অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের প্রধান শর্ত

0
745
blank
blank

মিনা ফারাহ: ছোটবেলায় বলতাম, ইফ যদি ইজ হয়, বাট কিন্তু হোয়াট কী? এর কোনো ব্যাখ্যা আসলেই নেই। জানতে চাওয়াটাও মূর্খের কাছে প্রশ্ন ফাঁসের কারণ জানতে চাওয়ার মতো। প্রাচীনকাল থেকেই গর্দভ একটি অতি নিরীহ প্রাণী। পিঠের ওপর হাজার গুণ অধিক বোঝা তুলে দিলেও প্রতিবাদ করে না। এই সম্প্রদায়ের ওপর বেজায় চটেছেন হাইকমান্ড। তবে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের প্রধান শর্ত, বেছে বেছে অংশগ্রহণ থেকে মাইনাস করা কিনা, বললেন না। ওবায়দুল কাদেরদের বিষয়টি এরকমÑ হবে… হচ্ছে… তবে… হয়তো…।

গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের গ্রহণযোগ্য উদাহরণ। অর্থ পাচারের জন্য মোর্শেদ খানের মামলার তদন্ত চলবে কিন্তু জাফরুল্লাহর অর্থ চুরির গন্তব্যস্থল পানামার ব্যাংকের নাম মুখে আনাও নিষেধ! ঠিক যেমন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আনা মামলাগুলো থেকে শতভাগ খালাস নিজেরা; কিন্তু জেলে নিয়ে বিদায় করা ব্যবস্থা প্রতিপক্ষকে। সিইসি সাফ বলে দিলেন, ‘নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণের বিষয়ে উদ্যোগ নেয়া হবে না’ (মানবজমিন ৮ মার্চ)। এর পরও ‘গর্দভ সম্প্রদায়’ চুপ থাকবে না কেন? তবে হাত-পা বেঁধে সাগরে ডুবিয়ে দেয়ার পরও, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন বলতে বিএনপি মহাসচিব কী বোঝেন, উত্তরটি ‘ইফ যদি ইজ হয়’-এর মতো। আজকের বিষয়, লালকেল্লার সবুজ সঙ্কেতের পরিপ্রেক্ষিতে বিজেপি বনাম কংগ্রেস এবং আওয়ামী লীগ।

গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ‘সময়’ নিয়ে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা। সাত বছরেও পাওয়া গেল না ৩০ সেকেন্ড সময়? অথচ ৯ মাসেই পাকিস্তানিরা কাৎ। ফেসবুক আবিষ্কার ১০ মাসে। গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য আরো কয়শ’ কোটি ঘণ্টা লাগতে পারে, কেউ কী জানে? তবে একমাত্র দিল্লির লালকেল্লাই লালবাতি-সবুজবাতি জ্বালানোর দুর্লভ ক্ষমতাধারী। বাংলাদেশীরা যেন নিতান্তই অপেরা হলের দর্শক।
সুতরাং খালেদা-তারেককে বাদ দিয়েই নির্বাচন করা হতে পারে। কেল্লার শর্ত একটাই : ‘ভারতের সব স্বার্থ পূরণ সাপেক্ষে বিএনপির নামটা আবছা হলেও ব্যালট বাক্সে রাখতে হবে।’ সেই মাফিক কমিশনের আইনভঙ্গ করে, নৌকায় ভোট চেয়ে মাঠ চষে বেড়াচ্ছে একজন, প্রতিপক্ষের অবস্থা ফেরারি আসামির চেয়েও খারাপ। খালেদার অবস্থা নিয়ে শঙ্কিত হওয়ার একটা কারণ, যেখানে এবং যে পরিস্থিতিতে গুপ্তধনের মতো লুকিয়ে রেখেছে। উপযুক্ত চিকিৎসাতেও অনুমতি নিতে হবে? এ ধরনের ‘গ্রহণযোগ্য’ নির্বাচন শুধু বাংলাদেশ কেন, পৃথিবীর ইতিহাসে একটাই। ২০১৮ সালে রোগী আবারো মারা গেলেও কিন্তু অপারেশন হবে সাকসেসফুল।

ভবিষ্যতে কারামুক্ত হলেও খালেদার অবস্থা হতে পারে ‘ভেজিটেবল রোলের’ মতো। রোলের ওপরে কিছু দিন মুখরোচক ক্যাচাপ লাগাবে মিডিয়া এবং অন্যরা, এরপর হয়তো ভুলে যাবে। আশঙ্কা হয়, মাইনাস ওয়ান ফর্মুলায় নির্বাচনের পথেই এগুচ্ছে দেশ। ভারতীয় মিডিয়ার মতে, খালেদাকে বেশি দিন জেলে রাখলে পরিস্থিতি অশান্ত হবে। তা হলে, বাড়া ভাতে ছাই পড়বে।

২০১১ সালের জুলাই মাসে ফর্মুলাটির আবিষ্কার। ‘সব দল’ বলতে, সব নিবন্ধিত দল নয়। বরং কোনো কোনো নিবন্ধিত ও জনপ্রিয় দলকে মাইনাস করতেই দিনদুপুরে ১৫তম সংশোধনীর দুঃসাহস। লালকেল্লার চিফ আর্কিটেক্ট প্রণবের সবুজ সঙ্কেত ছাড়া এ কাজ তখন অসম্ভব। ওই সঙ্কেত এতটাই শক্তিশালী, যাকে মঙ্গল গ্রহে নাসার নভোযান অবতরণের সঙ্গে তুলনা করা যায়। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের গালেও জুতা মারতে ছাড়ল না।

জামাইবাবুদের সরাসরি হস্তক্ষেপে আপত্তি নেই কিন্তু বার্নিকাট বললেই তেলে-বেগুনে আগুন। একবার বলা হয়, ওবামা ক্ষমতায় থেকে নির্বাচন করলে আমরা কেন করব না? আবার বলা হলো, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন নিয়ে আমেরিকার এত মাথাব্যথা কেন? তাদের নির্বাচনও তো প্রশ্নবিদ্ধ।’ অর্বাচীন ছাড়া এসব প্রলাপ কেউ আওড়ায়? পরিবর্তিত আওয়ামী লীগ জানে না, আসলেই কী চায়। ৩৭ বছরের প্রবাসী জীবনে যতবার ভোট দিয়েছি, ওয়াশিংটন কেন, ৫ জানুয়ারির আগে বাংলাদেশেও দেখিনি, প্রধান বিরোধী নেতাকে জেলে ভরে কেউ নির্বাচন করার সাহস দেখান। এমনকি, পাকিস্তানিরাও করেনি। একমাত্র পুতিনই পারে, যা আওয়ামী লীগ পারল।
ঘরে বসে কুপির আলোয় বিশ্ব দেখার খায়েশ অনেকেরই। বিশ্ব দেখতে হলে, বিশ্বভ্রমণেই যেতে হবে। বিশেষ একটি দলের সমর্থক মিডিয়ার যারাই সিএনএনের আমানপোর কিংবা ভারতের রিপাবলিক ওয়ার্ল্ডের অর্ণব গোস্বামী হতে গিয়ে গলদঘর্ম, ‘হোস্ট’ হওয়ার একমাত্র যোগ্যতা কি চড়া গলা? বেশির ভাগই সাংবাদিকতার নামে ভুয়া সংবাদের বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন। পার্লামেন্ট দখলদারদের সাথে এদেরও জবাবদিহিতা থাকা উচিত।

পার্লামেন্ট দখলের অংশ হিসেবে আবারো পুরান কৌশল নিয়ে নতুন পোশাকে এরশাদ গং। বলেছিলেন, কিছুতেই নির্বাচনে যাবেন না। এবার বলছেন, ‘জাতীয় পার্টি কোন দল, রওশন তা জানে না’। সোশ্যাল মিডিয়ায় মন্তব্য, ‘সারা রাত রামায়ণ শুনে সকালে রওশন জিগায়Ñ সীতা কার বাপ?’ পাঁচ বছর পর আত্মপরিচয় খোঁজা জাতীয় পার্টি কি তাহলে বেজন্মা দল? (প্রথম আলো, ৩ ফেব্র“য়ারি, ঢোল-কর্তাল হাতে এরশাদ-রওশন)।
সুতরাং ‘এবার খালেদা জিয়া কোথায়’ বক্তব্যে নিশ্চিত হওয়া গেল, এই দফায় বিদেশীরা কিছুই করবেন না। অতীতে দেখেছি, এ ধরনের পরিস্থিতিতে, বিদেশী রাষ্ট্রদূতদের প্রতিক্রিয়া, যা তাদের নিজ নিজ রাষ্ট্রেরই প্রতিক্রিয়া। দেখেছি জাতিসঙ্ঘের প্রতিক্রিয়াও। বরং অবৈধ সরকারকেই রেকর্ডমাত্রায় সমর্থন দিচ্ছে, যদিও ৫ জানুয়ারিকে স্বীকার করেনি পশ্চিমারা। অর্থনীতিকে নির্বাচনের সাথে যুক্ত করার ফসল এটা। আমাদের কাজ কি শুধুই অভিযোগ করা? ক্ষমতাসীনদের কাজ কি শুধুই অভিযোগ তৈরি করা? এটাই ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের বৈজ্ঞানিক ফর্মুলা।

লালকেল্লার কুমির
জাফর ইকবালের ওপর হামলার পর, জঙ্গি ইস্যুটাও প্রাসঙ্গিক। কারণ জামায়াতসহ বিভিন্ন সংগঠনকে জঙ্গি বানিয়ে সংসদসহ সবকিছুই এক ধরনের ব্যক্তিমালিকানায় নেয়া হলো।
এর কারণ, কংগ্রেসের কাটা খালে বিধ্বস্ত বাংলাদেশ, সুবিধাভোগী বিজেপি। মোদির সরকার এখন কংগ্রেসের কাটা খালের বিশাল কুমির। খাল কাটবেন কিন্তু কুমির আসবে না? গুজরাট এবং মিয়ানমার গণহত্যায় যাদের নাম, তারা বাংলাদেশের বন্ধু কোন লজিকে! ট্রেনে বিশেষ গোষ্ঠীকে পুড়িয়ে মারার অভিযোগে, নির্বাচনের আগ পর্যন্ত ওয়াশিংটনের ‘কালো তালিকা’ভুক্ত মোদিকে ভিসা দেয়া হতো না। জেতার সাথে সাথে ‘কালো তালিকামুক্ত’। সু চির সন্ত্রাসী কার্যক্রমের বিরুদ্ধে উত্তাল বিশ্ব। কেন এদের সাথে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ ঘোষণা করা ঢাকার বন্ধুত্ব? প্রশ্নগুলো নিতান্তই ‘আধ্যাত্মিক’, ক্রিমিনালদের কাছে যা মূল্যহীন। দিল্লির সবুজ সঙ্কেত ছাড়া ক্ষমতায় যাওয়া সম্ভব নয়। আবার গুজরাট গণহত্যাকেও সন্ত্রাস বলে স্বীকার করা হবে না। আট লাখ রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে ঠেলে দেয়া সু চিকেও সরাসরি সন্ত্রাসী বলায় আপত্তি। গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মতোই জঙ্গিবাদের বৈজ্ঞানিক ফর্মুলা নিয়েও দারুণ বিভ্রান্ত জাতি।

৫ জানুয়ারির মতোই আবারো সক্রিয়, ঢাকা-দিল্লি-কলকাতার মিডিয়াগুলো লিখছে, ‘দিল্লি খালেদাকে ছাড়াই নির্বাচনের সবুজ বার্তা দিয়েছে।’ ফলে অতি আত্মবিশ্বাসী আওয়ামী লীগও দানবীয় শক্তি নিয়ে মাঠে। নির্বাচনের বছরে দফায় দফায় হেভিওয়েটদের দিল্লি সফর সম্ভবত মাইনাস-১ ফর্মুলারই বার্তা। ভারতীয় মিডিয়ায় আমাদের নির্বাচন নিয়ে এত মাথাব্যথা, যেন তাদেরই নির্বাচন!
ভেবেছিলাম, প্রণবের পথ ত্যাগ করবেন জনগণের ভোটে নির্বাচিত মোদি, কিন্তু না। যদিও এই দফায় অতীতের মতো সুজাতা সিংকে পাঠিয়ে নির্বাচন লণ্ডভণ্ড করার দৃষ্টান্ত নেই; কিন্তু তার পরেও অগণতান্ত্রিক সরকারকে কেন সমর্থন? কারণ মোদিভাই জানেন, যে কারণে কংগ্রেসকে তিনি বিচারের কাঠগড়ায় তুলেছেন, ৫ জানুয়ারি না হলে, একই কারণে কাঠগড়াতে থাকত এ দেশের আওয়ামী লীগও। কংগ্রেসের তুলনায় এখানকার দুর্নীতিবাজদের করাপশনের তালিকা হ্রস্ব নয় বরং দীর্ঘ। ১৯৯৬ এবং ২০০৮, দুই দফায় যত নৈরাজ্য এবং দুর্নীতি, কংগ্রেসের পাঁচ দশকের সমান।’
ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস ৮ ফেব্র“য়ারি সংখ্যায় জ্যোতি মালহোত্রার পর্যবেক্ষণ, বেগম জিয়াকে টেনে নামালে বাংলাদেশ একটি ভঙ্গুর রাষ্ট্রে পরিণত হতে পারে। ‘প্রকৃত বিরোধী দল ছাড়াই দেশ শাসন করতে চলেছে আওয়ামী লীগ।’ হাসিনাকে ‘শ্রেষ্ঠ বাজি’ বানানো বনাম না বানানো নিয়েও আলোচনা। নেপাল-ভুটানে ব্যর্থতা নিয়েও সতর্ক করা।
ভরত ভূষণের নিবন্ধেও দিল্লিকে একই ভুল না করার পরামর্শ। ভরত লিখেছেন, ‘২০০৭ সালে ক্ষমতায় আসা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে এই মামলাগুলো করা হয়েছিল। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আনা মামলাগুলো আদালতে নিষ্পত্তি হয়; যদিও খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলাগুলো চলতে থাকে, যোগ হয় আরো নতুন মামলা… সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে ফলাফল অনিশ্চিত হতে পারে… বিষয়টিকে শেখ হাসিনা সরকারের প্রতি ভারতের সমর্থন হিসেবেই দেখা হচ্ছে।’
অমর্ত্য সেন থেকে পিনাকরঞ্জন চক্রবর্তী… লিবারেলদের যন্ত্রণায় পারা যাচ্ছে না। (নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় লুটপাট করে শেষ করে দেয়ার জন্য অমর্ত্য সেনকেই দায়ী করলেন বিজেপি নেতা ড. স্বামী।) পিনাকরঞ্জন লিখেছেন, (হিন্দুস্তান টাইমস ১৩ ফেব্র“য়ারি)Ñ ‘হাসিনাকে অবশ্যই সমর্থন করবে ভারত, কিন্তু খালেদাকে ফেলে দিয়ে নয়’। এই বক্তব্যেই প্রমাণ, এখনো নির্বাচনকে প্রভাবিত করছে প্রণবপন্থীরা!

কংগ্রেসের থাবায় আওয়ামী লীগ!
আমাদের রাজনীতিকে খাদে ফেলার মূলে আছে, প্রায় পাঁচ দশক ধরে একটি দলকে সরাসরি কংগ্রেসের থাবায় নেয়া। দ্বিতীয় দেশ বিভাগের মূলেও ইন্দিরা। তার ক্যাবিনেট থেকে সোনিয়া পর্যন্ত যার একচ্ছত্র প্রভাব, ’৭৫-এর দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে, তার গৃহেই বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে ব্যক্তিকেন্দ্রিক করে তোলা এবং পারিবারিককরণ। ব্যক্তিকেন্দ্রিক এবং পারিবারিক শাসনে বিশ্বাসী ইন্দিরার আদলে, এ দেশেও ‘দ্বিতীয় ইন্দিরা’ প্রতিষ্ঠার মিশন বেশির ভাগ সফল।
তবে ২০১৪ সালে স্বদেশের নির্বাচনে ভোটের বাক্সে নীরব বিপ্লব, মোটেও টের পায়নি কংগ্রেস। পেলে ৫ জানুয়ারি বাদ দিয়ে, ঘরের আগুনই সামলাত। ভেবেছিল, টানা তৃতীয় দফায় ক্ষমতায় যাবে, কিন্তু বিধিবাম। কারণ সোভিয়েত মডেলের করাপ্ট কংগ্রেসের বিরুদ্ধে বিজেপির সফল ক্যাম্পেইন। এরই অন্যতমÑ ‘কংগ্রেসমুক্ত ভারত’ গড়ার ডাক।
২০০৪ সালে কংগ্রেস ক্ষমতায় না এলে, ঢাকার রাজনীতির এই চেহারা অসম্ভব। মনমোহন সিং স্রেফ কাষ্ঠঘোড়া। ক্ষমতায় গিয়ে ১/১১-এর কূটকৌশল প্রণববাবুদের। পছন্দের দলকে ক্ষমতায় আনতে অর্থনীতি, রাজনীতি, সংস্কৃতি, পররাষ্ট্রনীতি… সর্বত্রই অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে দখলের রেকর্ড। ভারতের রাজনীতিতে সূচিত পরিবর্তনগুলো কেন গুরুত্ব পায় না ঢাকায়?
অব্যাহত দুর্নীতি এবং দুঃশাসনের কারণে অস্তিত্ব সঙ্কটে কংগ্রেস। দোষী সাব্যস্ত হলে সোনিয়া-রাহুলের জেল হতে পারে। দুর্নীতিবাজদের বিচারে দৃশ্যত ন্যূনতম ছাড় দিচ্ছে না বর্তমান সরকার। সাবেক অর্থমন্ত্রী পি. চিদাম্বরামের পুত্র কার্তিককে এয়ারপোর্ট থেকে গ্রেফতার করে সরাসরি জেলে। সাবেক অর্থমন্ত্রীকেও গ্রেফতারের প্রক্রিয়া চলছে। মন্ত্রী থাকা অবস্থায় ‘বহু অনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িয়ে পড়া’র হার্ড এভিডেন্স আদালতে। উদাহরণস্বরূপ, ২০ শতাংশ স্বর্ণ পাচারের শর্তে আইন পরিবর্তন ওই মন্ত্রীর। সোনিয়া-রাহুলের স্বাক্ষরসহ বেনামে অর্থ সন্ত্রাসের নথিপত্রও নাকি আদালতে। আগেও লিখেছি, বেনামে ‘ইয়াং ইন্ডিয়ান কোম্পানি’র ৭৬ শতাংশ মালিকানা সোনিয়া-রাহুলের। ‘ন্যাশনাল হেরাল্ড স্ক্যাম’ মামলায় বেনামে ৯৩ কোটি রুপি ঋণ নিয়ে পাঁচ হাজার কোটি রুপির ভূমি আত্মসাতের মূল আসামি হিসেবে রাহুলের নাম। বিএনপির মামলাগুলোর মতো একটাও কল্পনাপ্রসূত নয়। পত্রিকায় লেখা নিবন্ধে এ বিচার নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করলেন প্রবীণ আমলা ও সাংবাদিক কুলদীপ নায়ার। বছরে গড়ে ৭৬ হাজার কোটি টাকা পাচারের অপরাধে কয়জনকে জেলে ঢোকাতে পেরেছে বাংলাদেশ? আজ যেখানে কংগ্রেস আর বিএনপি, বাংলাদেশের মানুষ রাজনীতিসচেতন হলে আওয়ামী লীগ থাকত সেখানেই।
এসব বলার কারণ, বাম এবং লিবারেলদের পর, এবার রামদের দরজায় ধরনা দিতে এতটুকু লজ্জা নেই পার্লামেন্ট দখলদারদের। বিজেপির দোষ দেবো না, দোষ তাদের, যারা দুই দফায় ১০৮টি শর্ত পূরণ করে, সবুজ সঙ্কেত আদায় করে!
৭ মার্চ সংখ্যা মানবজমিন, ‘জনগণের সঙ্গে, দলের সঙ্গে নয়।’ ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক প্রসঙ্গে কূটনৈতিক রিপোর্টারÑ ‘সম্পর্ক দুই দেশের জনগণের সঙ্গে, কোন বিশেষ ব্যক্তি, দল বা গোষ্ঠীর সঙ্গে নয়।’ মোদিভাইকে প্রশ্ন, এটাই কি তার লক্ষণ? তাছাড়াও, বিজেপির মতো জনগণের ম্যান্ডেটে নয়, ভোটচুরি করে ক্ষমতায় আসার বিষয়টি তিনি জানেন। ভোটচোরদের সমর্থন করা বিজেপির আদর্শ কিনা! বিজেপিকে সঠিক বার্তা পৌঁছাতে পুরোপুরি ব্যর্থ জাতীয়তাবাদীরা।
জনগণের সাথে বন্ধুত্বের প্রথম শর্ত, কংগ্রেসের আনা ভারসাম্যহীন বাংলাদেশ নীতিগুলোকে সংস্কার করা। কংগ্রেসমুক্ত ভারত গড়ার ডাক দেয়া বিজেপির উচিত, আমাদের দেশেও কংগ্রেস প্রভাবমুক্ত রাজনীতি আনতে উদার হওয়া দরকার। নির্বাচনকেও কংগ্রেসের অভিশাপ থেকে মুক্ত করা উচিত। এ ছাড়া অন্য কোনো পথেই শান্তি আসবে না।

ইমেইল : farahmina@gmail.com
ওয়েবসাইট : www.minafarah.com