ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে সবকিছু করছে সরকার: প্রধানমন্ত্রী

0
475
blank

নিজস্ব প্রতিবেদক: ঘূর্ণিঝড় মোরায় ক্ষয়ক্ষতির তালিকা করে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে সরকার সব ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বুধবার দশম জাতীয় সংসদের ১৬তম অধিবেশনে সরকারদলীয় সংসদ সদস্য মাহবুব উল আলম হানিফের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মোরায় ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করতে এরই মধ্যে দল ও প্রশাসন কাজ করছে। নিখোঁজদের উদ্ধারে নৌবাহিনীর ১২টি জাহাজ ও দুটি টহল বিমান কাজ করছে। দুর্যোগের সময় যাতে দেশে খাদ্য ঘাটতি দেখা না দেয় সেজন্যে চাল আমদানি করা হচ্ছে। এ ছাড়া ক্ষতিগ্রস্তদের খাদ্য ও বাড়িঘর মেরামতে নগদ অর্থ সহায়তা দেওয়া হবে। যাদের ঘরবাড়ি নষ্ট হয়েছে তাদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। প্রত্যেকে যাতে ঘর বানাতে পারেন সে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তিনি বলেন, ‘জনগণের সেবার জন্যই আমরা রাজনীতি করি। শুধু সরকারি দলে থাকলেই নয়, বিরোধীদলে থাকতেও আমরা দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি। ঘূর্ণিঝড় দুর্গত এলাকার মানুষের সহযোগিতায় সরকারিভাবে এবং দলীয়ভাবে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রশাসনের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কয়েকটি টিম গঠন করা হয়েছে। এসব টিম আজই দুর্গত এলাকার উদ্দেশে রওয়ানা হবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ের সময় বিএনপি ক্ষমতায় ছিল। সে সময় ঘূর্ণিঝড়ের আগাম কোনো ঘোষণা বা প্রস্তুতি না থাকার কারণে লাখ লাখ মানুষ মারা গিয়েছিল। মানুষের পাশাপাশি গবাদি পশু, জমির ফসল সব পানিতে ভেসে গিয়েছিল। তখনও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে টিম দুর্গত এলাকায় গিয়েছিল। মানুষের দাফনের ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি মানুষের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে। তখন সংসদে বিষয়টি উত্থাপন করা হলে তৎকালীন সংসদ নেতা খালেদা জিয়া দাঁড়িয়ে বলেছিলেন- ‘যত মানুষ মরার কথা ছিল তত মানুষ মরেনি’।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সব সময় সতর্ক। ঝড় আসলে কী কী করণীয়, এ ব্যাপারে একটি বই ছাপানো হয়েছে। বইটিতে স্থানীয় প্রশাসন ও কেন্দ্রীয়ভাবে কী করণীয় এ ব্যাপারে সব ধরনের গাইডলাইন দেওয়া রয়েছে।

তিনি বলেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার দেশের উপকূলীয় মানুষের প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। ১০০টি বহুমুখী ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। আরো ২২০টি বহুমুখী ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রের নির্মাণকাজ চলছে। ভবিষ্যতে আরো আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে।

স্বতন্ত্র সদস্য রুস্তম আলী ফরাজীর অপর এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘প্রাকৃতিক দুর্যোগ আমাদের সাথী। দুর্যোগ মোকাবিলার সক্ষমতাও আমাদের রয়েছে এবং আমরা এই সক্ষমতার প্রমাণ রেখেছি।’

হাওর ও উপকূলীয় এলাকায় বেরিবাঁধ নির্মাণ করা হবে উল্লেখ করে তিনি পানি উন্নয়ন মন্ত্রণালয়কে প্রকল্প বাস্তবায়নে আরো গতিশীল হওয়ার আহ্বান জানান।

সরকারি দলের সদস্য মো. আবদুল্লাহর এক তারকা চিহ্নিত প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত হাওরবাসীর দুঃখ-দুর্দশা লাঘবে আমি নিজে দুইবার দুর্গত এলাকা পরিদর্শন করেছি। এ ছাড়া সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তি, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, সংসদ সদস্য, সচিব ও সিনিয়র সচিবসহ বিভিন্ন কর্মকর্তারা বন্যাকবলিত এলাকা নিয়মিত পরিদর্শন করছেন।’

তিনি বলেন, পাহাড়ি ঢল ও আকষ্মিক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হাওরবাসীর দুর্দশা লাঘবে ২২মে পর্যন্ত ৩ হাজার ৯২৪ মেট্রিকটন জিআর চাল, ২ কোটি ২৪ লাখ ৯৭ হাজার টাকা জিআর ক্যাশ, ৩ লাখ ৩০ হাজার পরিবারকে মাসিক ৩০ কেজি হারে (২৩ এপ্রিল থেকে জুলাই ২০১৭) ৩ মাস ৮ দিনের জন্য মোট ৩২ হাজার ৩৪০ মেট্রিকটন ভিজিএফ চাল, ৩ লাখ ৩০ হাজার পরিবারকে মাসিক ৫০০ টাকা হারে ৩ মাসের জন্য (মে-জুলাই, ২০১৭) মোট ৪৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা, অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসৃজন কর্মসূচির আওতায় ৯১ হাজার ৪৪৭ জন সুবিধাভোগীকে ৮২ কোটি ৭ লাখ ৬৮৯ টাকা, ৫টি জেলার ৫০ হাজার ক্ষতিগ্রস্ত মৎসজীবী ও ক্ষুদ্র কৃষক পরিবারকে মাসিক ৩০ কেজি হারে ৩ মাসের জন্য মোট ৪ হাজার ৫০০ মেট্রিকটন এবং পরিবার প্রতি ৫০০ টাকা হারে ৩ মাসের জন্য ৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।