ইউপি নির্বাচনের চতুর্থ ধাপেও ক্ষমতাসীনেরা তান্ডব চালাচ্ছে: রিজভী

0
484
blank

ঢাকা: ইউপি নির্বাচনের চতুর্থ ধাপেও ক্ষমতাসীনেরা তান্ডব চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, প্রথম দু দফা ই্উপি নির্বাচনে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের ভোট ডাকাতির পর আগামী ২৩ এপ্রিল ও ৩ মে তৃতীয় এবং চতুর্থ দফার নির্বাচনের প্রাক্কালেও তারা দেশব্যাপি ভয়াবহ সশস্ত্র তান্ডব শুরু করেছে। এ পর্যন্ত আওয়ামী সন্ত্রাসী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে ৪৫ জন নিহত ও পাঁচ সহস্রাধিক লোক আহত হলেও নির্বাচনী সহিংসতায় মৃত্যুর মিছিল বেড়েই চলছে।

তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের অধীনে স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে অংশগ্রহণ করলেও নির্দলীয় এবং নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া আগামী জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে না। বুধবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে রিজভী এসব বলেন। নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়। এতে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, সহ দফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু, নির্বাহী কমিটির সদস্য রফিক সিকদার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এসময় তিনি নির্বাচনের প্রসঙ্গে বলেন, গতকালও নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের মুড়াপাড়া ইউনিয়নে একজনকে গাছে বেঁধে জাহাঙ্গীর নামে একজন ব্যাক্তিকে কুপিয়ে হত্যা করেছে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। রুপগঞ্জের ভুলতায় বিএনপি মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী আব্বাস উদ্দিন ভুইয়া গণসংযোগ করতে গেলে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা তার ওপর সশস্ত্র হামলা চালায়। এ সময় বিএনপি প্রার্থীসহ ১২জন আহত হয়েছে।

তিনি বলেন, গত মঙ্গলবার ময়মনসিংহের ফুলপুরে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা পুলিশের সামনে প্রকাশ্য দিনে দুপুরে সশস্ত্র মহড়া দিয়ে এলাকায় ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। এ সময় তারা বিএনপি প্রার্থী ও সমর্থদের বাড়িতে বাড়িতে হামলা করে ব্যাপক তান্ডবলীলা চালায়। একইদিনে বান্দরবানের রুমা উপজেলায় মং নু মারমা নামে এক ইউপি মেম্বারকে অপহরণ করে হত্যা করে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। এ ছাড়া মুন্সিগঞ্জে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের গুরিতে ৭জন গুলিবিদ্ধ হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে নির্বাচনী সহিংসতায় আরো দুই শতাধিক লোক আহত হয়েছে। গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় রাজাবাড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রার্থী কুতুবউদ্দিনের ওপর আওয়ামী সন্ত্রাসীরা সশস্ত্র হামলা করে বলে তিনি অভিােযগ করেন।
রিজভী বলেন, সারাদেশের মানুষ ভোটপ্রহসনে ক্লান্ত ও আতংকিত। ক্ষমতাসীনদের অস্ত্রের ঝনঝনাতিতে গ্রামে গ্রামে ভয়ঙ্কর আতংক ছড়িয়ে পড়ছে। তারা সশস্ত্র মহড়া দিয়ে সারাদেশে বিএনপি কর্মী ও ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে না যেতে হুমকি ধামকি আগের মতোই অব্যাহত রেখেছে। নির্বাচন নিয়ে প্রশাসন ও সরকারি দলের যৌথ নৃশংস তান্ডব বিরোধী দল গণমাধ্যম যতই েচচামেচি করুক নির্বাচন কমিশনের উচ্চপদস্থ পদাধিকারীরা ভোট অবাধ ও শান্তিপূর্ণ হয়েছে বলে নির্লজ্জের মতো বিবৃতি দিয়ে যাচ্ছেন।

তিনি বলেন, দুই দফা নির্বাচনে ব্যাপক সহিংসতায় প্রাণহানী ও আহতের ঘটনার মধ্যে দিয়ে নির্বিচারে ভোট জালিয়াতির সচিত্র সংবাদ দেশ বিদেশে দেশী বিদেশী মানুষেরা অবলোকন করলেও নির্বাচন কমিশন প্রতিনিয়ত শান্তির ললিত বাণী প্রচার করে চলেছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্যান্য কমিশনারবৃন্দ শাশ্বত মিথ্যাবাদী হিসাবে আজ দেশের মানুষের কাছে আখ্যায়িত হয়েছেন। ইউপি নির্বাচন নিয়ে শাসক দলের ক্যাডারদের বিরতিহীন রক্তপায়ী হিং¯্র তান্ডবে দেশের মানুষ অপমানিত ও অত্যাচারিত হলেও নির্বাচন কমিশনের সর্বোচ্চ পদাধিকারীরা লাভজনক চাকুরির ঠান্ডাঘরের মায়ায় ভোটারবিহীন সরকারের নির্দেশে অনাচার আর জালিয়াতিকে বৈধতা দিয়ে যাচ্ছেন।

রিজভী বলেন, দুই ধাপের সহিংস নির্বাচন দেশে বিদেশে ঘৃণিত হলে নির্বাচন কমিশন সকল মিথ্যাচার করার পরেও এক পর্যায়ে প্রেসনোট দিয়ে বলেছিল নির্বাচনের পরবর্তী ধাপগুলো শান্তিপূর্ণ হবে। অথচ অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে তৃতীয় ও চতুর্থ দফা নির্বাচনের প্রাক্কালে নির্বাচনী পরিবেশ যেন ছায়াসুনিবিড় গ্রামে অসংখ্য নেকড়ের আক্রমনের মতো। প্রাণহানী, বিরোধী দলের প্রার্থীদের অপহরণ ও মনোনয়নপত্র কেড়ে নেওয়া, নির্বাচনী প্রচারণায় বাধা, ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে না যাওয়ার জন্য হুমকির মাত্রা বৃদ্ধি করা ইত্যাদি নির্বাচন বিনাশী অপকর্ম অব্যাহত রয়েছে।

তিনি আরো বলেন, নির্বাচনী সহিংসতা ও মৃত্যুর মিছিল যেন থামছেই না। ভোট সন্ত্রাসের অতিমাত্রার কারণ আওয়ামী সশস্ত্র ক্যাডারদের নির্বাচনী এলাকায় অবাধ বিচরণের সুযোগ দেয়া। যাদের অপকর্মে সরকার ও নির্বাচন কমিশন যৌথভাবে বরাভয় দিচ্ছে। বর্তমান ভোটারবিহীন সরকার ও নির্বাচন কমিশন মিলে নির্বাচনকে আগামী প্রজন্মের কাছে প্রতœতাত্ত্বিক নিদর্শণ বানানোর অভিলাষ নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। যাতে বর্বর একদলীয় আওয়ামী সরকার চিরদিনের জন্য ক্ষমতায় থাকতে পারে।

কিন্তু গণবিরোধী অবৈধ সরকার ধাবমান বাঘের পিঠে সওয়ার হয়ে ছুটাছুটি করছে। যে কোনো মুহুর্তে ছিটকে পড়ার সময় চলে এসেছে। আর এ পতনে বিশ্বের সকল স্বৈরাচার চমকে ওঠবে।