গুম হওয়া সন্তানের মায়ের কান্না প্রধানমন্ত্রীর কানে পৌঁছায় না

0
475
blank
blank

নিজস্ব প্রতিবেদক: সরকারের কি কোন দায়িত্ব নেই? আর কত বছর অপেক্ষা করবো। গুম হওয়া আমার সন্তানের জন্য আমার কান্না কি প্রধানমন্ত্রীর কানে পৌঁছবে না। এমন আক্ষেপ নিয়ে আকুতি করেন গুম হয়ে যাওয়া আব্দুল কাদের মাসুমের মা আয়শা আলী। বিগত কয়েক বছরে গুম হয়ে যাওয়া ২১ জন পরিবারের সদস্যদের আকুতি কবে খোঁজ মিলবে? হারিয়ে যাওয়া স্বজনের।
শনিবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে গুম হয়ে যাওয়া পরিবারের সদস্যরা এক মানবন্ধনে দাঁড়িয়ে তাদের হারিয়ে যাওয়া স্বজনদের ঈদের আগে ফেরত চেয়েছেন। তা না হলে ঈদের দিন কর্মসূচিতে যাবেন বলে জানিয়েছেন এ সকল পরিবারের সদস্যরা।
মানববন্ধনে দেখা যায়, শিশুরা তার বাবার ছবি হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে, হারিয়ে যাওয়া সন্তানের খোঁজে মায়ের চোখে পানি, স্বামীর অপেক্ষায় মুখে কাপড় চেপে দাঁড়িয়ে আছে স্ত্রী।
তিন বছর আগে গুম হয়ে যাওয়া পারভেজ হোসেনের ছোট্ট মেয়ে হৃদি তার মা ফারজানা আক্তারের সাথে প্রেসক্লাবের সামনের রাস্তায় দাঁড়িয়ে বারবার বলতে ছিলো, ‘আমার পাপাকে ফিরিয়ে দাও। পাপাকে ছাড়া ভালো লাগে না। আমরা পাপার সাথে মার্কেটে যেতে চাই, তার সাথে ঈদ করবো।”মায়ের ডাক- গুম-খুন আর নয়। ঈদুল ফিতরের আগে গুম হওয়া সন্তানদের মায়ের কোলে ফিরিয়ে দাও’ এমন ব্যানার নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা স্বজনদের সারিতে নাগরিক ঐক্যের আহ্ববায়ক মাহামুদুর রহমান মান্না বলেন, আমিও হারিয়ে গিয়েছিলাম। ২১ ঘণ্টা আমার কোন খোঁজ ছিলো না। এরপর ফিরে এসে পরিবারের লোকদের চোখে দেখেছি কি আর্তনাদ।
নিজের গুম হয়ে যাওয়ার কথা থামিয়ে মাহামুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘মা কাঁদেন, সন্তান ছবি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে এসব স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দেখেন না। গুম হওয়া সন্তানের মায়ের কান্না প্রধানমন্ত্রীর কানে পৌঁছায় না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বজন হাড়ানোর ব্যথা আমি বুঝি। কিন্তু অন্যদের স্বজন হাড়ানোর ব্যথা তিনি বুঝেন না’।
তিনি আরো বলেন, ‘গুম হওয়া লোকদের খুঁজে আনার দায়িত্ব প্রশাসনের। কিন্তু তারা সেই দায়িত্ব পালন করে না। পুলিশ সরকারের হুকুমের বাইরে কোন কাজ করে না। এমনটা কি কোন রাষ্ট্রের ভূমিকা হতে পারে? ’
মান্না বলেন, ‘বর্তমানে হাড়িয়ে যাওয়া স্বজনরা পুলিশের কাছে অভিযোগ করতে ভয় পাচ্ছেন। কারণ হাড়িয়ে যাওয়া ব্যাক্তি প্রশাসন বলছে তিনি জঙ্গিবাদে জড়িয়ে গেছেন কিনা। জঙ্গি এমন এক শব্দ যা শুনলে সবাই চুপ হয়ে যায়।’
এ সময় জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ফায়জুল হাকিম লালা বলেন, ‘দেশে আইনের শাসন নেই। বেআইনিভাবে রাষ্ট্রের নাগরিকদের আজ হত্যা করা হচ্ছে। কান্না নয়, চিৎকার করতে হবে, গুম হয়ে যাওয়া স্বজদের দাবি তুলতে হবে।’
বাংলাদেশ মানবাধিকার সমিতির মহাসচিব মো. মঞ্জুর হোসেন ঈসার সঞ্চালনায় মানববন্ধনে আরো বক্তব্য রাখেন গুম হওয়া চঞ্চলের স্ত্রী রেশমা আক্তার, ছোট ছেলে আহাদ, তারার স্ত্রী বেবি আক্তার, সেলিম রেজার পিন্টুর বড় ভাই ইসলাম রেজা, ব্যারিস্টার সাদিয়া আরমান, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, আইন ও সালিস কেন্দ্রের সাবেক নির্বাহী পরিচালক নূর খান লিটন, ফেরদৌসী রহমান, অধিকারের পরিচালক নাসির উদ্দিন এলান প্রমুখ।