অবৈধ ক্ষমতা এবং অর্থ-বিত্তের দুর্গন্ধ

0
758
blank
blank

গোলাম মাওলা রনি: ভ্রষ্টাচারের যন্ত্রণায় বাংলাদেশের জনজীবন অশান্ত হয়ে পড়েছে। প্রায় প্রতিদিনই নিত্যনতুন কেলেঙ্কারির খবরে পুরো দেশে তোলপাড় শুরু হয়ে যাচ্ছে। অদ্ভুত সব ঘটনা, পাশবিক-আচরণের মহড়া এবং অনাচার-ব্যভিচারের তাণ্ডবে মানুষের বিচারবুদ্ধি ও মাত্রাজ্ঞান লোপ পেতে বসেছে। জনৈক সরকারি কর্মকর্তার ব্যভিচারের ভিডিও ফুটেজের জের কাটতে না কাটতেই এক রাজনীতিবিদের একই রকম অশ্লীল কর্মের ভিডিওচিত্র সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। গত এক সপ্তাহের অন্য একটি চাঞ্চল্যকর খবর হলো- গত দুই বছরে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটি রোহিঙ্গাদের ভরণপোষণের জন্য নগদ ২০ হাজার কোটি টাকা খরচ করেছে। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে গিয়ে নগদ অর্থ ব্যয়ের পাশাপাশি প্রকৃতি ও পরিবেশের যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তার আর্থিক মূল্য কম করে হলেও দুই লাখ কোটি টাকা। অন্য দিকে, রোহিঙ্গাদের কারণে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মন-মানসে যে ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে, তা পূরণ হওয়ার নয়।

এ সমস্যাগুলো ছাড়া গত সাত-আট মাসে আমাদের জাতীয় জীবনে যেসব ঘটনা-দুর্ঘটনা এবং বালা-মুসিবত আঘাত হেনেছে, তা আমাদের অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য, জনজীবন তছনছ করে দিয়েছে। মানুষের মনে কালো ছায়া পড়েছে এবং চিন্তা ও উদ্ভাবনী ক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে। বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, বজ্রপাত, শিশুধর্ষণ, হত্যাকাণ্ড এবং অপহরণ, ঘুষ-দুর্নীতির পাশাপাশি বিচারহীনতার সংস্কৃতি পরস্পরের সাথে পাল্লা দিয়ে নাগরিক জীবনকে বিপর্যস্ত করে ফেলেছে। ব্যবসায়-বাণিজ্য শিকায় উঠেছে। স্থাবর সম্পত্তির মূল্য অনেক কমে গেছে। বাজারে নিত্যপণ্যের দাম হু হু করে বেড়েই চলেছে। ব্যাংকগুলোতে নগদ অর্থের সংস্থান, আমানত এবং বিনিয়োগ মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। এই সপ্তাহের ব্যাংকসংক্রান্ত প্রধান খবর হলো, ১২ ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার কোটি টাকা।

ঘোর সরকার সমর্থক পত্রিকা বলে পরিচিত দৈনিক জনকণ্ঠ ২৭ আগস্ট খবর ছেপেছে, অস্ত্রসজ্জিত হচ্ছে রোহিঙ্গারা।’ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, রোহিঙ্গাদের আর বেশি দিন আরাম আয়েশে রাখা হবে না। সরকার ইতোমধ্যে রোহিঙ্গাদের নিয়ে কাজ করা বেশ কয়েকটি এনজিওকে নিষিদ্ধ করেছে। আন্তর্জাতিক সংস্থা ও দাতাগোষ্ঠীগুলোর রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির পরিদর্শনে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। সবশেষ দু’টি ঘটনা অর্থাৎ স্থানীয় এক যুবলীগ নেতাকে রোহিঙ্গারা বেধড়ক পিটুনি দেয়ার পর নজিরবিহীন এক সমাবেশে প্রায় দুই লাখ রোহিঙ্গাকে সমবেত করার মাধ্যমে সরকারকে রোহিঙ্গাদের বিষয়ে যে ‘রেড সিগন্যাল’ দেয়া হয়েছে তাতে ক্ষমতাসীনেরা বেশ নড়েচড়ে বসেছেন। শোনা যাচ্ছে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোর চার দিকে মোটা কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ করে তাদের দুর্ভেদ্য দুর্গের মধ্যে রেখে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করা হবে।

রোহিঙ্গারা যখন কক্সবাজারে বাড়াবাড়ি করছে, ঠিক তখনই আমাদের পার্বত্য জেলাগুলোতে দেখা দিয়েছে নজিরবিহীন অস্থিরতা। শান্তিচুক্তি সম্পাদনের পর এই প্রথম জাতীয় দৈনিকের শিরোনাম হলো, বিচ্ছিন্নতাবাদী পাহাড়ি সংগঠন ইউপিডিএফ সন্ত্রাসীদের ব্রাশফায়ারে অথবা গুলিতে টহলরত সেনাসদস্য নিহত।’ এ ঘটনার ধারাবাহিকতায় আরো একাধিক হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। পত্রিকায় যে খবর বের হয়েছে তা থেকে জানা যায়, গত ২৬ আগস্ট ইউপিডিএফের সন্ত্রাসীদের সাথে সেনাবাহিনীর গুলিবিনিময়ে তিনজন সন্ত্রাসী নিহত এবং অজ্ঞাতসংখ্যক আহত হয়। সেনাবাহিনীর জনসংযোগ দফতর আইএসপিআরের পরিচালকের বরাতে বিবিসি বাংলা তাদের ওয়েবসাইটে খবরটি প্রকাশ করে। একই ওয়েবসাইটে বিবিসি বাংলা অভিযুক্ত ইউপিডিএফের প্রতিবাদলিপিও প্রকাশ করেছে। সেখানে সংগঠনটি দাবি করেছে যে, দেশের অন্যান্য ক্রসফায়ার গল্পের মতো সেনাবাহিনী অত্যন্ত ঠাণ্ডা মাথায় তাদের তিনজন সদস্যকে গুলি করে মেরে ফেলেছে, যাদের খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালা উপজেলার হুপাপুর গ্রাম থেকে আগের রাত ২টার দিকে তুলে নেয়া হয়েছিল।

সাম্প্রতিককালের প্রিয়া সাহার ঘটনা, বরগুনার মিন্নি-নয়নবন্ড-রিফাতের নজিরবিহীন ঘটনা, ডেঙ্গু কেলেঙ্কারি এবং চামড়া কেলেঙ্কারির হৈ হুল্লোড়ের মধ্যে ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর বাংলাদেশ সফর করে গেলেন। চীনের সাথে বাংলাদেশের আন্তঃসংযোগ ও লেনদেনের নজিরবিহীন প্রবৃদ্ধি, ২৯ ডিসেম্বর কালো রাতের কালো অধ্যায়ের প্রহসন-পরবর্তী ক্ষমতার রাজনীতি এবং ভারতের সাথে সম্পর্কের টানাপড়েনের গুজবের মধ্যে ভারতীয় রাজনীতিতে নরেন্দ্র মোদি ও অমিত শাহের নতুন অভিষেকের পরপরই ‘কাশ্মির উত্তেজনা’ সৃষ্টি এবং একই সময়ে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্করের বাংলাদেশ সফর অনেক অজানা রহস্যের জন্ম দিয়েছে। আমাদের ভোঁতা অনুভূতি, অবরুদ্ধ বিবেকবুদ্ধি এবং মতপ্রকাশ বা প্রশ্ন করার নিদারুণ অক্ষমতার কারণে আমরা ওসব গুরুত্বপূর্ণ প্রসঙ্গ বাদ দিয়ে একজন জুনিয়র সরকারি কর্মকর্তার রগরগে সেক্স ভিডিও অথবা জনৈক রাজনীতিবিদ এবং তার মহিলা সহকর্মীর অনৈতিক শারীরিক সম্পর্কের ভিডিও ফুটেজ নিয়ে সরগরম সময় পার করে চলেছি।

আমরা কেউ জানতে চাচ্ছি না, কেন এবং কী কারণে আমাদের উচ্চ আদালতের তিনজন বিচারপতিকে বিচারকার্য থেকে বিরত রাখা হয়েছে। বিচারপতি ত্রয় সুপ্রিম কোর্ট অঙ্গনে দীর্ঘদিন ধরে তাদের কর্মকাণ্ডের কারণে অত্যন্ত আলোচিত ও সুপরিচিত। আরো অন্তত এক ডজন বিচারপতি রয়েছেন, যাদের কর্মকাণ্ড নিয়ে কোর্ট প্রাঙ্গণ তো বটেই, রাজধানীর কথিত ধনীদের ক্লাব এবং আরো কিছু স্পর্শকাতর স্থানে হরহামেশা আলোচনা-সমালোচনা হয়ে আসছে। তারা অনেকটা অবলীলায় এবং বেপরোয়াভাবে তাদের কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছিলেন, যা নিয়ে কোনোকালে কেউ প্রশ্ন করার সাহস পায়নি অথবা এর চেষ্টা করেনি। এ অবস্থায় এতজনের মধ্যে মাত্র তিনজনকে হঠাৎ কেনো টার্গেট করা হলো তা অনেকের বোধগম্য হচ্ছে না। বোধগম্য না হওয়ার কারণ রয়েছে। যে দেশে একজন প্রধান বিচারপতিকে দুর্নীতির অভিযোগে দেশ ছেড়ে পালাতে হয় এবং ন্যায়বিচার পাওয়ার ব্যাপারে আন্তর্জাতিক মিডিয়াতে চেঁচামেচি করতে হয়, সেই দেশে কোনো ব্যাপারে প্রশ্ন করা যে নির্ঘাত বুদ্ধিহীনতার কাজ, তা বুদ্ধিমানরা বুঝে গেছেন।

এদিকে, দুর্নীতি দমন কমিশনেও কয়েক দিন আগে বিরাট এক ঝড় বয়ে যায়। সেখানকার জনৈক পরিচালক চল্লিশ লাখ টাকা ঘুষ গ্রহণের অভিযোগে অভিযুক্ত হলেন। অভিযুক্ত ডিআইজি মিজানের নারী কেলেঙ্কারি, আর্থিক দুর্নীতি এবং দাম্ভিকতা নিয়ে দেশবাসী এমনিতেই অনেক দিন ধরে বিরক্ত ছিল। এর ওপর দুদক কর্তাকে তার বড় অঙ্কের ঘুষ দেয়ার ঘটনা জ্বলন্ত আগুনে পেট্রল ঢালার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। ফলে পুলিশ ও দুদকের মধ্যে শুরু হয় নজিরবিহীন টানাপড়েন। এ কারণে ডিআইজি মিজান ও দুদক পরিচালক এনামুল বাছির উভয়ের কপালে আগুন লাগে। পুলিশের নিত্যকার দুর্নীতি ও অপকর্মের ব্যাপার দেশবাসী অনেকটা গা-সওয়া হয়ে গেছে। কিন্তু গা-সওয়া ঘটনার বাইরে বড় কোনো কেলেঙ্কারি ঘটলেই চার দিকে হইচই পড়ে যায়। যেমন পুলিশের একজন এসপি পদমর্যাদার কর্মকর্তাকে সম্প্রতি ওএসডি করা হয়েছে মস্তবড় এক আর্থিক দুর্নীতি ও তৎসংক্রান্ত অমানবিক ঘটনা ঘটানোর দায়ে।

যদি রাষ্ট্রযন্ত্রের বিভিন্ন বিভাগ-উপবিভাগের দুর্নীতি-অনিয়ম-অত্যাচার এবং ক্ষমতার দম্ভ নিয়ে অল্পস্বল্প করেও আলোচনা করা হয়, নিবন্ধের পরিধি মহাভারতের চেয়েও বড় হয়ে যাবে। এসব ঘটনার সাথে ক্ষমতার রাজনীতির মধু মেওয়া লেহনকারী, ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট বা বর্জ্যভোগী সম্প্রদায়, দালাল-চাটুকার এবং জ্ঞানপাপী পেশাজীবীদের কুকর্মের দু’চারটি করে ফিরিস্তি যোগ করা হলে সেগুলোর দৈর্ঘ্য পৃথিবী ছাড়িয়ে মঙ্গলগ্রহকে স্পর্শ করতে পারে। কাজেই আজকের নিবন্ধে ওসব হাবিজাবি নিয়ে আলোচনা না করে, বরং হাবিজাবিগুলোর উৎসমূল অর্থাৎ কোথা থেকে অপকর্ম শুরু হয় এবং কোথায় গিয়ে শেষ হয়, অপকর্মের উৎসমূলে কেমন দুর্গন্ধ থাকে আর প্রান্তমূলে কতটা দুর্গন্ধ অবশিষ্ট থাকে তা নিয়ে কিছু বলার চেষ্টা করছি।

পৃথিবীর তাবৎ কর্মকাণ্ডই হলো একটি প্রবহমান খরস্রোতা নদীর মতো, যা শুরু হয় কোনো পর্বতের হিমবাহ অথবা ঝরনা থেকে এবং শেষ হয় কোনো সাগরে বিলীন হওয়ার মাধ্যমে। দুর্নীতি, অবৈধ ক্ষমতা এবং অবৈধ ক্ষমতার লাওয়ারিশ বা জারজ সন্তান বলে পরিচিত অর্থ-বিত্ত-পদ-পদবি-শান-শওকত প্রভৃতি সব কিছুই অবৈধ হয়ে সর্বনাশের সাগরে নিমজ্জিত হয়ে, মহাকালের সাক্ষীরূপে পৃথিবীবাসীকে সতর্ক করতে থাকে। কিন্তু আফসোস, আমরা কেউই কালের গর্ভে বিলীন হওয়া অবৈধ ক্ষমতাও বিত্ত-বৈভবের মালিকদের দুর্গন্ধকবলিত পচা লাশ, ক্ষয়ে যাওয়া হাড়গোড় এবং তাদের কুকর্মের ঘৃণিত নজিরগুলো আমলে নেই না।

মানুষের রাষ্ট্রীয় জীবনে রাষ্ট্রক্ষমতার উৎসমূল থেকেই রাষ্ট্রের যা কিছু ভালো অথবা যা কিছু মন্দ, তা শুরু হয়ে দেশকাল সমাজ-সংসার, পাহাড়-অরণ্য-সমতল ভূমিসহ সব কিছুকে আবিষ্ট করে ফেলে। নদী যেমন পাহাড় থেকে নেমে এসে দুকূল প্লাবিত করে প্রবাহিত হয়ে অনেকের উপকার করার পাশাপাশি সর্বনাশও করে থাকে; তদ্রƒপ রাষ্ট্রক্ষমতার উৎসমূলও সংশ্লিষ্ট রাজ্যের বা রাষ্ট্রের সব ভালোমন্দের উপলক্ষ হয়ে পড়ে। রাষ্ট্রক্ষমতা যদি অবৈধভাবে অর্জিত হয় তবে সেই ক্ষমতার ধারক-বাহকের কাছ থেকে ভালো কিছু আশা করার মতো নির্বুদ্ধিতা দ্বিতীয়টি নেই। মহাকালের ইতিহাসে এমন একটি উদাহরণও লিখিত নেই, যার জন্ম হয়েছিল অবৈধভাবে অথচ তিনি সারাটি জীবন বৈধ কাজ করেছেন।

জ্ঞান-বিজ্ঞান-শিল্প-সাহিত্য-ইতিহাস-ঐতিহ্য এবং ধর্মকর্মের সব শাখা-প্রশাখায় অবৈধ জিনিসকে শুধু বর্জন নয়, বরং ঘৃণা করতে বলা হয়েছে। অবৈধ পণ্য যাতে সমাজকে গ্রাস করতে না পারে, সেজন্য সব অবৈধ জিনিসের গর্ভমূলে আঘাত হানাতে বলা হয়েছে। মহাজ্ঞানীরা বলে গেছেন, বিচ্ছুর পেট থেকে বিচ্ছুই পয়দা হয়, সাপের মতো সাপের ডিম, খোলস-মাংস ইত্যাদি সব কিছুই ভয়ঙ্কর। গোখরা সাপের ডিম থেকে বাচ্চা সাপ প্রথম যেদিন বের হয়ে আসে, সেদিন সে ফণা তুলেই বের হয়ে আসে। বিষয়টি আরো একটু পরিষ্কার করার জন্য সাম্প্রতিককালের আলোচিত বিষধর ডেঙ্গু মশা সম্পর্কে কিছু বলা যেতে পারে। ডেঙ্গু মশার মতো ওদের ডিমগুলোও ভয়ঙ্কর। ডেঙ্গু মশা যে মানুষগুলোকে কামড়ায়, সেই মানুষগুলোও ডেঙ্গুর মতো ভয়ঙ্কর রোগ বিস্তারকারী হয়ে পড়ে, যদি তাদের দেহে এর ভাইরাস থেকে যায়। এ জন্য ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর রক্ত স্বাভাবিক না করা পর্যন্ত মানুষটি অন্যান্য মশাকে ডেঙ্গুবাহী মশায় রূপান্তরিত করা এবং অন্য মানুষকে ডেঙ্গু আক্রান্ত করার মেশিনরূপে বিবেচিত হয়।

পৃথিবীর তাবৎ অবৈধ বিষয়বস্তু, পণ্যসামগ্রী এবং চিন্তা-চেতনার মধ্যে অবৈধ ক্ষমতা হলো সবচেয়ে ভয়ঙ্কর এবং সর্ববিনাশী। অবৈধ ক্ষমতা থেকেই অবৈধ অর্থ ও পদপদবি সৃষ্টি হয়। অবৈধ অর্থের কারণে মানুষের রক্ত মাংস-চিন্তা চেতনা ও অভ্যাস স্বয়ংক্রিয়ভাবে অবৈধ হয়ে পড়ে এবং লোকটিকে জাহান্নামের কীট বানিয়ে ফেলে। অবৈধ অর্থের সাথে অবৈধ পদপদবি যোগ হলে মানুষ খান্নাছে পরিণত হয়ে যায়। তারা তখন ইবলিস, বদ জিন অথবা ভূত-প্রেতের মতো অশ্লীল কর্মে বেপরোয়া হয়ে ওঠে। অবৈধ ক্ষমতাজাত মানুষের অবৈধ রক্ত-মাংসের দেহ যখন অবৈধ পদ নিয়ে কোনো গুরুত্বপূর্ণ চেয়ারে বসে, তখন তার হিংস্রতা হায়েনাকে ছাড়িয়ে যায়; তার নির্লজ্জ বেহায়াপনা এবং যৌনতার অশ্লীলতা শূকর, কুকুর প্রভৃতি নোংরা প্রাণীকেও লজ্জায় ফেলে দেয়। এসব মানুষকে নিয়ে ভালো মানুষের সমালোচনা, ঘৃণা ও অভিশাপ ক্ষেত্র বিশেষে ফরজ হয়ে যায়। এদের বাধা দেয়া, প্রতিরোধ এবং সমূলে বিতাড়ন না করা পর্যন্ত জমিন পবিত্রতা পায় না; আল্লাহর দয়া-রহমত ও বরকত থেকেও সবাই বঞ্চিত হয়।

মানুষ যদি অবৈধ ক্ষমতা অর্থ-বিত্ত ও পদপদবির মোসাহেব হয়ে পড়ে তবে তাদের অবস্থা ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী অথবা পাগলা কুকুরে কামড়ানো জলাতঙ্ক রোগীর মতো হয়ে পড়ে। অবৈধ জিনিসের উৎসমূল নির্মূল করতে না পারলে তা যেকোনো মরণব্যাধি বা ভাইরাসের চেয়েও শতগুণ বিধ্বংসী ক্ষমতা নিয়ে সমাজ-সংসার-ব্যক্তি-পরিবার তথা পুরো রাষ্ট্রকে গ্রাস করে ফেলে। সমাজের সর্বত্র ব্যভিচার-খুন-ধর্ষণ প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করে এবং মানুষের অনুভূতি ভোঁতা হয়ে যায় গণ্ডারের মতো। অবৈধতার প্রভাবে মানুষের চিন্তাচেতনাও এলোমেলো হয়ে যায়। অনেকে কর্তব্যকর্ম ভুলে মাতালের মতো রঙ তামাশায় মেতে ওঠে। ফলে অবৈধতার উৎসমূলের সাথে পাল্লা দিয়ে অবৈধ অর্থ-বিত্ত-ক্ষমতার ভাইরাসবাহীরা সদলবলে রসাতলের অতলান্তের মাঝে ডুবে মরার জন্য পরস্পরের সাথে প্রতিযোগিতা করে দৌড়াতে থাকে।

লেখক : সাবেক সংসদ সদস্য