেয়া হয়েছে।
কমিশনের পক্ষ থেকে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলা হয়েছে, ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে যে নৈরাজ্যকর এবং ধ্বংসাত্মক পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছিল বাংলাদেশ আবার সে পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে যাচ্ছে। এতে বলা হয়, ২০১৩ সালের শেষ দিকে নির্বাচনের প্রস্তুতি সামনে রেখে বড় রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মীরা নিজেদের মধ্যে এবং আইনশ্ঙ্খৃলা বাহিনীর সাথে সঙ্ঘাতে লিপ্ত হয়। এতে অনেকের মৃত্যু, অসংখ্য মানুষ আহত এবং বিপুল ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটে।
সকালে জাতিসঙ্ঘ মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার কর্তৃক জারি করা প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বর্তমান সঙ্ঘাতের পেছনের কারণ উল্লেখ করে বলা হয়, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি গত ৫ জানুয়ারি সারা দেশে অবরোধের ডাক দিলে বর্তমান সঙ্ঘাত শুরু হয়। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি এবং সে উপলক্ষে তারা চলমান অবরোধের ডাক দেয়। বিবৃতিতে আরো বলা হয়, সরকারের পক্ষ থেকে বিরোধীদের সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে এবং প্রধান নেতৃবৃন্দকে প্রতিবাদ সমাবেশে যোগ দেয়ার ক্ষেত্রে আটকে দেয়া হয়েছে। এরপর থেকে সঙ্ঘাতে এক ডজনেরও বেশি মানুষ নিহত এবং অনেকে আহত হয়েছেন। অনেক বিরোধী নেতৃবৃন্দকে আটক করা হয়েছে।
কমিশনের বিবৃতিতে অবশ্য নির্বিচারে গাড়িতে আগুন দেয়ার ঘটনায়ও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। গাড়িতে নির্বিচার হামলার বিষয়ে বলা হয়, সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার মধ্যে গত মঙ্গলবার একটি গাড়িতে আগুন দেয়ায় এক শিশুসহ চারজন পুড়ে মারা যায়। একই দিন বিএনপির এক উপদেষ্টাকে গুলি করা হয় এবং তার গাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়। কমিশনের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের দুই প্রধান রাজনৈতিক দল শান্তিপূর্ণভাবে তাদের বিরোধ মিটমাটে ব্যর্থ হওয়ার পর যেভাবে সহিংসতা বাড়ছে, তা খুবই উদ্বেগজনক।
প্রেসব্রিফিংয়ে হাইকমিশনারের মুখপাত্র শামদাসানি বলেন, বাংলাদেশে বিদ্যমান রাজনৈতিক সহিংসতার বিষয়ে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। সহিংসতায় ইতোমধ্যে অনেক মৃত্যু, আহত হওয়া এবং ধ্বংসাত্মক ঘটনা ঘটেছে এবং পরিস্থিতি ক্রমে জটিল হচ্ছে।
মুখপাত্র বলেন, আমরা সব রাজনৈতিক দলের প্রতি সংযম প্রদর্শন এবং অবিলম্বে সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জানাচ্ছি। হত্যার পেছনে সরকার বা সরকারের বাইরে যারাই থাক আমরা চাই কর্তৃপক্ষ অবিলম্বে এসবের নিরপেক্ষ এবং কার্যকর তদন্তের উদ্যোগ নেবে।
বিরোধী দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের গ্রেফতার এবং আটকের ক্ষেত্রে সরকার যেন স্বেচ্ছাচারিতার আশ্রয় না নেয় এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নেয়া পদক্ষেপে যেন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের লঙ্ঘন না ঘটে সে জন্য সরকারের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয় কমিশনের পক্ষ থেকে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনে শান্তিপূর্ণ সভাসমাবেশ, চলাফেরা এবং বাকস্বাধীনতার নিশ্চয়তা বিধান করা হয়েছে।