কৃষকরা সামনের দিন নিয়ে দুশ্চিন্তায়

0
559
blank
blank

বিশেষ প্রতিনিধি: হাওরাঞ্চলে ৯০ ভাগ ফসল তলিয়ে যাওয়ায় প্রান্তিক কৃষকদের পাশাপাশি বেকায়দায় পড়েছেন মধ্যবিত্ত কৃষকরাও। এরা না পারছেন ভিজিএফ পাওয়ার চেষ্টা করতে। না পারছেন ওএমএস’র লাইনে দাঁড়াতে। বিপন্ন মধ্যবিত্ত কৃষকদের কেউ কেউ আপাতত গরু বিক্রি করে পরিবারের খরচ চালাচ্ছেন। আবার গরু বিক্রি’র টাকায় কেউ মহাজনী ঋণও পরিশোধ করছেন। কিন্তু নিজের এবং পরিবার পরিজনের সামনের দিনগুলো কীভাবে কাটবে এই দুশ্চিন্তায় ঘুমোতে পারছেন না মধ্যবিত্ত কৃষকরা।
সুনামগঞ্জের শনির হাওর পাড়ের ভাটি তাহিরপুরের মধ্যবিত্ত কৃষক মুহিবুর রহমান। কৃষি কাজ করেই জীবন-জীবিকা চলছে মুহিবুর রহমানের পরিবারের। মুহিবুর রহমান জানালেন, কয়েক পুরুষ ধরেই তাদের পরিবারের পড়াশুনা, ছেলে-মেয়ের বিয়ে সবই চলছে একমাত্র ফসল বোরো ধান বিক্রি করেই। বংশানুক্রমিকভাবে এই প্রজন্মের জীবিকা কৃষির উপর নির্ভরশীল।
মুহিবুর রহমানের ৩ ছেলে’র এক ছেলে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে, আরেক ছেলে এইচএসসি পরীক্ষার্থী। তিনি বললেন,‘৪ টি গরু ছিল, দুটি দামা, একটি ডেকা গরু এবং একটি দুধের গাভী। যেদিন হাওর ডুবেছে, সেদিনই (৪ দিন আগে) ৩ টি গরু ৬০ হাজার টাকায় বিক্রি করে কামলা (কর্মচারী) খরচ মিটিয়েছি। কিছু ঋণ ছিল, দিয়েছি। আজ বৃহস্পতিবার দুধের গাভীটি বাচ্চাসহ ২৮ হাজার টাকায় বিক্রি করলাম। গরু বিক্রি’র টাকা দিয়েই চাল কিনছি, অন্যান্য খরচের টাকাও দিচ্ছি। এমন বিপদে আগে কোন দিন পড়িনি। এজন্য চিন্তায় কেবল মাথা ঘুরছে। সামনের দিনগুলো কীভাবে চলবো। ৩ হাল জমি করে এক মুঠা ধান ঘরে তুলতে পারিনি। আমরা ভিজিডি, ভিজিএফ’র জন্যও যেতে পারবো না। কৃষি ব্যাংক থেকে ২০ হাজার টাকা ঋণ তুলেছিলাম। এখন নতুন ঋণ পাবো কী-না, এটিও জানা নেই।’ মুহিবুর জানালেন, গৃহস্থি দিয়েই ঘুরে দাঁড়াতে হবে তাঁদের। এজন্য আগের নেওয়া ঋণ সুদসহ মওকুপ করতে হবে এবং নতুন করে বিনা সুদে ঋণ দিতে হবে। ঋণ না দিলে আগামী মৌসুমে জমি মই দেবার জন্য গরুও কেনা যাবে না। বীজ এবং সার দিয়েও সহায়তা করতে হবে’।
কেবল মুহিবুর রহমানেরই এমন দুঃসময় আসেনি। জেলাজুড়ে প্রান্তিক কৃষকদের পাশাপাশি মধ্যবিত্ত এবং বড় কৃষকরাও এবার বিপাকে পড়েছেন।
শাল্লার বাহাড়া ইউনিয়নের নাইন্দা গ্রামের কৃষক লোকেশ তালুকদার নিজের ৫ হাল জমি এবং রংজমা ৩ হালসহ ৮ হাল জমি চাষ করেছিলেন। ফসল ঠিকভাবে ওঠানো গেলে কমপক্ষে ১ হাজার মণ ধান বিক্রি করতেন তিনি। তাঁর সকল ধানই শীষ গজানোর আগে ডুবেছে। ১৬ টি গরু ছিল ১১ টি বিক্রি করে ১ জন মহিলাসহ ৬ জন গৃহ শ্রমিকের বাৎসরিক বেতন মিটিয়েছেন।
লোকেশ তালুকদার বলেন,‘আমার মতো কৃষককে বাঁচিয়ে না রাখতে পারলে দেশই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সামনের মৌসুম পর্যন্ত আমাদের বাঁচিয়ে রাখতে হবে। একজন ভাল শ্রমিককে সামনের মৌসুমের জন্য কাজে লাগাতে হলেও আগে টাকা দিয়ে আনতে হয়। বীজ, সার এবং গরুও কিনতে হবে। এই অবস্থায় বিনা সুদে ঋণ দেওয়া ছাড়া কোন উপায় নেই।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক জানালেন, জেলায় কার্ডধারী কৃষকদের মধ্যে প্রান্তিক কৃষক রয়েছেন- ৯১ হাজার ৬০৯ জন, ক্ষুদ্র কৃষক আছেন এক লাখ ৩২ হাজার ১৯৮ জন, মধ্যবিত্ত কৃষক ৬৩ হাজার ১৮৮ জন এবং বড় কৃষক ১৩ লাখ ১৪৮ জন। সকল ক্ষতিগ্রস্ত কৃষককেই প্রয়োজনীয় সহায়তা দেবার প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে।
সোনালী ব্যাংকের সুনামগঞ্জ অঞ্চলের অ্যাসিটেন্ট জেনারেল ম্যানেজার দোলন চক্রবর্তী বলেন,‘বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ঋণ আদায় আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে। কৃষকরা বকেয়া কৃষি ঋণের মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করে নতুন করে কৃষি ঋণ নিতে পারবেন।’