হাটহাজারী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি: সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে গ্রিক দেবীর ভাস্কর্য অপসারণের মাত্র দুই দিনের মাথায় শনিবার রাতে সুপ্রিম কোর্টের এনেক্স ভবনের সামনে পুনঃস্থাপন করাকে অত্যন্ত হতাশাজনক উল্লেখ করেছেন হেফাজতে ইসলামের আমির শায়খুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফী। রোববার গণমাধমে পাঠানো হেফাজত আমিরের প্রেস সচিব মাওলানা মুনির আহমদ স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ সব কথা উল্লখ করা হয়।
শাহ আহমদ শফী বলেন, থেমিস দেবীর ভাস্কর্য অপসারিত হয়েছে জেনে অসুস্থ শরীরেও আনন্দ পেয়েছিলাম। দেশবাসীর সঙ্গে শুকরিয়া জ্ঞাপন করছিলাম। কিন্তু মাত্র দু’দিনের মাথায় যখন দেশবাসী পবিত্র রমজানকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুতি নিচ্ছিল, প্রথম রোজার তারাবিহ আদায় করে প্রশান্ত চিত্তে ঘরে ফিরেছিল, তখনই এমন সংবাদে সমগ্র দেশবাসীর সঙ্গে আমরা বিস্মিত হতবাক এবং বাকরুদ্ধ।
হেফাজতের আমির বলেন, আমরা বারে বারে বলেছি, ইসলামে ইনসাফ বা ন্যায়ের ধারণা একটি মৌলিক ধারণা বা গুরুত্বপূর্ণ বিধান। এমনকি ইনসাফ কায়েম ছিল বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের ঘোষিত লক্ষ্য। সেই ন্যায়ের বা ইনসাফের কোনও প্রতীকায়ন যদি গ্রিক ঐতিহ্য থেকে ধার করা হয়, তবে প্রকারান্তরে এটাই ধরে নেয়া হয় যে আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্যে ও ধর্মে ন্যায়ের কোনও ধারণা বা অবস্থান ছিল না। এটা উপনিবেশিক ভাবাদর্শ।
আল্লামা শফী বলেন, থেমিস সুপ্রিম কোর্টের সামনে থাকবে, নাকি পেছনে থাকবে—এইটা কোনও ইস্যু কখনও ছিল না। নামাজের সময় কালো কাপড়ে মুড়ে দেয়া হবে কি হবে না—এইটাও ইস্যু ছিল না। ইস্যু ছিল, থেমিস থাকবে কি থাকবে না। এইখানে মধ্যপন্থা নেয়ার কোনও সুযোগ নাই।
তিনি বলেন, আমরা আমাদের ঈমান ও আক্বিদার জমিনে দাঁড়িয়ে এই উপনিবেশিক ভাবাদর্শের বিরুদ্ধেই বলেছি, অথচ সেক্যুলার মিডিয়া আমাদের যুক্তি বার বার উপেক্ষা করেছে। আমাদের এই যুক্তির কথা তাদরেকে বার বার জানানো হলেও তারা তা ছাপায় না। এমনকি আমরা এও বলেছি, দেবী থেমিস আধুনিক রাষ্ট্র ধারণায় বিচার বিভাগের যে অবস্থান, তারও পরিপন্থী। কারণ, থেমিস গ্রিক সংস্কৃতির ঐশ্বরিক আইনের (ডিভাইন ল’) প্রতীক। যে রাষ্ট্র নিজেকে আলাদাভাবে স্যেকুলার বলে পরিচয় দিয়ে নিজের কৌলিন্য জারি করে, সে কীভাবে গ্রিক ঐশ্বরিক আইনের প্রতীককে নিজের বলতে পারে?
হেফাজত আমির আরো বলেন, এ পর্যায়ে দ্বিতীয় প্রশ্নটি আরো মারাত্মক। গ্রিক পুরাণ মতে, থেমিস সোশ্যাল অর্ডার বা সামাজিক শৃঙ্খলাও রক্ষা করে। সে শুধু ন্যায় বিচারই করে না, সে শক্তি প্রয়োগে সামাজিক শৃঙ্খলাও রক্ষা করে। থেমিসের হাতের তরবারি সেই শক্তি প্রয়োগের প্রতীক। আধুনিক রাষ্ট্র সামাজিক শৃঙ্খলার দায়িত্ব বিচার বিভাগকে দেয় না। তা থাকে নির্বাহী বিভাগে। আমরা বিস্ময় প্রকাশ করেছিলাম যে, ঠিক কোন যুক্তিতে নিজেদের আধুনিক ও প্রগতিশীল দাবি করা বাম সেক্যুলারেরা থেমিসের পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন?
আহমদ শফী বলেন, থেমিস অপসারণে যখন আমরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছিলাম, রমজানের আগেই কোনও সংঘাত ছাড়াই থেমিস অপসারণে ভেবেছিলাম সবার শুভবুদ্ধির উদয় হয়েছে, ঠিক তখন মুসলমানদের কাছে অত্যন্ত পবিত্র মাস রমজানের প্রথম রাত্রে থেমিসকে পুনঃস্থাপন করে জাতির ধর্মীয় বিশ্বাস ও আবেগের সঙ্গে তামাশা করা হয়েছে।
শাহ আহমদ শফী বলেন, আমি খবর পেয়েছি থেমিস পুনঃস্থাপনের প্রতিবাদ জানাতে গভীর রাতেও তৌহিদি ছাত্র-জনতা প্রেস ক্লাবে সমবেত হয়েছেন। তারা সেখানে রাস্তায় সেহরি করেছেন। শুধু তাই নয়, আমি শুনেছি প্রতিবাদ মিছিলে পুলিশি হামলা হয়েছে, গ্রেফতার হয়েছেন অনেকে। এই সংবাদে আমি মর্মাহত এবং ক্ষুব্ধ।
তিনি বলেন, আমরা সংশ্লিষ্ট সবাইকে বাস্তবতা বুঝে সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য আবারো অনুরোধ জানাই। আজকের মধ্যেই গ্রেফতারদের নিঃশর্ত মুক্তি চাই এবং কার উসকানিতে হামলা হয়েছে, তা তদন্ত করে দোষীদের বিচার চাই। সংশ্লিষ্ট সবাইকে আহ্বান জানাই, নাগরিকদের ধর্মীয় বিশ্বাস ও আমাদর জাতীয় চেতনা ও ঐতিহ্য নিয়ে তামাশা বন্ধ করে গ্রিকদের দেবী থেমিসকে চিরতরে দেশ থেকে অপসারণ করুন। ইসলাম বিরোধী নানা কর্মকাণ্ড ছড়িয়ে দিয়ে দেশকে আল্লাহর ভয়াবহ আযাব ও গজবের দিকে দয়া করে ঠেলে দেবেন না। আমার বিশ্বাস, পরম করুণাময় আল্লাহ সবাইকে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার তাওফীক দেবেন।
সম্পাদক ও প্রকাশক: শিব্বির আহমদ ওসমানী [এমএ, এলএলবি (অনার্স), এলএলএম] যোগাযোগ: বনকলাপাড়া রোড, সুবিদবাজার, সিলেট- ৩১০০। ই-মেইল: damarbangla@gmail.com ফোন: ৭১৪২৭১, মোবাইল: +৮৮ ০১৭১৪৪৫৭৭৯২ www.dailyamarbangla.comCopyright © 2024 Daily Amar Bangla. All rights reserved.