অভিমত: ভবিষ্যতের পরিবার

0
965
blank
blank

অধ্যক্ষ মো: নাজমুল হুদা: আদি যুগে মানুষ নিরাপত্তার জন্য পর্বতের গুহায় ও গাছের উপর বসবাস করত। মূলত বন্যপশুর আক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য তারা এ প্রক্রিয়ায় জীবনযাপন করত। ক্রমে মানুষ দলবদ্ধভাবে জীবনযাপন শুরু করে। পাথর ও গাছের ডাল দিয়ে অস্ত্র তৈরি করে তা দিয়ে বন্যপশুর আক্রমণ প্রতিহত করার পদ্ধতি আবিষ্কার করে। সমাজবদ্ধ জীবনে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। পুরাতন প্রস্তর যুগ থেকে নব্য প্রস্তর যুগে প্রবেশ করে। সামাজিক জীবনযাপনের প্রয়োজনে সমাজে শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি ও আইনের প্রয়োগ শুরু হয়। বিকশিত সমাজের সুস্থ ধারার জন্য মানুষ পরিবার গঠন করে। পরিবারের প্রধান সোপান বিয়ে। বিকশিত পরিবার যৌথ পরিবার হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। কালক্রমে সামাজিক বিকাশের একপর্যায়ে রাষ্ট্রের জন্ম। একেক রাষ্ট্রে একেক ধরনের সামাজিক রীতিনীতি গড়ে ওঠে। পৃথিবীতে বিভিন্ন ধরনের রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক রীতিনীতির বিকাশ ঘটতে থাকে। যে প্রক্রিয়া বর্তমানেও অব্যাহত আছে। আদিম যুগে পৃথিবীতে মাতৃতান্ত্রিক পরিবারের প্রাধান্য ছিল। সামাজিক বিবর্তনের ধারায় মাতৃতান্ত্রিক পরিবারের প্রাধান্য লোপ পেয়ে পিতৃতান্ত্রিক পরিবারের প্রাধান্য বাড়তে শুরু করে। ুদ্র নৃগোষ্ঠীর মাঝে মাতৃতান্ত্রিক পরিবারের অস্তিত্ব এখনো বিদ্যমান। অনেক দেশে তৃতীয় ধারার পরিবারপদ্ধতি বিকশিত হচ্ছে। যে পদ্ধতিতে পরিবারে পিতা ও মাতা উভয়ের কর্তৃত্বের সমতা বিধানের প্রচেষ্টা চলছে। সন্তানের পরিচিতির জন্য পিতার পরিচয়ের সাথে সাথে মাতার পরিচয় লিপিবদ্ধ করা হচ্ছে। ভোগবাদের চরম বিকাশের কারণে যৌথ পরিবারব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। মানুষ বর্তমানে চরম আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠেছে। ভোগবাদের চরম বিকাশ ঘটেছে। মানুষ নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত। সামাজিক পরিবর্তনের ধারায় বর্তমানে একক পরিবারের অস্তিত্বও হুমকির মুখে পড়েছে। মানুষ ভোগবাদের চরম বিকাশে বিয়েবহির্ভূত লিভ টুগেদার পদ্ধতিতে জীবনযাপন করা শুরু করেছে। এ ব্যবস্থায় বাধাবন্ধনহীনভাবে দায়িত্বমুক্ত জীবনযাপনের পথ উন্মুক্ত। অনেক সম্ভ্রান্ত ও অর্থশালী মহিলা জরায়ুতে সন্তানের অস্তিত্ব বিকশিত হলে কৃত্রিমভাবে সন্তান প্রসব করে তা অপরের ভাড়া করা জরায়ুতে প্রতিস্থাপন করে সন্তান লালন করে থাকে। অনেক ভগ্ন স্বাস্থ্যের মহিলা ডাক্তারের পরামর্শে এ ধরনের পদ্ধতি অনুসরণ করে থাকেন। অতীব আশ্চর্যের বিষয়, আমেরিকাসহ বহু রাষ্ট্রে সমকামী বিয়ে রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। এ পদ্ধতিতে সন্তান ধারণের প্রশ্নই আসে না। সে কারণে সমকামী বিয়ের আধিক্য বাড়লে মানব সমাজের অস্তিত্ব সঙ্কটের মুখে পড়বে। হয়তো যৌনাচারের জন্য মানুষ কৃত্রিম মানুষের সহায়তা নেবে। বাজারে দোকানপাটে কৃত্রিম মানব মানবী বা নারী পুরুষ অবাধে বিক্রি হবে। এর নমুনা শুরু হয়ে গেছে। সন্তান ধারণের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করলে চিকিৎসালয়ে সংগৃহীত শুক্রাণু ডিম্বকোসে ধারণ করবে। ভবিষ্যৎ সন্তানের চেহারা নিরূপণের জন্য শুক্রাণুদানকারীর চেহারার ছবি দেখে মহিলারা সন্তান গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেবে। গর্ভধারী মহিলারা পূর্ণ সময় গর্ভ বহন করবে না। আগামীতে জরায়ুতে বিকশিত সন্তান ভাড়া করা জরায়ুতে প্রতিস্থাপন না করে, তা কৃত্রিম জরায়ুতে প্রতিস্থাপন করা হবে। ফলে পিতৃপরিচয়হীন সমাজের বিকাশ ঘটবে। আগামীতে হয়তোবা যান্ত্রিক পদ্ধতিতে মানবসমাজ বিকশিত হবে। এ পদ্ধতিতে মানুষের জীবনী শক্তি কম। শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাবে। বিভিন্ন ধরনের রোগ-ব্যাধি বেড়ে যাবে। মানবজাতির অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়বে।