ঐক্যফ্রন্টকে সংসদে আসার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

0
617
blank

বিএনপি’র নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের সংসদে কথা বলার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, একাদশ জাতীয় নির্বাচনে নৌকার বিজয় জনগণের স্বতঃস্ফুর্ত ভোটের রায়। জঙ্গি-সন্ত্রাস-মাদক ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ায় একাদশ জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগকেই বেছে নিয়েছে দেশের জনগণ। জনগণ আর জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাস-মাদক-অগ্নিসন্ত্রাস আর দেখতে চায় না, নির্বাচনে তাই প্রমাণ হয়েছে। তাই বিএনপি তথা ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচিত নেতাদের বলবো, জনগণের ভোটের প্রতি সম্মান দেখিয়ে সংসদে আসুন, যত কথা বলার আছে বলুন, আমরা কোনো বাধা দেব না।

সোমবার রাতে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনীত ধন্যবাদ প্রস্তাবটি ভোটে দিলে তা সর্বসম্মতক্রমে গৃহীত হয়। এর আগে শেখ হাসিনা সুলতান মোহাম্মদ মনসুরকে শপথ নিয়ে সংসদে আসার জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, দেশপ্রিয় ভট্টাচার্যদের অনেকে সেনা প্রিয় বলেন। দেশের এমন কিছু লোক আছে দেশে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি আসলেই তাদের সুযোগ আসে, খুশি হন। তারা কে কি বলল কেয়ার করি না। আমি কেয়ার করি দেশের জনগণকে। তাদের মতো অত জ্ঞানী-গুণি না হলেও দেশকে আমরা উন্নয়ন করতে পারি তা প্রমাণ করেছি।

সংসদ নেতা বলেন, জনগণের কাছে যে ওয়াদা দিয়েছি, তা রক্ষা করাই আমাদের কাজ। দুর্নীতি করতে আসিনি, জনগণের সেবা করতে এসেছি। দুর্নীতি অনেক কমিয়ে আনতে পেরেছি। চেষ্টা করে যাচ্ছি দুর্নীতি দূর করে উন্নয়ন করতে। দুর্নীতি যথেষ্ট কমাতে পেরেছি বলেই এত উন্নয়ন-সমৃদ্ধি দৃশ্যমান হয়েছে। মানুষের মধ্যে দুর্নীতির বিরুদ্ধে চেতনা সৃষ্টি করছি। কারণ অসৎ উপায়ে বিরানী খাওয়ার চেয়ে সৎভাবে বসবাস করে নুন খেলেও তৃপ্তি।

বিরোধী দলের বক্তব্যের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সৌদি আরবের সঙ্গে কোনো চুক্তি নয়, সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। রাশিয়া, চীন, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভিয়েতনামসহ প্রতিরক্ষা চুক্তি পৃথিবীর অনেক দেশের সঙ্গে চুক্তি আছে। বিশ্ব গ্লোবাল ভিলেজ। স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য আমাদের সামরিক বাহিনী প্রয়োজন। তাই সশস্ত্র বাহিনীকে আধুনিকভাবে গড়ে তুলছি। ফোর্সেস গোল প্রণয়ন করে তা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। যুদ্ধ বিধ্বস্ত কুয়েতকে গড়ে তুলতে আমাদের সশস্ত্র বাহিনী কাজ করে যাচ্ছে। সৌদি আরবের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক করেছি অবকাঠামো নির্মাণ, কারিগরী সহায়তায়, দেশটির স্থল সীমানায় মাইন অপসারণের জন্য। তিনি দৃঢ়কণ্ঠে বলেন, অন্য কোনো দেশের যুদ্ধ হলে সেখানে আমাদের সেনাবাহিনী সেই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করবে না। পবিত্র মক্কা ও মদিনার নিরাপত্তার রক্ষার প্রয়োজন হয়, সেখানে আমাদের সশস্ত্র বাহিনী কাজ করবে। এখনে ভুল বোঝাবুঝির কোনো অবকাশ নেই।

কওমী মাদরাসা প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, এ ভুখন্ডে শিক্ষা শুরু কওমী মাদরাসা থেকে। দেশে ২০ হাজারের মতো মাদরাসা রয়েছে। ২০ লাখের মতো শিক্ষার্থী রয়েছে। এতিম, গরিব, দরিদ্র ঘরের ছেলে-মেয়েরা সেখানে পড়তে যায়। এই মাদরাসাকে আমরা অস্বীকার করতে পারি না, সমাজের একটি অংশ। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন কওমী মাদরাসা পাঁচটি বোর্ডে বিভক্ত ছিল। মাদরাসা থেকে শিক্ষা নিয়ে কোথাও চাকরি করতে পারতো না। এরা তো দেশেরই সন্তান, তাদেরকে আমরা ফেলে দেব।

কারিকুলাম তৈরি করে কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয় সেজন্য উদ্যোগ নেই। দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টার ফলে সমঝোতায় নিয়ে আসি, দেওবন্দের ক্যারিকুলাম তারা গ্রহণ করেছে। দাওরাইয়ে হাদিসকে আমরা মাস্টার্সের স্বীকৃতি দিয়েছি। ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি পার্থিক শিক্ষার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। তিনি আরো বলেন, মাদরাসা জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদের কারখানা এ অভিযোগের সঙ্গে আমরা একমত নই। ইংরেজী মাধ্যমে পড়াশোনা করা উচ্চবিত্তের সন্তান জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়েছে। সবকিছু থাকার পরও কেন জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ছে? শুধুমাত্র মাদরাসাকে দোষারোপ করলে চলবে না। সংসদে সর্বসম্মতক্রমে আইন পাস করেছি, এ নিয়ে আর কোন কথা বা প্রশ্ন তো থাকতে পারে না বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এক সময় বাংলাদেশ বলতেই বুঝতো বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, দুর্ভিক্ষের দেশ। এখন তা কেউ বলে না। এখন উন্নত বিশ্বও বলে বাংলাদেশ মানে উন্নয়নের রোল মডেল। সেই সম্মানটা আমরা অর্জন করেছি। আমরা উন্নত অনেক দেশের কাছাকাছি পৌঁছে গেছি, এটাই হচ্ছে বাস্তবতা। দেশটাকে আমরা উন্নত করতে বিশেষ দৃষ্টি দিয়েছি। দেশের ভেতরে সংঘাত, সংঘর্ষ, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, মাদক থাকবে না, এর বিরুদ্ধে আমরা কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছি। আমরা জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাস-মাদক ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ শীর্ষক নির্বাচনী ইশতেহারে কীভাবে আগামী বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চাই তা স্পষ্ট উল্লেখ করা হয়েছে।

সংসদ নেতা বলেন, দেশকে আমরা কোনো পর্যায়ে নিয়ে এসেছি তা রাষ্ট্রপতির ভাষণে উঠে এসেছে। সংসদে শক্তিশালী বিরোধী দল গড়ে উঠুক আমরা তাই চাই। নির্বাচনকে বানচাল করার চক্রান্ত সবসময় ছিল। জনগণ ভোটের অধিকার প্রয়োগ করে আমাদের নির্বাচিত করেছে। নির্বাচনের আগে প্রতিটি দলের সঙ্গে সংলাপ করেছি। ৭০টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে দীর্ঘসময় ধরে সংলাপ করেছি।

সকল দল নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রথম ভোটাররা ব্যাপকভাবে আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়েছে। মহিলারাও ব্যাপকভাবে ভোট দিয়েছে। ১০ বছর যে উন্নয়ন করেছি, যার সুফল গ্রাম-বাংলার প্রতিটি মানুষের ঘরে পৌঁছেছে। জনগণের মধ্যে আস্থা-বিশ্বাস সৃষ্টি হয়েছে বলেই আওয়ামী লীগের পক্ষে গণরায় দিয়েছে। নতুন প্রজন্ম, মহিলাসহ সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ আমাদের প্রতি আস্থা রেখেছে, সমর্থন দিয়েছে বলেই আমরা দেশ সেবার সুযোগ পেয়েছি।

দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, দুর্নীতি সমাজে প্রবেশ করেছে সামরিক স্বৈরশাসনের কারণে। দুর্নীতির সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবেশ করেছে। আমাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ বিশ্ব ব্যাংক এনেছিল, প্রমাণ করতে পারেনি। দুর্নীতি করতে আসিনি, জনগণের সেবা করতে এসেছি। দুর্নীতি অনেক কমিয়ে আনতে পেরেছি। চেষ্টা করে যাচ্ছি দুর্নীতি দূর করে উন্নয়ন। দুর্নীতি যথেষ্ট কমাতে পেরেছি বলেই এতো উন্নয়ন-সমৃদ্ধি দৃশ্যমান হতো না। মানুষের মধ্যে দুর্নীতির বিরুদ্ধে চেতনা সৃষ্টি করছি। সৎভাবে বসবাস করে নুন খেলেও তৃপ্তি, অসৎ উপায়ে বিরানী খাওয়ার চেয়ে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এবারের নির্বাচনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনে এসেছিল, পছন্দ মতো সংখ্যা আসন পায়নি। ২০০৮ সালের নির্বাচনে ৮৪ ভাগ ভোট পড়েছিল, ২০১৮ সালে ভোট সংখ্যা ৮০ ভাগ। ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত মাত্র ২৮টি আসন পেয়েছিল। আদৌ নির্বাচনে কী তারা করেছে? ঐক্যফ্রন্ট যাকে প্রধান করেছে তিনি নির্বাচন করেননি। বিএনপির প্রধান দুইজনের মধ্যে একজন এতিমের টাকা আত্মসাতের কারণে কারাগারে, আরেকজন খুন-দুর্নীতির দণ্ডিত পলাতক আসামি। যে দলের চেয়ারপার্সন একজন কারাগারে, অন্যজন দেশান্তরী। জনগণ কী দেখে ভোট দেবে। তারা দেখাতে পারেনি নির্বাচিত হলে কে প্রধানমন্ত্রী হবেন, কে দেশ চালাবেন। এ কারণে জনগণ আওয়ামী লীগকে বেছে নিয়েছে, তাদের ভোট দেয়নি।