বেশ কয়েক শ’ গজ দূরে পাড়৷ শক্তির শেষ সীমায় গিয়ে সাঁতার কাটলেও পাড়ে পৌঁছাতে লেগে যাবে অনেকটা সময়৷ কিন্তু অতটা সময় কি পাওয়া যাবে?
পিছনেই তাড়া করে আসছে একটা ‘হোয়াইট শার্ক’। এমন পরিস্থিতিতে বাঁচতে হলে কী করবেন?
‘কষিয়ে একটা ঘুষি মারবেন, সেটাও নাকের ডগায়।’
না, না ফাজলামো না। সত্যি, এমনটাই বলেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার একদল বিজ্ঞানী।
আক্ষরিকভাবেই তাড়া করে আসা হাঙরের নাকে ‘ঘুষি মেরেই’ তাকে নিরস্ত করার কথা ভেবেছেন তারা৷
সমুদ্র সৈকতে কি তাহলে শেষ হতে চলেছে হাঙর বিভীষিকা?
যদিও প্রতি বছর মানুষ যত হাঙরকে হত্যা করে তার তুলনায় অতি সামান্য সংখ্যক হাঙরই মানুষকে আক্রমণ করে৷ তবু দক্ষিণ আফ্রিকা বা অস্ট্রেলিয়ার সৈকতগুলোতে হাঙরের হাতে মানুষের আক্রান্ত হওয়ার খবর প্রতি বছর জায়গা পায় পত্রিকাগুলোতে৷
বিজ্ঞানীরা বলছেন, সমুদ্র সৈকতে হাঙর যে কেবল মানুষকে খাওয়ার জন্যই তাড়া করে আসে তেমনটা নয়৷ অনেক ক্ষেত্রেই সাঁতারু জানতেও পারেন না তিনি হোয়াইট শার্কের কতটা কাছে এসে পড়েছেন৷ এমন পরিস্থিতিতে হাঙরও ভয় পেয়ে অবাঞ্ছিত এই আগন্তুককে কামড়ে দেয়৷
এই কামড়ের উদ্দেশ্য উদরপূর্তি না হলেও, অন্তত চার সেন্টিমিটার দীর্ঘ করাতের মতো ধারালো দাঁতের অধিকারী হাঙর যখন তার প্রচণ্ড শক্তিশালী চোয়াল দিয়ে কোনো মানুষকে কামড়ে দেয়, তখন তার প্রাণ সংশয় হওয়াই স্বাভাবিক৷ হাঙর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই জলচরের বহু প্রজাতির মধ্যে হোয়াইট, টাইগার ও বুল শার্কই সবচেয়ে বিপজ্জনক৷ এই তিন প্রজাতির হাঙরের হাতেই সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানাচ্ছে পরিসংখ্যান৷
পরিত্রাণের উপায় তাহলে কী?
যেভাবে প্রতিদিন প্রশান্ত মহাসাগরে মানুষের রসনাতৃপ্তির জন্য শ’ শ’ হাঙর শিকার চলছে, তাতে মহাসাগরগুলোতে হাঙরের ভবিষ্যৎ এমনিতেই অনিশ্চিত৷ তাই সমুদ্রবিজ্ঞানীদের সাবধানবাণী- ‘সাগরে হাঙর হয়তো বিপজ্জনক৷ কিন্তু, হাঙর ছাড়া সাগর আরো অনেক বেশি বিপজ্জনক।’ সেই কারণেই বিজ্ঞানীরা খুঁজছিলেন এমন এক সমাধানসূত্র ‘যাতে সাপও মরে আর লাঠিও না ভাঙে’৷ এক কথায়, হাঙর না মেরেই মানুষের ওপর হাঙরের হামলা ঠেকাতে৷ এর জন্যই পকিল্পনা ‘হাঙরের নাকে ঘুষি মেরে’ তাকে তাড়িয়ে দেয়ার৷
জীববিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, হাঙরের শরীরের মধ্যে নাক অত্যন্ত সংবেদনশীল৷ হাঙরের নাকে লাগানো থাকে বিশেষ এক ধরনের জেল৷ এই জেল তার শরীর থেকেই নির্গত হয়৷ পানির মধ্যে অতি সামান্য কম্পনও হাঙর টের পায় কেবলমাত্র তার জেল মাখানো নাকের জন্যই৷ এভাবেই শিকারের হৃদস্পন্দনও অনুভব করে তাকে তাড়া করা শুরু করে হোয়াইট, বুল বা টাইগার শার্করা৷
হাঙরের যা বিশেষ শক্তি, তাকেই তাদের দুর্বলতা হিসেবে ব্যবহার করার পরিকল্পনা করেছেন বিজ্ঞানীরা৷ দক্ষিণ আফ্রিকায় একটি সমুদ্র সৈকতের প্রায় এক শ’ মিটার জায়গা বৈদ্যুতিক কেবল দিয়ে ঘিরে ফেলেছেন তারা৷ নির্দিষ্ট দূরত্ব অন্তর এই কেবল পানিতে ভাসিয়ে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে হালকা ইলেকট্রোডের মাধ্যমে৷ এখান থেকে নির্গত মৃদু শক্তির বিদ্যুৎই হাঙরের নাকের এই সংবেদনশীল জেলে বিশেষ অস্বস্তির কারণ হবে বলে আশা করছেন বিজ্ঞানীরা৷
মানুষের জন্য এই বিদ্যুৎ তরঙ্গ আদৌ ক্ষতিকর নয় বলে আশ্বাস দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা৷ কেউ যদি ভুল করে ওই ইলেকট্রোডের ওপরেও হাত দিয়ে ফেলেন, তাহলেও তার কোনো ক্ষতি হবে না বলে জানা গেছে৷
এখনো পর্যন্ত হাঙর তাড়ানোর এই পরীক্ষা একেবারেই প্রাথমিক স্তরে রয়েছে৷ কিন্তু শুরুতেই বেশ কিছুটা সাফল্যের মুখ দেখেছেন বিজ্ঞানীরা৷ দক্ষিণ আফ্রিকার ওই সমুদ্রসৈকতে হাঙরের অন্তত ৫৩টি অনুপ্রবেশ আটকানো গেছে৷ দক্ষিণ আফ্রিকার পরিবেশবিদ অ্যালসন কক জানান, ‘গত এক দশকে এখানে অন্তত ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে হাঙরের দাঁতে৷ এবার হয়তো সেই সমস্যার স্থায়ী সমাধান আসন্ন।’ হাঙর সাধারণত মানুষকে আক্রমণ করে না৷ কিন্তু তবুও হাঙর পাশে নিয়ে সাঁতার কাটতে স্বচ্ছন্দ বোধ করেন না কোনো সাঁতারুই।
সূত্র : ইন্টারনেট