করোনা পরিস্থিতিতে যেখানে হবে ঈদের জামাত

0
518
blank
blank

করোনা পরিস্থিতির প্রভাব পড়েছে ঈদ জামাতেও। স্বাভাবিক সময়ে ঈদগাহে জামাত অনুষ্ঠিত হলেও এবার দেশের কোথাও ঈদগাহে জামাত অনুষ্ঠিত হবে না। জামাতের আয়োজন করা হবে মসজিদে। নামাজ শেষে হাত মিলিয়ে মুসল্লিদের কোলাকুলিও হবে না। ধর্ম মন্ত্রণালয় স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে পবিত্র ঈদ-উল-ফিতরের জামাত মসজিদে আদায়ের এসব নির্দেশনা দিয়েছেন। এদিকে মন্ত্রাণালয়ের নির্দেশনা অনুসরণের আহবান জানিয়েছেন আলেমরাও।

স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে পবিত্র ঈদ-উল-ফিতরের নামাজের জামাত আদায় প্রসঙ্গে ১৪ মে বিভিন্ন নির্দেশনা জারি করে ধর্ম মন্ত্রণালয়। এতে বলা হয়, করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে মুসল্লিদের জীবনের ঝুঁকি বিবেচনা করে ঈদগাহ বা খোলা জায়গার পরিবর্তে ঈদের নামাজের জামাত মসজিদে আদায় করতে হবে। প্রয়োজনে একই মসজিদে একাধিক জামায়াত অনুষ্ঠিত হবে। জামাত শেষে কোলাকুলি এবং পরস্পর হাত মেলানো পরিহার করার জন্যও অনুরোধ করেছে ধর্ম মন্ত্রণালয়।
দেশের সবচেয়ে বড় ঈদের জামাতের আয়োজন হয় কিশোরগঞ্জ জেলার ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে। করোনাভাইরাসের কারণে লাখ-লাখ মুসল্লি নিজেদের প্রিয় ঈদগাহে এবার নামাজ পড়তে পারবেন না। ঈদগাহের গ্র্যান্ড খতিব আল্লামা ফরীদউদ্দিন মাসঊদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘করোনা মহামারির বিরুদ্ধে সারা মানবজাতি লড়াই করছে। আল্লাহর রহমতে এবারের ঈদে সারা মুসলিম জাহানের মানুষ এরথেকে মুক্তি পেতে দোয়া করবে। তবে, এবার আমাদের শোলাকিয়া ঈদগাহসহ দেশের অন্য ঈদগাহে ঈদের নামাজ পড়া যাবে না, নামাজ আদায় করতে হবে মসজিদে।’

নিজের মুসল্লিদের উদ্দেশে আল হাইয়াতুল উলইয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়্যাহ’র অন্যতম সদস্য মাওলানা মাসঊদ বলেন, ‘শোলাকিয়া ঈদগাহে নামাজ পড়তে প্রতি ঈদে লাখ-লাখ মুসল্লি আসতেন। এবার সে সুযোগ নেই। ইতোমধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঈদগাহে নামাজ বাতিল করা হয়েছে। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে যেসব মুসল্লিরা আসতেন, তারা এবার নিজেদের স্থানীয় মসজিদে নামাজ পড়বেন এবং আল্লাহর কাছে দোয়া করবেন। আমি সব মুসল্লিদের উদ্দেশে বলতে চাই, স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঈদের নামাজ আদায় করুন, এই মহামারি থেকে বাঁচতে আল্লাহর কাছে মোনাজাত করুন।’

বিগত বছরগুলোতে হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে অবস্থিত জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হতো। ঈদের সপ্তাহখানেক আগেই শুরু হতো কাজ। তবে এবার সেই প্রস্তুতি নেই জাতীয় ঈদগাহে। এই ঈদগাহের জামাতে রাষ্ট্রপতি, মন্ত্রী-সচিবসহ সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ ব্যক্তিসহ সাধারণ মানুষ অংশ নিতেন। তবে এবার তা হচ্ছে না। এর বিপরীতে প্রতি বছরের মতো বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে পর্যায়ক্রমে পাঁচটি ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে। সকাল ৭টা, ৮টা, ৯টা, ১০ টা ও ১০টা ৪৫ মিনিটে অনুষ্ঠিত জামাতে মুসল্লিরা অংশ নিতে পারবেন।

এ প্রসঙ্গে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক আনিস মাহমুদ বলেন, জনস্বাস্থ্য বিবেচনা করে ঈদ জামাত নিয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। মুসল্লিদের জীবনের ঝুঁকি বিবেচনা করে ঈদগাহ বা খোলা জায়গার পরিবর্তে মসজিদে নামাজ আদায়ের জন্য বলা হয়েছে। জায়গা না হলে প্রয়োজনে একই মসজিদে একাধিক জামাত করা যাবে।

আনিস মাহমুদ আরও বলেন, দেশের খ্যাতনামা আলেমদের সঙ্গে আলোচনা করে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্যঝুঁকি বিবেচনা করে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলারও অনুরোধ জানান তিনি।

এদিকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশও মুসল্লিদের ঈদের নামাজের বিধি নিষেধ মেনে চলতে আহবান জানিয়েছে। শুক্রবার (২২ মে) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ডিএমপি কমিশনার শফিকুল ইসলাম বলেন, মহামারি করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ঈদ-উল-ফিতর উদযাপন করতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ সম্মানিত ধর্মপ্রাণ নাগরিকদের অনুরোধ জানাচ্ছে।

অন্যদিকে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় আরও বলা হয়, ঈদ জামাতের সময় মসজিদে কার্পেট বেছানো যাবে না। নামাজের পূর্বে সম্পূর্ণ মসজিদ জীবানুনাশক দ্বারা পরিষ্কার করতে হবে। মুসল্লিরা প্রত্যেকে নিজ নিজ দায়িত্বে জায়নামাজ নিয়ে আসবেন। মসজিদের প্রবেশদ্বারে হ্যান্ড স্যানিটাইজার/হাত ধোয়ার ব্যবস্থাসহ সাবান-পানি রাখতে হবে। প্রত্যেককে নিজ নিজ বাসা থেকে ওজু করে মসজিদে আসতে হবে এবং ওজু করার সময় কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে। ঈদের নামাজের জামাতে আগত মুসল্লিদের অবশ্যই মাস্ক পরে মসজিদে আসতে হবে। মসজিদে সংরক্ষিত জায়নামাজ ও টুপি ব্যবহার করা যাবে না। ঈদের নামাজ আদায়ের সময় কাতারে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে দাঁড়াতে হবে। এক কাতার অন্তর অন্তর কাতার করতে হবে। শিশু, বৃদ্ধ, যে কোনও অসুস্থ ব্যক্তি এবং অসুস্থদের সেবায় নিয়োজিত ব্যক্তি ঈদের নামাজের জামাতে অংশ নিতে পারবেন না।

নির্দেশনা মানা না হলে স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলেও জানান ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক আনিস মাহমুদ।

তিনি বলেন, ইতোমধ্যে এ নির্দেশনা সব জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ সংশ্লিষ্টদের জানানো হয়েছে। যাতে নির্দেশনা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়।

এদিকে সরকারের এ সিদ্ধান্তকে মেনে চলার আহবান জানিয়ে রাজধানীর লালবাগের জামিয়া কোরআনিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক মুফতি ফয়জুল্লাহ বলেন, ইসলাম মানুষের কল্যাণের কথা বলে। মানুষের জীবনের ঝুঁকি হ্রাস করতে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করতে সরকার নির্দেশনা দিয়েছে। এ নির্দেশনা অনুসরণ করে পবিত্র ঈদ-উল-ফিতরের নামাজ মসজিদে আদায় করলে শরিয়তের কোনও বিধানের খেলাপ হবে না।

জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা মাহফুজুল হক বলেন, এমনিতেই আবহাওয়া খারাপ হলে ঈদগাহের পরিবর্তে মসজিদে নামাজ আদায় করা হয়। এ সময়ের আবহাওয়াও দুর্যোগপূর্ণ হওয়ার শঙ্কা আছে। ফলে করোনার কারণে মসজিদে ঈদের নামাজ আদায়ে কোনও সমস্যা নেই। তিনি সবাইকে নির্দেশনা অনুসরণ করার আহবান জানান।