ঢাকা: প্রায় ১৫ ঘণ্টা প্রচেষ্টা চালিয়ে মতিঝিলের দিলকুশার আমানউল্লাহ ভবনের আগুন নিয়ন্ত্রণে এনেছে ফায়ার সার্ভিস। ভয়াবহ এ অগ্নিকাণ্ডে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কাকরছেন সংশ্লিষ্টরা। রোববার ভোর ৫টা ৪০ মিনিটে এ আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। এর আগে শনিবার বিকেল ৩টা ১০ মিনিটে ৬৩ নম্বর দিলকুশার ওই বহুতল ভবনের দ্বিতীয়তলায় অবস্থিত বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিরিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি লিমিটেড (বিআইএফসিএল) থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়।
ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ জানান, ভবনের দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ তলায় ছড়িয়ে পড়েছিল আগুন। ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে বিস্তারিত এখনো জানানো সম্ভব হচ্ছে না। আগুন নেভাতে গিয়ে ফায়ার সার্ভিস সদর দফতরের সহকারী পরিচালক রফিকুল ইসলামসহ চারজন অসুস্থ হয়েছেন বলে জানা গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিকেল ৩টা ১০ মিনিটের দিকে ভবনটির পিছনের নুরু বস্তির বাসিন্দারা দেখতে পান দ্বিতীয় তলা থেকে প্রচুর পরিমাণে ধোঁয়া বের হচ্ছে। এ সময় তারা আগুন আগুন বলে বস্তি থেকে বের হয়ে গিয়ে ওই ভবনের নিরাপত্তা কর্মীদের বিষয়টি জানান। তারা ফায়ার সার্ভিসে খবর দেন। এছাড়া আগুনের খবর পেয়ে ভবনটির পেছনে ইউনুস সেন্টার কর্তৃপক্ষ তাদের নিজস্ব আগুন নির্বাপন ব্যবস্থা দিয়ে পেছন দিক থেকে আগুন নেভানো কাজ করতে থাকে। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা যোগ দেন।
ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ জানান, অতিরিক্ত ধোঁয়ার কারণে আগুন নিভাতে হিমশিম খেতে হয়েছে। যার কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে অনেক বেগ পোহাতে হয়েছে। ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা রি ম্যাথোড পদ্ধতিতে আগুন নেভানোর কাজ করেছে। এছাড়া ধোঁয়া নির্গত করার জন্য স্মোক ইজেক্টর ব্যবহার করা হয়।
ইউনুস সেন্টারের সাউথ ইস্ট ব্যাংকের টেকনেশিয়ান হাবিবুর রহমান জানান, বিকেল ৩টা ১০ মিনিটের দিকে আগুন আগুন শব্দ পেয়ে তিনি নিজে নেমে দেখেন ভবনটির পেছনের দ্বিতীয় তলা থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে। পরবর্তীতে ইউনুস সেন্টারের ফায়ার ম্যান ও অন্যরা মিলে সেন্টারের সরঞ্জাম দিয়ে পিছনের দিক দিয়ে আগুন নেভাতে চেষ্টা করেন।
ইন্ডাস্টিরিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানির চিফ ফিন্যান্সিয়াল অফিসার আহসানুল বারী সাংবাদিকদের জানান, এটা মূলত একটি লিজিং কোম্পানি। তাদের মধ্যস্ততায় শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোতে লোন দেয়া হয়। ওই ভবনে দ্বিতীয় ছিল তাদের হেড অফিস। অফিসে প্রচুর ফিন্যান্সিয়াল ডকুমেন্ট ছিল বলে দাবি করেন তিনি।
তিনি জানান, শুক্র ও শনিবারে তাদের অফিস বন্ধ থাকে। কিন্তু শনিবার অফিসের বিশেষ কাজ থাকায় তারা কয়েকজন বেলা ১১টা থেকে দুপুর পৌনে ১টা পর্যন্ত অফিসিয়াল কাজ শেষে বাসায় চলে যান। পরবর্তীতে বিকেলে আগুনের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। তবে তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানাতে পারেননি তিনি। দ্বিতীয় তলায় তাদের ওই অফিসের সব কিছুই পুড়ে গেছে।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক (অপারেন্স অ্যান্ড মেনটেইন্যান্স) মেজর শাকিল নেওয়াজ বলেন, আমরা বিকেল ৩টা ২২ মিনিটে আগুনের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসি। ভবনের অফিসগুলোতে রয়েছে পারটেক্স ও থাইগ্লাসের ভারী ডেকোরেশন। এগুলো অত্যন্ত দাহ্যপদার্থ হওয়ায় সৃষ্টি হয় তীব্র তাপ এবং ধোঁয়ার। অতিরিক্ত ধোঁয়া বের করে দেয়ার জন্য প্রথমে ভবনের থাই গ্লাসগুলো ভেঙ্গে দেয়া হয় এবং স্মোক এজেক্টর ব্যবহার করে রাতভর বিভিন্ন কৌশলে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে।
তিনি বলেন, অফিসটির ভেতরে বিভিন্ন উপকরণ পুড়ে যাওয়ায় ধোঁয়া বিষাক্ত হয়ে গেছে। এ কারণে ভেতরে প্রবেশ করে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা কঠিন হয়ে পড়ে। প্রথমে আমরা অফেন্সিভওয়েতে কাজ করি। পরবর্তীতে ডিফেন্সিভওয়েতে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালাই।
এদিকে আগুনের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন ওই ভবনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ভিড় জমায় উৎসুক জনতা। ভবনটিকে ঘিরে রাখে র্যাঘব-পুলিশের সদস্যরা। ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের সাথে আগুন নেভাতে ফায়ার সার্ভিসের ভলান্টিয়ার, রেডক্রিসেন্টের সদস্য ও স্থানীয় ভবনের লোকজন অংশ নেন।