অর্জিত বিজয়, বর্তিত বিপর্যয়

0
1375
blank
blank

blankএম এ আসাদ চৌধুরী: বাংলাদেশ, বিশ্ব মানচিত্রের একটি স্বাধীন ভূ-খন্ড। ১৭৫৭ সালে পলাশী যুদ্ধের সুত্রধরে, ১৮৫৭ সালে সিপাহী বিদ্রোহ, ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গ শুরু থেকে ১৯০৬ সালের মুসলিম লিগ প্রতিষ্ঠা, ১৯০৭ সালে চর্যাপদ আবিষ্কৃত, ১৯০৯ সালে শ্রীকৃষ্ণকির্তন আবিষ্কৃত, ১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ রদ, ১৯১৬ সালে শ্রীকৃষ্ণকির্তন প্রকাশিত, ১৯৪০ সালে লাহোর প্রস্তাব উত্থাপন,১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্ত, ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলন, ১৯৬৬ সালে ছয়দফা দাবি, ১৯৬৮ সালে আগরতলা মামলা,১৯৬৯ সালে গনঅভ্যূত্থান, অতঃপর ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ। দীর্ঘ দুই শতাব্দীবধি গঠিত ইতিহাসের একটি কীর্তিমান ফলাফল, ত্রিশলক্ষ শহীদের তপ্ত খুনে রঞ্জিত ভূপৃষ্ঠে স্বাধীন মানচিত্রের একটি বাংলাদেশ। হাজারো মা-বোনের সম্ভ্রম হারিয়ে, এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা! ২৬শে মার্চ থেকে ১৬ই ডিসেম্বর, দীর্ঘ নয় মাসের প্রাণপণ যুদ্ধ শেষে বাংলার বুকে উড়ে স্বাধীন পতাকা। দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পর তখন পর্যন্ত ইতিহাসের জঘন্যতম নির্মম ও বর্বরতার অধ্যায় রচনা করেছিলো পাকিস্তানী সৈন্যরা। নির্যাতনের স্টিম রোলারে নিষ্পেষিত মজলুম বাঙ্গালিরা তখন সর্বকালের সেরা বাঙ্গালী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। সময়ের তফাতে বীর বাঙ্গালিরা স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনে। স্বাধীনতা যুদ্ধে বাংলাদেশের সর্বস্থরের জন সাধারন ও বীর মুক্তিবাহিনীর পাশাপাশি তথকালিন উলামায়ে কেরামের যুদ্ধাবদানও অনস্বীকার্য। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর চলে দেশ গঠনের নানা প্রকার কর্মসূচি। সুজলা-সুফলা, শষ্য-শ্যামলা, সোনার বাংলা গড়ার লক্ষে কাজ করে যান বাংলার আপামর জনতা। সময় গড়িয়ে চলছে স্ব-ধারায়, সাফল্যের জয়গান বাংলায়।স্বাধীনতার স্বাদে উৎফুল্ল বাংলার আম জনতা। কিন্তু দুঃখ জনক হলেও সত্য বাঙ্গালিরা স্বাধীনতার স্বাদ আস্বাদনায় বেশিদূর অগ্রসর হতে পারেনি। কথায় আছে, “অতি তরঙ্গ নদী বহেনা চিরকাল”। স্বাধীনতার মহান গৌরবে গৌরবান্বিত নিষ্কলঙ্ক বাংলার গায়ে কলঙ্কের চুনকালি এঁটেদেয় মীর জাফর’র কতেক কুলাঙ্গার ধূসর। তারা হত্যা করে স্বাধীনতার সর্বাধিনায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কে। স্বাধীন বাংলার স্বর্ণালী ইতিহাসে সূচনা হয় কালো অধ্যায়ের! সময় চলতে থাকলো আপন পথে, কালের বিবর্তনে স্বাধীনতা যুদ্ধের আরেক বীর সিপাহী হাল ধরলেন বাঙ্গালির। শহীদ প্রেসিডেন্ট মেজর জিয়াউর রহমান।দেশ প্রেমের এক নজির সৃষ্টি করতঃ পরিকল্পিত, পরিপাটিত ধারায় পরিচালিত করতে থাকেন দেশকে। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস,আকাশচুম্বি জনপ্রিয়তার দ্বারপ্রান্তে এসে নির্মম হত্যার শীকার হতে হয় স্বাধীনতার মহা নায়ক, শহীদ প্রেসিডেন্ট মেজর জিয়াউর রহমান কে! বাংলার ইতিহাসে রচিত হয় আরেকটি কালো অধ্যায়! অতঃপর মীর জাফরের কতেক প্রেতাত্মা কালক্রমে বার বার বাংলার গায়ে এঁটে যায় কলঙ্কের কালিমা। সময়ে স্বাধীন বাংলায় শৈর শাসনেরও অপবাদ লাগে। ঘটতে থাকে নানা প্রকার অপকর্ম, খুন খারাবী, হত্যা রাহাজানি। দুর্নীতিতে ১ম স্থানের রেকর্ডও গড়ে এই বাংলা। সাধারন উন্নত কাল থেকে আধুনিক, অত্যাধুনিক যুগ পর্যন্ত বাংলার পিছু ছাড়েনি কলঙ্কের জনকরা। চারিদিকে আজ সন্তাস, জঙ্গিবাদ, উগ্রবাদের ভয়।অজ্ঞাতের বন্ধুকের গুলি আর বদরুলদের চাপাতি আজ জনমন সদা শঙ্কিত রাখে। স্বাধীন বাংলায় সত্য বলায় নির্মম হত্যার শিকার হতে হয় বিশ্বজিৎদের মত নিরপরাধ মানুষদের! মধ্যযুগীয় বর্বর কায়দায় সর্বোচ্চ নিরাপত্তা বেষ্টিত স্থানে ধর্ষিত হয় তনুদের মত অসহায়রা! সীমান্তের ওপার থেকে নির্বিচারে ধেয়ে আসা বিএসেফের গুলিতে পাখির মত শিকার হয় হাজারো ফেলানিরা! এরা কি স্বাধীন বাংলার নাগরিক নয়? এদের বাপ-দাদারা কি দেশের জন্য যুদ্ধ করেনি? নাকি আমরা স্বাধিনতার সার্বভৌমত্ব হারিয়ে ফেলেছি? যদি তাই না হয় তবে কেনো এমন অমানবকিতা? কেনো এই বর্বরতা?আর তথাকথিত সুশীলরাই বা কেনো নিরব ভূমিকা পালন করছে? না কি সৎ সাহসের অভাব? এর থেকে উত্তরণের পথ-ই বা কি? না কি এখন আরো একটি স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রয়োজন? এরকম হাজারো প্রশ্ন সর্বক্ষণ জনমন জাগরিত রাখে! দুঃখ জনক হলেও সত্য যে অর্জিত বিজয়ের পঁয়তাল্লিশ বছর পরও বাংলায় বার বার বর্তিত হচ্ছে অনাকাঙ্ক্ষিত শত বিপর্যয়!
লেখক: কবি, সাংবাদিক ও সংগঠক।