ডেস্ক রিপোর্ট: বিশ শতকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সংঘটিত হয়েছে গণহত্যা। বিশ্ববাসী এসব গণহত্যা প্রত্যক্ষ করেছে বিভিন্নভাবে। বাংলাদেশ, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, গুয়েতেমালা, চিলি, বুরুন্ডিসহ বিভিন্ন দেশে গণহত্যা হয়েছে। সবচেয়ে বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছে বাংলাদেশে। জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনও বলেছে, মানব সভ্যতার ইতিহাসে যতগুলো গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে; তাতে অল্প সময়ের মধ্যে সব থেকে বেশিসংখ্যক মানুষকে হত্যা করা হয়েছে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে। প্রতিদিন গড়ে ছয় থেকে বারো হাজার বাঙালী খুন হয়। পঁচিশ মার্চ থেকে ষোলো ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রতিদিন বারো হাজার হিসেবে নিহতের সংখ্যা দাঁড়ায় ৩২ লাখ ৪ হাজার। বাংলাদেশে গণহত্যা পরিচালনাকারী খোদ পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর অধিনায়ক যুদ্ধাপরাধী আবদুল্লাহ নিয়াজি তার ‘বিট্রেয়াল অব ইস্ট পাকিস্তান’ গ্রন্থে মন্তব্য করেছেন, পঁচিশে মার্চের সামরিক অভিযান বুখারা ও বাগদাদে চেঙ্গিস খান ও হালাকু খানের গণহত্যার চেয়েও বেশি নিষ্ঠুর ছিল। স্বয়ং গণহত্যাকারী প্রধান নিজেই যখন দাবি করছেন, স্পষ্ট হয় বাংলাদেশে তাদের নৃশংসতার মাত্রা কতটুকু ছিল। ১৯৭১ সালের পঁচিশ মার্চ এক রাতে ‘অপারেশন সার্চ লাইট’-এর নামে হানাদাররা বাংলাদেশে লক্ষাধিক বাঙালীকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। এ হত্যা প্রক্রিয়া অব্যাহত ছিল ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত গণহারে নারীদের ওপর চালানো হয়েছে পাশবিক নির্যাতন। বাড়িঘর লুটপাট, অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটিয়েছে। অপহরণ, খুন, বর্বর শারীরিক নির্যাতন চালানো হয়েছে। পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসর শান্তি কমিটি, রাজাকার, আলবদর, আলশামস বাহিনীর সেসব পৈশাচিক বর্বরতা গণহত্যার ইতিহাসে এক ভয়াবহতম ঘটনা। পঁচিশে মার্চের গণহত্যা শুধু এক রাতের হত্যাকা-ই ছিল না, এটা ছিল বিশ্বসভ্যতার জঘন্যতম হত্যাকা-ের সূচনা। এর পর নয় মাসে পাকিস্তানী হানাদাররা ত্রিশ লাখ নিরপরাধ নারী-পুরুষ শিশুকে জঘন্যভাবে হত্যা করে।
এক ভয়ঙ্কর হত্যাযজ্ঞের ট্র্যাজেডি ধারণ করে পঁচিশে মার্চ ‘কালরাত্রি’ হিসেবে বাঙালীর ইতিহাসে ঠাঁই নিয়েছে। এই জঘন্যতম হত্যাকা-ের ইতিহাস, দলিলপত্র, ভিডিও এবং আলোকচিত্র দেখলে যে কেউ অপরাধীদের ধিক্কার জানাবে। মানুষ ও মানবতার পক্ষে দাঁড়াবে বিশ্ববিবেক। পরিকল্পিতপন্থায় এদেশের মানুষ হত্যার মহোৎসবে নেমেছিল পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী। তারা বাংলার মানুষ নয়, চেয়েছিল বাংলার মাটি। তাই ঘুমন্ত নিরস্ত্র বাঙালী হত্যার উৎসব শুরু করেছিল ২৫ মার্চ রাতে। নির্বিচারে হামলা চালিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের কলাভবন, ছাত্রাবাস, পুলিশ ও ইপিআরের সদর দফতর, ব্যারাক, বিভিন্ন স্টেশন ও টার্মিনালে। স্বাধীনতার ৪৭ বছরের মাথায় একাত্তরের ২৫ মার্চ গণহত্যাকা-ের দিনটি জাতীয়ভাবে ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। জাতীয় সংসদে সর্বসম্মত প্রস্তাব গৃহীত হবার পর বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়কে সংযোজন করা হলো। দেশবাসী চায় জাতিসংঘ পঁচিশ মার্চকে ‘আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান যেন করে। অবশ্য ২০১৫ সালে জাতিসংঘ ৯ ডিসেম্বরকে আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশ সে সময় বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়নি। ঔদাসীন্যতার কারণে সম্ভবত প্রস্তাব পেশ করেনি জাতিসংঘে। জাতিসংঘের বিধান অনুযায়ী প্রস্তাবটি কোন দেশের সরকারের পক্ষ থেকে পেশ করতে হয়। সুতরাং সংসদে গৃহীত প্রস্তাবটিকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যাবার দায়িত্বটি সরকারের ওপরই বর্তায়। সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা নিজে যেখানে আগ্রহী, সেখানে বিশ্বজনমত বিষয়টিতে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়াবে বলে দেশবাসী প্রত্যাশা করে।
সূত্র: জনকন্ঠ
সম্পাদক ও প্রকাশক: শিব্বির আহমদ ওসমানী [এমএ, এলএলবি (অনার্স), এলএলএম] যোগাযোগ: বনকলাপাড়া রোড, সুবিদবাজার, সিলেট- ৩১০০। ই-মেইল: damarbangla@gmail.com ফোন: ৭১৪২৭১, মোবাইল: +৮৮ ০১৭১৪৪৫৭৭৯২ www.dailyamarbangla.comCopyright © 2024 Daily Amar Bangla. All rights reserved.