আর্থিক সংকটে বিএনপি

0
829
blank

মাহমুদ আজহার: টানা ১০ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকা দলের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে গিয়ে আর্থিক সংকটে পড়েছে বিএনপি। নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে দল সমর্থিত ব্যবসায়ী ও শুভানুধ্যায়ীরা এখন আর নিয়মিত আর্থিক সহযোগিতা করছেন না। কাউন্সিলের পর বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারাও ঠিকমতো পরিশোধ করছেন না মাসিক চাঁদা। আয়ের উৎস বিএনপির সদস্য সংগ্রহ অভিযানও থমকে আছে। এ কারণে অফিসের স্বাভাবিক ব্যয় নির্বাহ ও স্টাফদের বেতন-ভাতা দিতে হিমশিম খাচ্ছে দলটি। আর্থিক টানাপড়েনের কারণে এবারই প্রথম গঠনতান্ত্রিকভাবে কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের সর্বস্তরের নেতাদের মাসিক চাঁদা দেওয়ার বিধান যুক্ত হয়েছে। গতকাল দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত চিঠিও পাঠানো হয়েছে।
তবে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল সন্ধ্যায় বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘বিএনপি কোনো আর্থিক সংকটে নেই। দলের নতুন গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তৃণমূল নেতাদের মাসিক চাঁদা নির্ধারণ করা হয়েছে। সেটারই একটি নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে।’
জানা যায়, বিএনপিকে আর্থিকভাবে সহায়তা করে এমন শুভানুধ্যায়ীরা সরকারের সতর্ক দৃষ্টিতে রয়েছেন। দল সমর্থিত কয়েকজন ব্যবসায়ী ও শুভানুধ্যায়ীকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানাভাবে হয়রানি করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভাইস চেয়ারম্যান পদ মর্যাদায় বিএনপি সমর্থিত আলোচিত এক ব্যবসায়ীর আর্থিক প্রতিষ্ঠানে সরকার নানাভাবে হয়রানি করছে বলে জানা গেছে। দলের নেতাদের অভিযোগ, কয়েকদিন আগে চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ের মালিককে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ডেকে নিয়ে নানা হুমকি দিয়েছে। এ অবস্থায় বিএনপি সমর্থিত ব্যবসায়ীরা দলের কর্মকাণ্ডে অর্থ দিতেও ভয় পাচ্ছেন। জানা যায়, গুলশান কার্যালয়ে অফিস ও স্টাফদের মাসিক খরচ গড়ে প্রায় ৬ লাখ টাকা। এ ছাড়া নয়াপল্টন কার্যালয়ের স্টাফ ও অফিস খরচ প্রায় ২ লাখ টাকা। এ ছাড়া সভা-সমাবেশ, যাতায়াত, নেতা-কর্মীদের মামলাসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও বেশ কিছু টাকা খরচ হয়। প্রতি মাসে প্রায় ১০ লাখ টাকার মতো খরচ হয় বিএনপির স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে। নেতারা নিয়মিত মাসিক চাঁদা দিলে বাইরে কারও কাছে চাওয়ার প্রয়োজন পড়ে না বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। নয়াপল্টন কার্যালয়ের এক স্টাফ জানান, মার্চে দলের জাতীয় কাউন্সিল পর্যন্ত সব কেন্দ্রীয় নেতারই চাঁদা পরিশোধিত। এরপর থেকেই অনেকেই চাঁদা নিয়মিত দিচ্ছেন না। একটি অংশ নিয়মিতই চাঁদা দিচ্ছেন। দলের চেয়ারপারসন ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যানের চলতি মাস পর্যন্ত সব টাকাই পরিশোধিত। নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। কেউ কেউ মাসিক চাঁদা অফিসেও পাঠিয়ে দিচ্ছেন। জানা যায়, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী নতুন করে জেলা, মহানগর, থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন কমিটির নেতাদের মাসিক চাঁদা নির্ধারণ করা হয়েছে। কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ইউনিয়নে ৫০ টাকা, মহানগরীর ওয়ার্ডে ১০০ টাকা, উপজেলা-থানা-পৌরসভায় ২০০ টাকা, মহানগরে ৪০০ টাকা ও জেলায় ৫০০ টাকা। এসব কমিটির ইউনিট ভেদে সহসভাপতি ও যুগ্ম সম্পাদক পদে ৪০ টাকা, ৫০ টাকা, ১০০ টাকা, ২০০ টাকা ও ৩০০ টাকা। সম্পাদকদের ক্ষেত্রে ৩০ টাকা, ৪০ টাকা, ৫০ টাকা, ১৫০ টাকা ও ২০০ টাকা। সহসম্পাদকদের ক্ষেত্রে ২০ টাকা, ৩০ টাকা, ৪০ টাকা ও ১০০ টাকা। সদস্যদের ধরা হয়েছে ১০ টাকা, ২০ টা, ৩০ টাকা, ৪০ টাকা ও ৫০ টাকা। তবে কেউ এর চেয়ে বেশি পরিমাণ চাঁদা দিতে চাইলে দিতে পারবে। কিন্তু সামর্থ্যের অভাব বিবেচনা করে চাঁদা মওকুফ কিংবা পরিমাণ হ্রাস করতে পারবে। তবে জাতীয় নির্বাহী কমিটির চাঁদার পরিমাণ আগের পরিমাণই রয়েছে। চেয়ারপারসন ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যানের মাসিক চাঁদার পরিমাণ ১ হাজার টাকা। সমপরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে স্থায়ী কমিটির সদস্যদেরও। এ ছাড়া ভাইস চেয়ারম্যান ও উপদেষ্টা ৫০০, যুগ্ম-মহাসচিব, সম্পাদক ও সহসম্পাদক ৩০০ এবং জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্যদের জন্য ১০০ টাকা নির্ধারিত রয়েছে। নয়াপল্টন কার্যালয়ের স্টাফরা জানান, কেন্দ্রীয় কমিটির বিভিন্ন পদের নেতা ছাড়াও দল থেকে যারা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তারাও পদাধিকার বলে জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য। তাদেরও মাসিক চাঁদা ১ হাজার টাকা নির্ধারিত রয়েছে। অবশ্য নির্বাচন বর্জন করায় দশম জাতীয় সংসদে বিএনপির কোনো এমপি নেই। এ প্রসঙ্গে দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী জানান, ‘আর্থিক সংকট ও দুর্যোগ—দুটোর মধ্য দিয়েই চলছে বিএনপি। কেন্দ্রীয় নেতারা মাসিক চাঁদা দিচ্ছেন। সবাই হয়তো সময়মতো দিচ্ছেন না। কিন্তু দিচ্ছেন। গঠনতন্ত্রে যুক্ত থাকায় এবার তৃণমূলের নেতারাও চাঁদা দেবেন। এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠানো হয়েছে।’