এমপিওর দরজা খুলছে

0
606
blank
blank

বেসরকারি স্কুল, কলেজ ও মাদরাসার এমপিওভুক্তির (মান্থলি পেমেন্ট অর্ডার) সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে সরকার। ছয় বছর বন্ধ থাকার পর অবশেষে জট খুলছে নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তির। এ ছাড়া তথ্য ও প্রযুক্তি এবং উৎপাদন ব্যবস্থাপনা বিপণন শিক্ষকদেরও এমপিওভুক্তির সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

এমপিরা নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করার তাগিদ দিচ্ছেন। এ নিয়ে কয়েক দফা শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ জাতীয় সংসদে এমপিদের তোপের মুখেও পড়েছেন। এমপিরা নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করার তালিকা দেয়ার পরও তা না হওয়ায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। সারাদেশে এমপিদের চাপ এবং আগামী সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে সরকার। তবে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির জন্য কোনো অর্থ বরাদ্দ নেই। এ জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে থোক বরাদ্দ দেয়া হতে পারে বলে একটি সূত্র জানিয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের পরামর্শে এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

২০১০ সালে সর্বশেষ ১ হাজার ৬২৪টি প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হয়েছিল। ২০১১ সালে ১০০০ স্কুল-মাদরাসা এমপিওভুক্তি করার ঘোষণা দেয়া হলেও তা করা হয়নি। নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি বন্ধ রয়েছে ২০১১ সাল থেকে। এতে নন-এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের ভীষণ কষ্টে দিন কাটছে। এমপিওভুক্তির দাবিতে অন্তত ২৫ বার আন্দোলন হয়েছে। সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে আশ্বাসও মিলেছে। কিন্তু এমপিওভুক্ত করা হয়নি।

এদিকে এমপিও নীতিমালা খতিয়ে দেখতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাদরাসা ও কারিগরি বিভাগের মাদরাসা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব রওনক জাহানকে আহ্বায়ক করে গঠিত ছয় সদস্যের একটি কমিটি কাজ করছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন কারিগরি অধিদফতরের মহাপরিচালক অশোক কুমার বিশ্বাস, মাদরাসা অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. বিল্লাল, কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগের যুগ্ম সচিব (মাদরাসা) এনামুল হক, যুগ্ম সচিব (কারিগরি) সফিউদ্দিন আহমেদ এবং মাদরাসা বিভাগের উপসচিব ওয়াদুদ হোসেন। কমিটিকে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার আলোকে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির নীতিমালা চূড়ান্ত করতে বলা হয়েছে। সংশোধিত বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা গ্রহণ ও প্রত্যয়ন বিধিমালা ও ২০০৬ এর আলোকে সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক নিয়োগ পদ্ধতি এমপিও ও নীতিমালা অন্তর্ভুক্তকরণ এবং জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫ এমপিও নির্দেশিকা অন্তর্ভুক্ত করতে বলা হয়েছে।

১১ ডিসেম্বর সচিবালয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় তথ্য ও প্রযুক্তি এবং উৎপাদন ব্যবস্থাপনা বিপণন শিক্ষকদের এমপিও ছাড়ের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ওই বৈঠকে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে নতুন শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত বিষয়ের শিক্ষকের এমপিওভুক্তি করা হবে।

দেশে এখন এমপিওভুক্ত স্কুল, কলেজ ও মাদরাসার সংখ্যা প্রায় ২৮ হাজার। এসব প্রতিষ্ঠানে প্রায় পাঁচ লাখ শিক্ষক-কর্মচারী কর্মরত রয়েছেন। নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা প্রায় সাত হাজার। এসব প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘদিন ধরে এক রকম বিনা বেতনে চাকরি করছেন কয়েক লাখ শিক্ষক-কর্মচারী। বর্তমানে দেশে ২৭ হাজার এমপিওভুক্ত বেসরকারি স্কুল, কলেজ ও মাদরাসা রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক রয়েছেন ৩ লাখ ৫৭ হাজার ২৮৮ জন এবং কর্মচারী রয়েছেন ১ লাখ ৫ হাজার ৩৭৫ জন। বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে স্কুল ১৬ হাজার ১১৮টি, কলেজ ২৩৭০টি এবং মাদরাসা রয়েছে ৭ হাজার ৫৯৭টি। অভিযোগ আছে, অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে ৩ হাজারের বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অপ্রয়োজনীয়। শিক্ষার্থীর সংখ্যা খুবই কম। পাবলিক পরীক্ষার ফলাফলও অত্যন্ত হতাশাব্যঞ্জক। তারপরও এমপিওভুক্ত হওয়ার কারণে এসব প্রতিষ্ঠানের পেছনে প্রতি মাসে সরকারের কোটি কোটি টাকা গচ্চা যাচ্ছে।

অন্যদিকে এমপিওভুক্ত হওয়ার জন্য যেসব শর্ত পূরণ করা উচিত তার সব থাকা সত্ত্বেও সাত হাজার স্কুল, কলেজ ও মাদরাসা এমপিওভুক্ত হতে পারেনি। রাজনৈতিক বিবেচনা, স্থানীয় এমপির সুপারিশ ছাড়াও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী সংখ্যা, অবস্থানগত দিক, পাবলিক পরীক্ষার ফলাফল বিবেচনায় আনা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এমপিওভুক্তির সুনির্দিষ্ট নীতিমালা না থাকায় অনেক পুরনো প্রতিষ্ঠানও দীর্ঘদিন এমপিওবঞ্চিত থাকছে। দলীয় প্রভাব কিংবা অবৈধ লেনদেনের মাধ্যমে অনেক ক্ষেত্রে নামমাত্র সাইন বোর্ডধারী প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হয়েছে। বহু পুরনো ও যোগ্য প্রতিষ্ঠান বাদ পড়ছে। এতে এমপিও খাতে কোটি কোটি টাকা অপচয় হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, এমপিও নীতিমালার আলোকে নতুন একটি নীতিমালা প্রণয়ন করা হবে। বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন (এনটিআরসিএ) মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ এবং ৮ম পে-স্কেল বাস্তবায়ন হয়েছে। এতে করে এমপিওভুক্তির ক্ষেত্রে এসব বিষয় বিবেচনায় আনতে হবে।