অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালার খসড়া মন্ত্রিসভায় অনুমোদন

0
512
blank
blank

জাতীয় অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা, ২০১৭ এর খসড়ার অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এতে বলা হয়েছে দেশের সব অনলাইন গণমাধ্যমকে নিবন্ধিত হতে হবে। তবে সংবাদপত্রের অনলাইন সংস্করণের জন্য আলাদা নিবন্ধনের প্রয়োজন নেই। সম্প্রচার মাধ্যমের (বেতার, টেলিভিশন) মতো অনলাইন গণমাধ্যমও দেখভাল করবে সম্প্রচার কমিশন। এই কমিশন গঠিত হবে জাতীয় সম্প্রচার আইনের অধীনে, যা প্রণয়নের কাজ চলছে।

তবে কমিশন গঠন না হওয়া পর্যন্ত তথ্য মন্ত্রণালয় অনলাইন সংবাদমাধ্যমের দেখভাল করবে। জাতীয় সম্প্রচার কমিশন অনলাইন সংবাদমাধ্যমের জন্য ‘গাইডলাইন’ তৈরি করবে। বিজ্ঞাপনের হার ও ফি সে অনুযায়ী নির্ধারিত হবে।

সোমবার সকালে জাতীয় সংসদ সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন।

বৈঠক শেষে দুপুরে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সচিবালয়ে এক ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, ‘তথ্য মন্ত্রণালয় প্রস্তাবটি উপস্থাপন কর। আলোচনা-পর্যালোচনা শেষে এই নীতিমালার খসড়ায় নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়।’

সচিব জানান, অনলাইন গণমাধ্যমকে সম্প্রচার আইন অনুযায়ী গঠিত জাতীয় সম্প্রচার কমিশনের কাছ থেকে নিবন্ধন নিতে হবে। নিবন্ধন ফি কমিশনই নির্ধারণ করবে। তারাই অনলাইন গণমাধ্যমের পরিচালনা পদ্ধতি ঠিক করবেন।

নীতিমালায় উল্লেখ্য অনলাইন গণমাধ্যমের সংজ্ঞা তুলে ধরে শফিউল আলম বলেন, ‘বাংলাদেশের ভূখণ্ড থেকে প্রকাশিত ইন্টারনেটভিত্তিক রেডিও, টেলিভিশন, সংবাদপত্র এবং এ জাতীয় অন্যকিছু অনলাইন গণমাধ্যম হিসেবে বিবেচিত হবে। এ আইনে অনলাইন গণমাধ্যম পরিচালনার জন্য একটি গাইডলাইন থাকবে।

‘১৯৭৩ সালের ছাপাখানা আইন অনুযায়ী যেসব সংবাদপত্র প্রকাশিত হয় তাদের অনলাইন ভার্সন থাকলে তাদের নিবন্ধন লাগবে না। তবে পত্রিকা কর্তৃপক্ষকে কমিশনকে পত্রিকার অনলাইন ভার্সন সম্পর্কে অবহিত করতে হবে। অনলাইনগুলোর কোড অব গাইডেন্স কমিশন তৈরি করবে- বলেও জানান সচিব।

তিনি আরো বলেন, গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ, তথ্য, ছবিসহ যে কোনো বিষয়ে কারো আপত্তি থাকলে, কারো অধিকার ক্ষুণ্ন হয় তাহলে কমিশনের কাছে আবেদন করা যাবে। কমিশন ৩০ দিনের মধ্যে বিষয়টি নিষ্পত্তি করবে। নিষ্পত্তিতে নির্দেশনা ও জরিমানার ব্যবস্থাও থাকবে। নিষ্পত্তির বিষয়গুলো সম্প্রচার কমিশন আইনের বিধিমালায় উল্লেখ থাকবে।’ জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালার সঙ্গে অনলাইন নীতিমালা সামঞ্জস্য আনার কথাও জানান সচিব।

জাতীয় সম্প্রচার কমিশন গঠিত না হওয়ায় বর্তমান অনলাইন গণমাধ্যমগুলো চলবে কি না জানতে চাইলে শফিউল আলম বলেন, ‘কমিশন গঠন না হওয়া পর্যন্ত তথ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী এসব অনলাইন কাজ করবে। তথ্য মন্ত্রণালয় অনলাইন গণমাধ্যমের একটি তালিকা তৈরি করেছে। তাতে বিদ্যমান অনলাইনের সংখ্যা ১৮০০।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘জাতীয় সম্প্রচার আইন’ নামে পৃথক একটি আইন তৈরির কাজ চলছে। এই আইনে কমিশনের কাজ ও গঠন প্রক্রিয়া সম্পর্কে বলা থাকবে।

নীতিমালায় থাকছে : অনলাইন গণমাধ্যমের খসড়া নীতিমালার তথ্য-উপাত্ত প্রচার, প্রকাশ ও সম্প্রচার সংক্রান্ত বিষয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংরক্ষণ করার কথা বলা হয়েছে। সব ধর্মের প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা রেখেই সংবাদ পরিবেশনের কথাও উল্লেখ রয়েছে।

আঞ্চলিক ভাষার ব্যবহার প্রসঙ্গে জানানো হয়েছে, আঞ্চলিক ভাষা ব্যবহার করা যাবে। তবে কৌতুক বা পরিহাস করার জন্য আঞ্চলিকতা রাখা যাবে না। পাশাপাশি বিভিন্ন অঞ্চলের সাংস্কৃতিক ধারাকে তুলে ধরার সঙ্গে সঙ্গে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সংস্কৃতিকেও তুলে ধরতে হবে সংবাদে।

অনলাইন গণমাধ্যমে প্রচারিত, প্রকাশিত বা সম্প্রচারে কোনো প্রকার অসঙ্গতিপূর্ণ, বিভ্রান্তিমূলক ও অসত্য তথ্য বা উপাত্ত দেওয়া যাবে না। সব তথ্য-উপাত্তে উভয়পক্ষের যুক্তি যথাযথভাবে উপস্থাপনের সুযোগ থাকতে হবে।

সরকার অনুমোদিত জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান, তথ্য-উপাত্ত স্বেচ্ছাপ্রণোদিতভাবে প্রচার বা প্রকাশ করতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে সরকার প্রধানের ভাষণ, জরুরি আবহাওয়া বার্তা, স্বাস্থ্য বার্তা, গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা, সরকারের জারিকৃত প্রেসনোট, সরকার অনুমোদিত জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান। রাষ্ট্রভাষাকে যোগ্য মর্যাদায় সুপ্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে তথ্য পাঠ, প্রচার, প্রকাশ ও সম্প্রচারের ক্ষেত্রে কোনোভাবেই বাংলা প্রমিত বানান বা উচ্চারণের মান শিথিল করা যাবে না।

অনলাইন প্রতিষ্ঠানগুলোকে ওয়েজবোর্ডের নিয়ম-কানুন অনুসরণ করতে হবে। প্রতিষ্ঠানের সব কর্মীর বেতন-ভাতা দিতে হবে ব্যাংকের মাধ্যমে। প্রতিষ্ঠানের কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) থাকা আবশ্যকীয়।

বিজ্ঞাপন প্রকাশের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে- রাজনৈতিক ব্যক্তি, বিদেশি কূটনীতিক ও জাতীয় বীরদের অনলাইন গণমাধ্যমে প্রচারিত, প্রকাশিত পণ্য বা সেবার বিজ্ঞাপনে অন্তর্ভুক্ত করা যাবে না। তবে গণসচেতনতা ও সমাজসংস্কারমূলক বিজ্ঞাপনে দেশের স্বণামধন্য নাগরিকদের সম্মতি নিয়ে বিজ্ঞাপনে অন্তর্ভুক্ত করা যাবে।

অনলাইন গণমাধ্যমে প্রচারিত, প্রকাশিত বা সম্প্রচারিত বিজ্ঞাপনের ভাষা, দৃশ্য কিংবা নির্দেশনা কোনো ধর্মীয় বা রাজনৈতিক অনুভূতির প্রতি পীড়াদায়ক হতে পারবে না। তবে ধর্মীয় অনুভূতিকে আহত করে না, এমন ধর্মীয় চিত্র প্রকাশ বা প্রদর্শন করা যেতে পারে।

সব তথ্য-উপাত্ত প্রচার, প্রকাশ ও সম্প্রচার করার ক্ষেত্রে দ্য সেন্সরশিপ অব ফিল্মস অ্যাক্ট-১৯৬৩, তথ্যপ্রযুক্তি আইন ২০০৬, কপিরাইট, ট্রেডমার্কস, প্যাটেন্টস-ডিজাইন ও জিআই আইনসহ অন্যান্য মেধাসম্পদ আইন বা দেশের প্রচলিত আইন ও তার অধীন বিধি-বিধান লঙ্ঘন করে বা জাতীয় নীতিমালার পরিপন্থী কোনো তথ্য উপাত্ত প্রচার, প্রকাশ ও সম্প্রচার করা যাবে না।