কুশিয়ারার ভাঙ্গনে বিলীন হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত জগন্নাথপুরের রানীগঞ্জ বাজার

0
586
blank
blank

জগন্নাথপুর: সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার কুশিয়ারা নদীর ভাঙ্গনে বিলীন হচ্ছে রানীগঞ্জ বাজার। দীর্ঘদিন ধরে কুশিয়ারার ভাঙ্গনে প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী রানীগঞ্জ বাজার ক্রমশ বিলীন হলেও ভাঙ্গন রোধে নেয়া হচ্ছেনা কোন পদক্ষেপ। স্থানীয় সংসদ সদস্য অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক বরাবরে ডিও পত্রের মাধ্যমে রানীগঞ্জ বাজার সংরক্ষন প্রকল্প গ্রহনের সুপারিশের প্রেক্ষিতে ভাঙ্গন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড ২৪ কোটি ৮২ লাখ ১৯হাজার ৩৯৮ টাকার একটি প্রকল্প গ্রহন করলেও প্রকল্পটি বর্তমানে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। এলাকাবাসী ও পাউবো সূত্র জানায়, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী রানীগঞ্জ বাজারটি কুশিয়ারা নদীর ভাঙ্গনে ক্রমশ বিলিন হচ্ছে। বাজার ছাড়িয়ে ভাঙ্গন এখন পাশের বাগময়না, রানীনগর, আলমপুর, বালিশ্রী, টেখইয়া, হলিকোনা বাজার,রৌয়াইল বাজারে হানা দিয়ে শত শত দোকান-পাট, ঘরবাড়ি, স্কুল, মসজিদ নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ১৯৯৬ সালে ঐতিহ্যবাহী এ বাজার গুলো ভাঙ্গন থেকে রক্ষা করতে তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুস সামাদ আজাদের নির্দেশে পাউবো একটি প্রকল্প গ্রহণ করে। যে কারণে কিছুটা ভাঙ্গন রোধ হলেও বর্তমানে ভাঙ্গন ভয়াবহ আকার ধারন করেছে। রানীগঞ্জ বাজারের প্রবীণ ব্যবসায়ী ধনেশ চন্দ্র রায় বলেন, রানীগঞ্জ বাজার প্রতিনিয়ম ভাঙ্গছে। ভাঙ্গনের কবলে পড়ে বিলীন হচ্ছে আমাদের ঘরবাড়ি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। যে কারণে বাজারের মানচিত্র বদলে গেছে।
বাগময়না গ্রামের ইউপি সদস্য জুয়েল বলেন, কুশিয়ারার ভাঙ্গনে আমাদের গ্রামের অনেক বসতবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে এখন অনেক পরিবার নিঃস্ব হয়ে অন্যের বাড়িতে আশ্রিত।

রানীগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মজলুল হক বলেন, ৭১ সালে পাকবাহিনী ঐতিহ্যবাহী রানীগঞ্জ বাজারে এসে বাজারের নিরীহ মুক্তিকামী ব্যবসায়ীদেরকে জড়োকরে কুশিয়ারার তীরে দাঁড় করিয়ে গণহত্যা চালায়। এই গণহত্যার স্মৃতি বিজড়িত ঐতিহ্যবাহী বাজারটিতে ভাঙ্গনের কবলে পড়ে ভৌগলিক পরিবর্তন এসেছে। ঐতিহ্যবাহী বাজারটি রক্ষা করতে দ্রুত প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে হবে। তিনি বলেন,মাননীয় সংসদ সদস্য রানীগঞ্জ বাজারটিকে রক্ষা করতে সংসদে পানি সম্পদ মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষন করেন। সম্প্রতি পানি সম্পদ মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী সরেজমিনে কুশিয়ারার ভাঙ্গন দেখে প্রকল্প বাস্তবায়নের আশ্বাস দিয়ে গেছেন।

রানীগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুস সামাদ বলেন, কুশিয়ারার ভাঙ্গন থেকে রানীগঞ্জ বাজারটি রক্ষা করা না হলেও মুক্তিযুদ্ধের গণহত্যার স্মৃতিসম্ভ,রানীগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়,প্রাথমিক বিদ্যালয়ও এক সময় বিলীন হয়ে যাবে। তাই দ্রুত রানীগঞ্জ বাজার ভাঙ্গনরোধে পদক্ষেপ নেয়া দরকার।

জগন্নাথপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আকমল হোসেন বলেন, কুশিয়ারার ভাঙ্গনে রানীগঞ্জ ও ফেচির বাজার অসীত্ব হারাতে বসেছে। এ দুটি বাজারকে রক্ষায় দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ জগন্নাথপুরবাসীর দাবি। তিনি বলেন, কুশিয়ারা নদীর ওপর রানীগঞ্জ সেতু হবে তাই সেতু নির্মাণের আগে ভাঙ্গন রোধ করা দরকার।

পানি উন্নয়ন বোর্ডেরসুনামগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আফছার উদ্দিন বলেন, কুশিয়ারা নদীর ভাঙ্গনে রানীগঞ্জ বাজারের ভৌগলিক পরিবর্তন হয়েছে ব্যাপক। বাজারটি রক্ষা করতে একটি প্রকল্প অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। প্রকল্পটি অনুমোদন হলেই কাজ শুরু হবে।

সুনামগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, আমার নির্বাচনী এলাকায় কুশিয়ারা নদীর ভাঙ্গনে রানীগঞ্জ ও ফেচির বাজার রক্ষা করতে ডিও পত্রের মাধমে আবেদন করেছি। ইতিমধ্যে আমার আমন্ত্রনে পানি সম্পদ মন্ত্রী ও পানিসম্পাদ প্রতিমন্ত্রী সরেজমিন ঘুরে দেখে প্রকল্প বাস্তবায়নের আশ্বাস দিয়েছেন। আশা করছি বাজারগুলো ভাঙ্গনের কবল থেকে রক্ষা পাবে।