নিউজ ডেস্ক: আসামীকে রিমান্ডের নামে নির্যাতনের ঘটনায় সিলেট কোতোয়ালী থানার ওসি (তদন্ত) মনিরুল ইসলাম ও এস আই হাসিনা আক্তার আখিকে ক্লোজড করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে এ দু’কর্মকর্তাকে কোতোয়ালী থেকে ডিসি (উত্তর) কার্যালয়ে ক্লোজড করা হয়। কোতোয়ালী থানার সহকারী পুলিশ কমিশনার সাজ্জাদুল আলম এর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, একটি অপহরণ মামলায় গ্রেফতার হওয়া নার্স অনিতা ভট্টাচার্য্যকে ৩ দিনের রিমান্ডে নিয়ে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করে কোতোয়ালী থানা পুলিশ। রিমান্ডে পুলিশের নির্যাতনে অনিতা গুরুতর আহত হন বলে অনিতার স্বামী কিশোর ভট্টাচার্য গত সোমবার নগর পুলিশের কমিশনার নিকট লিখিত অভিযোগ দেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিষয়টির তাৎক্ষণিক তদন্তে নামেন উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ। প্রাথমিক তদন্তে নির্যাতনের সত্যতা পাওয়ায় গতকাল দুপুরে অভিযুক্ত পরিদর্শক (তদন্ত) মনিরুল ইসলাম ও এস আই হাসিনা আক্তার আখিকে ক্লোজড করা হয়।
সূত্র জানায়, অনিতার স্বামী কিশোর নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে অভিযোগে বলেন, তার শ্রীমঙ্গলের (আলিসাকুল) বাড়ী থেকে স্ত্রী অনিতাকে কোতোয়ালী থানার একটি মামলায় গ্রেফতার করে পুলিশ। গত ৭ নভেম্বর অনিতাসহ কিশোর ও তাদের সন্তানকে পুলিশ এস এম পির কোতোয়ালী থানায় নিয়ে আসে। ৮ নভেম্বর পুত্র ও ৯ নভেম্বর কিশোরকে পুলিশ ছেড়ে দিলেও অনিতাকে আদালতে উপস্থাপন করে ৫ দিনের রিমান্ড চাইলে আদালত মহিলা পুলিশের উপস্থিতিতে হাইকোর্টের নির্দেশনা মোতাবেক জিজ্ঞাসাবাদ করতে ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
ঐদিনই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই সিরাজুল ইসলাম অনিতাকে পুলিশ হেফাজতে কোতোয়ালী থানায় জিজ্ঞাসাবাদ করতে নিয়ে যান। জিজ্ঞাসাবাদে কোন তথ্য না পেয়ে বাদী পক্ষ কর্তৃক প্রভাবিত হয়ে থানার ওসি (তদন্ত) মনিরুল ইসলাম ও এসআই হাসিনা আক্তার আখি অনিতার উপর শারিরীক নির্যাতন শুরু করেন।
ওসি (তদন্ত) মনির অনিতার গলার ভেতরে পাইপ ঢুকিয়ে মদ খাওয়ায়, পায়ের বুট দিয়ে গলায় চাপ দিয়ে অহরণের ঘটনা স্বীকার করতে বলেন। তিনি বলেন, স্বীকারোক্তি না দিলে ধর্ষণ করে অপহরণের স্বাদ মিটিয়ে দেব। একই ভাবে এসআই আখি আসামী অনিতার গোপনাঙ্গে লাঠি ঢুকিয়ে দেয়। এছাড়াও তাকে নানাভাবে বর্বরোচিত নির্যাতন করা হয়।
এভাবে ৩ দিনের নির্যাতনে অনিতা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে ১২ নভেম্বর তাকে আদালতে নিয়ে আসলে কোর্ট পুলিশ অনিতাকে না রেখে চিকিৎসা দেয়ার জন্যে বললে সন্ধ্যায় অনিতাকে ওসমানী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসকের দেয়া পরামর্শের পরও প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে অনিতাকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়।
প্রথমে জেল কর্তৃপক্ষ অসুস্থ আসামীকে এভাবে গ্রহণ করতে রাজি না হলেও পরে গ্রহণ করে এবং কারারক্ষীদের প্রহরায় ঐ দিন রাত ৯টায় ওসমানী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ৩ দিন হাসপাতালে চিকিৎসার পর অনিতাকে পুনরায় জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়। ১৬ নভেম্বর পুনরায় অনিতাকে আদালতে সোপর্দ করে ৫ দিনের রিমান্ডের আবেদন করে পুলিশ।
ওসি (তদন্ত) মনির ও এসআই আখির অমানবিক নির্যাতনের কারণে অনিতার অবস্থা বর্তমানে সংকটাপন্ন বলে অভিযোগে বলা হয়েছে। যোগাযোগ করা হলে কোতোয়ালী থানার সহকারী পুলিশ কমিশনার সাজ্জাদুল আলম জানান, অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় অভিযুক্ত দু’জনকে ক্লোজড করা হয়েছে। অভিযোগের তদন্ত চলছে। কোতোয়ালী থানা থেকে দুজনকে ডিসি (উত্তর) অফিসে ক্লোজড করা হয়।
Very bed
Comments are closed.