আদালত পাবলিক পারসেপশনের দিকে তাকায় না: প্রধান বিচারপতি

0
489
blank
blank

নিজস্ব প্রতিবেদক: আদালত পাবলিক পারসেপশনের দিকে তাকায় না বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। বুধবার সকালে খালেদা জিয়ার জামিন স্থগিত আবেদনের শুনানির সময় প্রধান বিচারপতি এ মন্তব্য করেন। শুনানির শুরুতেই দুদকের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান বলেন, হাইকোর্ট ৪টি কারণ দেখিয়ে খালেদা জিয়াকে জামিন দিয়েছেন। আমরা এখনো সে আদেশের সার্টিফায়েড কপি পাইনি। আদেশের কপি পেলে লিভ টু আপিল করব।

এ সময় প্রধান বিচারপতি বলেন, সিপি ফাইল করে আসেন। তখন দুদকের আইনজীবী বলেন, সিপি ফাইল করতে রোববার-সোমবার পর্যন্ত আমাদেরকে সময় দেয়া হোক। এ পর্যন্ত জামিন স্থগিত রাখা হোক। এর পর আদালত বলেন, ঠিক আছে সিপি ফাইল করে আসেন রোববারের মধ্যে। এ পর্যন্ত জামিন স্টে থাকবে।

তখন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও খালেদার আইনজীবী অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেন, আমাদেরকে আগে শুনেন। আমাদের বক্তব্য তো শুনেন নাই। আমাদের না শুনে এভাবে আদেশ দিতে পারেন না।

প্রধান বিচারপতি বলেন, শুনতে হবে না। রোববার পর্যন্ত তো স্থগিত দিয়েছি। ওই দিন আসেন তখন শুনব।

অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেন, আপনি যে এক তরফাভাবে শুনানি করে আদেশ দিলে আদালতের প্রতি পাবলিক পারসেপশন খারাপ হবে।

জবাবে প্রধান বিচারপতি বলেন, আমরা পাবলিক পারসেপশনের দিকে তাকাই না। কোর্টেকে কোর্টের মতো চলতে দিন।

এরপর জয়নুল আবেদীন ও এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, না শুনেই তো আদেশ দিলেন।

আদালত বলেন, আমরা অন্তবর্তীকালীন আদেশ দিয়েছি। আমাদের শোনার দরকার নেই।

জয়নুল আবেদীন বলেন, এই মামলায় চেম্বার আদালত তো স্টে দেয়নি। এই সময়ের মধ্যে আসামিও বের হবে না। তাই স্টের প্রয়োজন নেই।

এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘আমরা তো শুনানির সুযোগ পেলাম না।’

এরপরই কার্যতালিকা থেকে অন্য মামলা শুনানি শুরু হয়।

শুনানির একপর্যায়ে খালেদা জিয়ার পক্ষে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সহ-সভাপতি গিয়াস উদ্দিন আহমদ দাঁড়িয়ে আদালতকে বলেন, ‘আপনি তো না শুনেই এক তরফা আদেশ দিলেন। আমাদের কথা শুনতে হবে। কেন শুনবেন না।’

তখন প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘কার কথা শুনবো, কার কথা শুনবো না তা কি আপনার কাছে শুনতে হবে?’

গিয়াস উদ্দিন আবারো একটু উত্তেজিত হয়ে একই কথা বললে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আপনি কি আদালতকে থ্রেট করছেন?’

গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘শুনে তারপর আদেশ দিতে হবে।’

তখন প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘থ্রেট দিবেন না।’

একপর্যায়ে অ্যাটর্নি জেনারেলকে উদ্দেশ করে ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, আপনি তো কোর্টকে শেষ করে দিলেন। তখন অ্যাটর্নি কোনো উত্তর না দিয়ে চুপ করে দাঁড়িয়েই ছিলেন। তখন একদল আইনজীবী দালাল দালাল বলে আদালত কক্ষ ত্যাগ করেন।

পরে সুপ্রিম কোর্ট বার এসোসিয়েশনের সভাপতি জয়নুল আবেদীন বুধবার বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিন স্থগিত করার আদালতের আদেশের পর সুপ্রিম কোর্ট বার এসোসিয়েশনের সভাপতির কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছেন, অতীতে আদালত কখনোই এ ধরনের আদেশ দেননি।

তিনি বরেন, এ ধরনের আদেশের নজির নেই। এ ধরনের আদেশ নজিরবিহীন। আসামিপক্ষের আদেশ না শুনে কখনো কোনো প্রধান বিচারপতি এ ধরনের রায় দেননি। এ রায়ে আমরা মর্মাহত, আমরা ব্যথিত।

তিনি বলেন, আদালতে সিনিয়র আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন। আমরা আদালতকে অনুরোধ করেছিলাম, আমাদের কথা শুনতে। কিন্তু আদালত শুনেনি।

সংবাদ সম্মেলনে সুপ্রিম কোর্ট বার এসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি গিয়াসউদ্দিন বলেন, আমরা আমাদের কথা শোনার জন্য আদালতকে বলেছিলাম। কিন্তু আদালত বলেন, তারা কার কথা শুনবেন না শুনবেন না তা তাদের ব্যাপার।

তিনি বলেন, অতীতে কোনো প্রধান বিচারপতি আসামিপক্ষের কথা না শুনে রায় দেননি। এভারের ঘটনা নজিরবিহীন।

আজ বুধবার সকাল ৯ টার পর প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ খালেদা জিয়ার জামিন স্থগিত চেয়ে করা ২টি আবেদনের ওপর শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।