স্টাফ রিপোর্টার: আজ ২৬ মার্চ। মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে বিশ্বের বুকে স্বাধীন অস্তিত্ব ঘোষণা করেছিল বীর বাঙালি। সূচনা করেছিল সশস্ত্র সংগ্রামের। আজ বাঙালির শৃঙ্খলমুক্তির দিন। মুক্তিযুদ্ধ সূচনার গৌরবের দিন।‘পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে/রক্ত লাল, রক্ত লাল, রক্ত লাল জোয়ার এসেছে জন-সমুদ্রে রক্ত লাল, রক্ত লাল, রক্ত লাল... আর দেরি নয় উড়াও নিশান/রক্তে বাজুক প্রলয় বিষাণ/বিদ্যুৎ গতি হউক অভিযান/ছিঁড়ে ফেলো সব শত্রু জাল, শত্রু জাল।‘
বাঙালি আজ বিনম্র শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতায় স্মরণ করবে স্বাধীনতার জন্য এ দেশের আত্মদানকারী বীর সন্তানদের; শ্রদ্ধা নিবেদন করবে স্বাধীনতার স্থপতি ও বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক জাতীয় নেতাদের, আত্মদানকারী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের এবং নৃশংস গণহত্যার শিকার লাখো সাধারণ মানুষের প্রতি।
মহান স্বাধীনতা দিবস জাতীয় জীবনে একই সঙ্গে অপার আনন্দ ও বেদনার। সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ শাসনের অবসানের পর দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে ভারত বিভাগের ফলে সৃষ্টি হয়েছিল পাকিস্তান নামের রাষ্ট্রটি। এর পশ্চিমাংশের শাসকরা একই ঔপনিবেশিক কায়দায় শোষণ ও বঞ্চনা চালিয়ে যায় পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিদের প্রতি। শোষণ আর বঞ্চনার এই কালপর্ব চলে টানা ২৩ বছর। বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির ওপর আক্রমণের মধ্য দিয়ে বস্তুত পাকিস্তানের কবর রচনার কাজটি শুরু হয়। বাঙালির মাতৃভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন ক্রমে রূপ নেয় স্বাধিকার এবং তা থেকে স্বাধীনতা সংগ্রামে। এভাবে ঘনিয়ে আসে সত্তরের নির্বাচন। এতে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে পূর্ব পাকিস্তানের প্রধান দল আওয়ামী লীগ জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করলেও 'পশ্চিমি' প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান তাদের শাসনভার দেয়ার বদলে টালবাহানা শুরু করেন। আলোচনার নামে চলে কালক্ষেপণ আর তৈরি হয় বাঙালিদের গণহত্যার নীলনকশা।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে ঢাকার রাজপথে নামে ট্যাংক ও সাঁজোয়া গাড়িবহর। ঘুমন্ত বাঙালির ওপর নির্বিচারে গুলি চালিয়ে সংঘটিত হয় মানব-ইতিহাসের ঘৃণ্যতম গণহত্যা। বঙ্গবন্ধুকে গভীর রাতে তার ধানম-ির ৩২ নাম্বারের বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু আগেই তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করে একটি বার্তা পাঠাতে সক্ষম হন। বার্তায় তিনি বলেছিলেন, 'আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন ও সার্বভৌম একটি রাষ্ট্র। একে যে রকম করেই হোক শত্রুর হাত থেকে রক্ষা করতে হবে।' ইপিআরের (পরে যা বিডিআর হয়) ওয়্যারলেস থেকে তার এ ঘোষণা প্রচারিত হয়েছিল। পরে চট্টগ্রামে অবস্থানরত বাঙালি সেনা কর্মকর্তা মেজর জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর এ ঘোষণা তার পক্ষে বেতারে পাঠ করলে দেশবাসী স্বাধীনতাযুদ্ধ শুরু হওয়ার বিষয়টি জানতে পারে।
বাঙালি বঙ্গবন্ধুর সাতই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের নির্দেশনামতো যার যা আছে তা নিয়েই ঝাঁপিয়ে পড়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে। গঠিত হয় প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার। তাদের নেতৃত্বে ধীরে ধীরে সংগঠিত রূপ নেয় মুক্তিযুদ্ধ। নয় মাস পাকিস্তানি বাহিনীর হত্যা-নির্যাতন, লুণ্ঠন, ধ্বংসযজ্ঞ এবং এর বিরুদ্ধে বাঙালির মরণপণ সংগ্রামের মধ্য দিয়ে অর্জিত হয় চিরকাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের সময় এ দেশেরই কিছু লোক বিশ্বাসঘাতকতা করে হাত মিলিয়েছিল পাকিস্তানি ঘাতকদের সঙ্গে। তারা অংশ নিয়েছিল গণহত্যা, নারী নির্যাতন, লুটতরাজ ও অগি্নকা-ের মতো অপরাধে।
আজ সরকারি ছুটির দিন। সারাদেশে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে অসংখ্য কর্মসূচির মধ্য দিয়ে উদযাপিত হবে স্বাধীনতা দিবস। ভোর থেকেই আজ সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে মানুষের ঢল নামবে। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর পুষ্পস্তবক অর্পণের পর সাধারণ মানুষের নিবেদন করা শ্রদ্ধার ফুলে ফুলে ছেয়ে যাবে স্মৃতিসৌধের বেদি।
সরকারি-বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ছাড়াও সব সড়ক ও সড়কদ্বীপ সাজানো হয়েছে জাতীয় পতাকা ও রঙিন পতাকায়। গুরুত্বপূর্ণ ভবনগুলোতে থাকছে আলোকসজ্জা।
দেশের শান্তি ও অগ্রগতি কামনা করে সব মসজিদে বিশেষ মোনাজাত এবং অন্যান্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হয়েছে। হাসপাতাল, সরকারি শিশু সদন ও এতিমখানা এবং কারাবন্দিদের দেয়া হবে উন্নত খাবার। বিটিভি, বাংলাদেশ বেতারসহ বিভিন্ন বেসরকারি টেলিভিশন স্বাধীনতা দিবসের বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচারের কর্মসূচি নিয়েছে। সংবাদপত্রগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করছে।
স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া পৃথক বাণী দিয়েছেন।
সম্পাদক ও প্রকাশক: শিব্বির আহমদ ওসমানী [এমএ, এলএলবি (অনার্স), এলএলএম] যোগাযোগ: বনকলাপাড়া রোড, সুবিদবাজার, সিলেট- ৩১০০। ই-মেইল: damarbangla@gmail.com ফোন: ৭১৪২৭১, মোবাইল: +৮৮ ০১৭১৪৪৫৭৭৯২ www.dailyamarbangla.comCopyright © 2024 Daily Amar Bangla. All rights reserved.