খালেদা জিয়ার জামিন নিয়ে আশাবাদী আইনজীবীরা

0
461
blank
blank

ঢাকা: জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট। আপিল বিভাগেও তিনি জামিন পাবেন এবং কারামুক্ত হবেন বলে আশাবাদী খালেদা জিয়ার শীর্ষ আইনজীবীরা। তারা মনে করেন যেভাবে খালেদা জিয়ার জামিন আটকে গেছে তার নজির উপ-মহাদেশের ইতিহাসে নেই। সে কারণে হাইকোর্টে জামিন হওয়ার পর সর্বোচ্চ আদালত আপিল বিভাগেও কোনো ব্যতিক্রম হবে না। তিনি জামিন পাবেন এবং কারামুক্ত হবেন।

গত রোববার আইনজীবীরা কারাগারে দেখা করতে গেলে বেগম খালেদা জিয়া তাদের কাছে জানতে চেয়েছেন, কেন তার জামিন হচ্ছে না। আইনজীবীরা সরাসরি এ প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে তাকে আশ্বস্ত করেছেন, দেশে আইনের শাসন যদি বিন্দুমাত্রও থাকে তা হলে এই ‘রাজনৈতিক প্রহসনের’ মামলা থেকে তিনি মুক্ত হবেন।

তবে তারা জামিন বিলম্বের কারণ হিসেবে বলেছেন, এই মামলার পেছনে রাজনীতির বিষয়টিও আছে। দুদকের পেছনে সরকার আছে। সব কিছু রাজনৈতিকভাবে করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে খালেদা জিয়ার অন্যতম প্রধান আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, যেভাবে বেগম খালেদা জিয়ার জামিন আটকে গেছে উপ-মহাদেশে তা নজিরবিহীন। তিনি বলেন, আমি বেগম খালেদা জিয়ার জামিনের ব্যাপারে এ কারণে আশাবাদী যে উপ-মহাদেশে এমন কোনো নজির নেই যে হাইকোর্টে জামিন দেয়ার পর তার বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল গ্রহণ করে শুনানির আগ পর্যন্ত জামিন স্থগিত করা হয়।
তিনি বলেন, অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ভারতের জয়ললিতার কথা বলেছেন। অথচ তাকে হাইকোর্ট স্থগিত করার পর আপিল বিভাগ জামিন দিয়েছেন। অ্যাটর্নি জেনারেল ভারতের লালু প্রসাদ যাদবের কথা বলেছেন। অনেক মামলায় হাইকোর্ট জামিন না দিলেও আপিল বিভাগ জামিন দিয়েছেন। আমরা তা দেখেছি।
খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, এটা যেহেতু বেগম খালেদা জিয়ার মামলা এবং তিনি একজন শীর্ষ রাজনৈতিক দলের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী, তাই তাকে দীর্ঘ সময় কারাগারে রাখার অশুভ চেষ্টা করা হচ্ছে। সরকারের ইচ্ছায় দুদক সব কিছু করছে। যেখানে রাষ্ট্রের হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট হয়ে যাচ্ছে সে দিকে নজর না দিয়ে বেগম খালেদা জিয়াকে দীর্ঘ সময় কারাগারে রাখার অশুভ চেষ্টা করা হচ্ছে। সব কিছু রাজনৈতিক কারণে করা হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, দেশের নি¤œ আদালতে আইনের শাসন নাজুক অবস্থায় আছে। উচ্চ আদালতেও বিভিন্ন সময় সরকারের ইচ্ছার প্রতিফলন হচ্ছে। আমি মনে করি সর্বোচ্চ আদালতে এমন কোনো কিছু হবে না, যাতে জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। আমি মনে করি আপিল বিভাগ বেগম খালেদা জিয়াকে জামিন দেবেন।

খালেদা জিয়ার অপর আইনজীবী ও সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের নবনির্বাচিত সভাপতি জয়নুল আবেদীন এ বিষয়ে বলেন, আমরা মনে করি খালেদা জিয়া উচ্চ আদালত থেকে জামিন পেয়ে কারামুক্ত হবেন। তিনি বলেন, এই মামলা একটি রাজনৈতিক প্রহসনমূলক মামলা। এখানে তেমন কিছু নেই। পাঁচ বছরের সাজা মামলায় উচ্চ আদালত আপিল গ্রহণের সময় জামিন দেন। আশা করি আপিল বিভাগেও তিনি জামিন পাবেন। সাজা বৃদ্ধি চেয়ে দুদকের আপিল আবেদন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দুদক সরকারের ইচ্ছা বাস্তবায়ন করছে।

গত ১২ মার্চ হাইকোর্টে খালেদা জিয়ার জামিন হওয়ার পর সারা দেশে বিএনপি নেতাকর্মী ও আইনজীবীরা আশাবাদী হন বেগম খালেদা জিয়া মুক্তি পাবেন। কিন্তু গত ১৯ মার্চ জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়ার জামিন আগামী ৮ মে পর্যন্ত স্থগিত করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। একই সাথে খালেদা জিয়াকে হাইকোর্টের দেয়া জামিন আদেশের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও রাষ্ট্রপক্ষকে আপিলের অনুমতি দিয়েছেন আদালত। আগামী ৮ মে ওই আপিলের শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।

আদেশের পর খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা অভিযোগ করেন, যেহেতু এই মামলাটি ওয়ান ইলেভেনের সময় করা। মাইনাস টু থিওরি বলবৎ করার জন্য বেগম খালেদা জিয়া এবং আমাদের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের মামলা করে তাদের জেলে নেয়া হয়। উদ্দেশ্য ছিল সমঝোতার ভিত্তিতে এই দুইজনকে রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে বিদায় করা। শেখ হাসিনা ওয়ান ইলেভেন সরকারের এই অসৎ উদ্দেশ্য বুঝতে পেরে সাথে সাথে আপস করলেন এবং ওয়ান ইলেভেনের সরকার তাদের আন্দোলনের ফসল বলে ঘোষণা দিলেন। অন্য দিকে আপসহীন নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ওই অগণতান্ত্রিক সরকারের সাথে আপস করলেন না, এমনকি তাকে বিদেশে পাঠানোর চাপ প্রত্যাখ্যান করেন। এরপর একটি প্রহসনের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ওয়ান ইলেভেনের সরকার শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় আনে। ক্ষমতায় আসার পর তার বিরুদ্ধে ১৫টি মামলাসহ সব দুর্নীতির অভিযোগ একের পর এক খারিজ হয়। অন্য দিকে বেগম খালেদা জিয়ার মামলা থেকে যায়। তাকে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় পাঁচ বছরের সাজা দেয়া হলো। হাইকোর্ট জামিন দিলেন। দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে বিভিন্ন আবেদন করে। দীর্ঘ শুনানি করে আপিল বিভাগ দুদক ও সরকারের লিভ টু আপিল গ্রহণ করলেন। এটা নজিরবিহীন।

প্রসঙ্গত, গত ৮ ফেব্রুয়ারি বেগম খালেদা জিয়াকে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়। ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ জজ আদালত এ রায় ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণার পরপরই বেগম খালেদা জিয়াকে আদালত থেকে গ্রেফতার করে পুরান ঢাকার সাবেক কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। এ ছাড়া এ মামলায় বেগম খালেদা জিয়ার বড় ছেলে ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ অপর চার আসামিকে ১০ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড এবং দুই কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

গত ২০ ফেব্রুয়ারি নিম্ন আদালতের সাজার রায়ের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়ার খালাস চেয়ে আপিল দায়ের করা হয়। ২৫ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনের শুনানি শেষে বিচারিক আদালতের নথি পৌঁছার পর জামিন বিষয়ে আদেশের জন্য সময় নির্ধারণ করেন হাইকোর্ট। ১২ মার্চ চারটি যুক্তি আমলে নিয়ে বিচারপতি এম এনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের হাইকোর্ট বেঞ্চ খালেদা জিয়াকে চার মাসের জামিন দেন। এর বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল আবেদন করে দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষ।