অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলানো বন্ধ করতে হবে: দীপু মণি

0
475
blank

স্টাফ রিপোর্টার: বাংলাদেশের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মণি বলেছেন, বর্তমানে ‘অনেক দেশ এনজিও’র মাধ্যমে অন্য দেশে নাক গলানোর চেষ্টা করে। এটি বন্ধ করতে হবে। প্রতিটি দেশের নিজস্ব স্বাধীনতা রয়েছে। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে রবিবারইন্টার-পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের (আইপিইউ) ১৩৬তম অ্যাসেম্বলির দ্বিতীয় দিনে ‘একটি দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অন্য দেশের নাক গলানো প্রতিরোধে সংসদের ভূমিকা’ শীর্ষক এক বিতর্ক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। আগামী মঙ্গলবার এ বিষয়ে একটি সিদ্ধান্ত নিতে ভোট নেওয়া হবে চলমান এই আইপিইউ সম্মেলনে।
ডা. দীপু মণি বলেন, প্রায় এক বছর আলোচনার পর এ রেজ্যুলেশনের খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে। কিন্তু বেশ কয়েকটি দেশ এ খসড়ার বিরোধিতা করে এটিকে বাতিল করার প্রস্তাব করেছে। তবে ভারত এ রেজ্যুলেশন সমর্থন করে। আগামী মঙ্গলবার এ বিষয়ে একটি রেজ্যুলেশন ভোটে দেওয়া হবে।
তিনি বলেন, ‘প্রতিটি দেশের অধিকার আছে নিজেকে শাসন করার এবং কীভাবে উন্নয়ন করবে সেটি ঠিক করার। তবে অনেক দেশ মনে করে তারা ইরাক বা সিরিয়াতে নাক গলানোর অধিকার রাখে এবং এর ফলে সে দেশে সন্ত্রাসী গ্রুপ সৃষ্টি হচ্ছে।’
সাবেক এ মন্ত্রী বলেন, ‘১৯৭১ সালে বাংলাদেশে সংঘটিত গণহত্যা যার মাধ্যমে ৩০ লাখ মানুষ মারা গেছে এবং দুই লাখ নারীকে অসম্মান করা হয়েছে সেটির কথা বিবেচনা করে বাংলাদেশ এটিকে সমর্থন করে। বাংলাদেশ অন্য দেশের কোনও বিষয়ে নাক গলানোকে সমর্থন করে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘শুধুমাত্র বিশেষ পরিস্থিতিতে যদি খুব প্রয়োজন পড়ে তবে জাতিসংঘের ম্যান্ডেট নিয়ে ইন্টারফেয়ার করা যেতে পারে।’
গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত কোনো সরকারকে কোনও মিলিটারি বা অন্য যেকোনও শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে উৎখাতের চেষ্টাকে এ খসড়া প্রস্তাবে চরম নিন্দা জানানো হয়।
অন্য দেশের নাক গলানোর ক্ষেত্রে সুশীল সমাজ যাতে ভূমিকা রাখে তার জন্য সংসদকে উৎসাহিত করার আহ্বান জানানো হয়েছে এ খসড়া প্রস্তাবে।
এ খসড়া সমর্থন করে চীন জানিয়েছে, বিদেশি শক্তি এবং এর প্রভাব গ্রহণযোগ্য নয়। ২০০৩ সালে গণবিধ্বংসী অস্ত্রের অজুহাত দেখিয়ে একটি দেশ ইরাক আক্রমণ করেছিল কিন্তু পরে দেখা গেছে সেখানে এ ধরনের কোন অস্ত্র নেই।
রাশিয়া এ খসড়া সমর্থন করে জানিয়েছে, এটি বাতিল করা হলে সারাবিশ্বে একটি ভুল বার্তা যাবে।
গ্রুপ-১২ প্লাস জোটে মোট ৪৭টি সদস্য দেশ এ খসড়ার চরম বিরোধিতা করছে। এ জোটের সদস্য জার্মানি জানিয়েছে, ইতিহাসে শত শত নাক গলানোর উদাহরণ আছে এবং কোনও কোনও ক্ষেত্রে নাক গলাতে হয়। তাই এ খসড়া বাতিল করা উচিত।
একই সুরে কথা বলে ইউক্রেন, ফ্রান্স, বেলজিয়াম, সুইটজারল্যান্ড ও তুরস্ক।
রাশিয়া ইউক্রেনের অংশ ক্রিমিয়া দখল করেছে। কিন্তু তারপরও অন্য দেশের নাক গলানো বন্ধের এ রেজ্যুলেশন বিরোধিতা করে ইউক্রেন জানিয়েছে, রাশিয়ার সংসদ ক্রিমিয়া দখলের প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছিল। তাই এ ধরনের খসড়ার কোনও গুরুত্ব নেই।
বেলজিয়াম বিরোধিতা করে জানিয়েছে, এটি ভারসাম্যপূর্ণ খসড়া নয়। অন্যদিকে তুরস্ক এই আইপিইউ সম্মেলনে এ খসড়া নিয়ে আলোচনা না করার আহ্বান জানায়।
এ খসড়াটি বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কারণ গত কয়েকবছর ধরে আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে পাকিস্তান ক্রমাগত নাক গলিয়ে যাচ্ছে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর থেকে এ বিষয়ে পাকিস্তানের সরকার ও তাদের জাতীয় ও প্রাদেশিক সংসদগুলো বিভিন্ন ধরনের বিবৃতি দিয়েছে ও রেজ্যুলেশন গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশের সরকার এবং সুশীল সমাজ এর চরম বিরোধিতা করেছে।