একটি সামাজিক সমস্যা

0
1234
blank
blank

শাহ্ আব্দুল হান্নান: কয়েক দিন আগে আমার বাসায় দু’জন মহিলা অ্যাডভোকেটের সাথে কথা হচ্ছিল। তারা মহিলাদের একটি বড় সমস্যার কথা তুলে ধরেন। তারা বলেন, সমাজে গ্রামাঞ্চলে ও শহরে তালাকের হার বৃদ্ধি পাচ্ছে। এসব নারীর সমস্যা হচ্ছে, তালাকের পর তাদের যাওয়ার কোনো স্থান থাকে না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পিতা না থাকলে বাপের বাড়ি যাওয়াতেও সমস্যা হয়। ভাইয়েরা এবং ভাইদের পরিবার বিষয়টি সদয়ভাবে নিতে চায় না; অবশ্য এটা সব ক্ষেত্রে নয়, অনেক ক্ষেত্রে। পিতা থাকলে সমস্যা কিছুটা কম হয়।
এ সমস্যা আলোচনা করতে গিয়ে আমি এবং ওই দুই আইনজ্ঞ মহিলা একমত হয়েছি যে, নারীদের পিতা-মাতার সম্পত্তিতে যে অধিকার ইসলাম দিয়েছে, সে অধিকার যদি পুরোপুরিভাবে পিতার পরিবারে প্রতিষ্ঠিত হয়, তাহলে এ ধরনের নারীদের দুর্ভোগ অনেক কম হবে। আমরা আরো একমত হই, পিতার বাসস্থান যদি ক্ষুদ্র হয়, তার মধ্যেও কন্যাদের সম্পত্তির অধিকার (বিশেষ করে ঘরবাড়িতে অধিকার) পূর্ণরূপে প্রতিষ্ঠিত হওয়া প্রয়োজন। এটি দারিদ্র্য সমস্যার সমাধান নয়, এটি এসব নারী সম্পর্কিত সামাজিক সমস্যার অন্যতম সমাধান।
এ প্রসঙ্গে এ কথাও বলা ভালো, পিতার সম্পত্তিতে কন্যার অধিকার পুত্রের তুলনায় কম তবে এ আলোচনায় আমরা যাচ্ছি না। কিন্তু এটুকু উল্লেখ করছি, সব বিচারে দেখা গেছে, যদি সম্পত্তির অধিকারের সাথে ভরণপোষণের অধিকার একত্রে দেখা হয়- তাহলে ইসলামের এ সংক্রান্ত আইনে কোনো অসঙ্গতি দেখা যাবে না। উপরন্তু দেখা যাবে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে নারীরই সুবিধা বেশি। এ সম্পর্কে দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রভাষক ও যুক্তরাষ্ট্রে পাঠরত কানিজ ফাতিমার লেখা রয়েছে। যেটি গুগল সার্চ করে যে কেউ দেখতে পারেন (kaniz fatima- inherritence)।
এ কথাও উল্লেখ করা প্রয়োজন, তালাক হলে স্ত্রীর ভরণপোষণের অধিকার সাবেক স্বামীর দায়িত্বে থাকে না (ইদ্দতের সময় ছাড়া)। সেই সময় সেই নারী যদি নিজের ভরণপোষণ না করতে পারেন, তাহলে তার ভরণপোষণের দায়িত্ব আত্মীয়স্বজনের ওপর বর্তায়। তা না হলে সরকারের ওপর বর্তায়। ভারতে এ ব্যাপারে দায়িত্ব প্রাদেশিক ওয়াকফ বোর্ডের ওপর ন্যস্ত রয়েছে। তা করা হয়েছে আইন করে।
এই ভিত্তিতে আমি মনে করি, বাংলাদেশ সরকার ও জাতি নিম্নরূপ ব্যবস্থা নিতে পারে :
(ক) ইসলামি আইন মোতাবেক সর্বাবস্থায় পিতার সম্পত্তিতে কন্যার অধিকার, বিশেষ করে ঘরবাড়ির ওপর বহাল করতে হবে। এ ব্যাপারে সারা দেশে প্রজ্ঞাবান আলেম ও সমাজপতিদের বিশেষ নজর দিতে হবে। তা করা হলে সব নারীর আর্থিক অবস্থা তুলনামূলকভাবে ভালো হবে এবং তালাকের ক্ষেত্রে তাদের সমস্যা অপেক্ষাকৃত কম হবে।
(খ) সরকারকে একটি আইন করার পরামর্শ দিতে চাই, তা হলো- সব তালাকপ্রাপ্ত নারী নিজেদের ভরণপোষণে সক্ষম নন এবং যাদের ভরণপোষণে কোনো আত্মীয় নেই, তাদের ভরণপোষণ সরকার থেকে করা হোক একটি প্রকল্পের আওতায়। যেমন আমাদের প্রকল্প রয়েছে বেকারদের, বৃদ্ধদের ও বিধবাদের জন্য। তাদের আলাদা শ্রেণী হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। তাদের সংখ্যা প্রকৃতপক্ষে বেকারদের বা অভাবী বৃদ্ধদের তুলনায় অনেক কম। তাই তাদের জন্য আলাদা শ্রেণী না করার কোনো যৌক্তিকতা দেখা যায় না।