চলতি মাসে আসছে জামায়াতের নতুন দল

0
711
blank
blank

চলতি মাসে নতুন দল গড়তে যাচ্ছে জামায়াতের সংস্কারপন্থীরা। সংশ্লিষ্ঠ সূত্র জানা গেছে, এ দলটি পরবর্তিতে নির্বাচন কমিশনে নতুন করে নিবন্ধন চাইবে। নতুন নামে দল গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়ে দলের সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমানের নেতৃত্বে কমিটি গঠিত হলেও এখনও এর কোন অগ্রগতি হয়নি। এর মধ্যেই শোনা যাচ্ছে সংস্কারপন্থী নেতারা জামায়াত ছেড়ে নতুন দল গঠন করতে পারেন।

জামায়াতে সংস্কার এবং একাত্তরের ভূমিকার জন্য ক্ষমা চাইতে শীর্ষ নেতৃত্বকে রাজি করাতে ব্যর্থ হয়ে ১৫ ফেব্রুয়ারি পদত্যাগ করেন দীর্ঘদিন নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও সহকারী সেক্রেটারি জেনারেলের দায়িত্ব পালনকারী ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক। কয়েক বছর ধরে লন্ডনে স্বেচ্ছানির্বাসনে রয়েছেন তিনি।

আবদুর রাজ্জাক জামায়াত বিলুপ্ত করে একাত্তরে স্বাধীনতা বিরোধী ভূমিকার জন্য ক্ষমা চেয়ে নতুন নামে দল গঠনের পরামর্শ দিয়েছিলেন দলের আমির মকবুল আহমাদকে। একই দিন জামায়াত থেকে বহিষ্কৃত হন ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি মজিবুর রহমান মঞ্জু, যিনি দলের মজলিশে শূরার সদস্য ছিলেন। তিনিও একাত্তরের ভূমিকার জন্য ক্ষমা চেয়ে উদারপন্থি দল গঠনের পক্ষে ছিলেন।

সূত্র জানা যায়, মজিবুর রহমান মঞ্জু নতুন দল গঠনে সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করছেন। সম্প্রতি তিনি ‘নাগরিক সমাজ ব্যানারে রাজনৈতিক ও সামাজিক ইস্যুতে সভা-সেমিনার করে আলোচনায় রয়েছেন।

জামায়াতে ইসলামীর সংস্কারপন্থীদের একটি অংশ নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তারা এ কার্যক্রমকে নতুন দল না বলে ‘রাজনৈতিক উদ্যোগ’ বলছে। এ মাসের ২৭ এপ্রিল আনুষ্ঠানিকভাবে এ উদ্যোগের প্রকাশ হতে পারে। সম্প্রতি ঢাকায় জামায়াতের বিভিন্ন অঞ্চল এবং পেশার সাবেক ও বর্তমান দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের এক সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়েছে।

এদিকে দল ভাঙা ঠেকাতে বিভাগ ও জেলা পর্যায়ে সাংগঠনিক সফর কর্মসূচি শুরু করেছেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতারা। এসব সফরে তারা সংস্কারপন্থি নেতাদের অবস্থানের বিরুদ্ধে কথা বলছেন বলে দলের একাধিক সূত্র থেকে জানা গেছে।

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, সংস্কারপন্থীদের নতুন রাজনৈতিক উদ্যোগে গভীর চাপ ও উদ্বেগ অনুভব করছে মূল নেতৃত্বকে। এমন পরিস্থিতিতে দলের নীতিনির্ধারকেরা বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটে আর না থাকার যে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, সেখান থেকে সরে এসেছেন। তারই অংশ হিসেবে জামায়াত ৯ এপ্রিল ২০-দলীয় জোটের সভায় অংশ নেয়। যদিও আগের দিন রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কারামুক্তির দাবিতে অনুষ্ঠিত প্রতীকী অনশনে তারা অংশ নেয়নি। তবে হঠাৎ সিদ্ধান্ত বদলের বিষয়ে জামায়াতের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের মতামত জানা যায়নি।

এদিকে গত সপ্তাহে রাজধানীতে জামায়াতের বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিদের নিয়ে সদ্য বহিষ্কৃত নেতা মজিবুর রহমান মঞ্জুর নেতৃত্বে একটি সভার কথা জানাজানি হওয়ার পর জামায়াতের নীতিনির্ধারকেরা নড়েচড়ে বসেছেন।

মজিবুর রহমান বলেন, ‘আমরা কোনো দল বা মঞ্চ নয়, একটি নতুন রাজনৈতিক উদ্যোগের জন্য কাজ শুরু করেছি। আগামী ২৭ এপ্রিল এর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসতে পারে। তবে এর দিনক্ষণ এখনো চূড়ান্ত নয়।’

জামায়াতের মধ্যম সারির দুজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সংস্কারপন্থীদের নতুন দল গঠনের উদ্যোগ ঠেকাতে পাল্টা তৎপরতা শুরু করেছে দলটি। আপাতত তাদের লক্ষ্য, লন্ডনে অবস্থানরত সদ্য পদত্যাগী জামায়াত নেতা আবদুর রাজ্জাক ও সদ্য বহিষ্কৃত নেতা মজিবুর রহমান। এ দুজনের কার্যক্রম ও তৎপরতার ওপর সতর্ক নজর রাখছে জামায়াত।

নতুন দলে আবদুর রাজ্জাক থাকবেন কি না তা পরিষ্কার করেননি মজিবুর রহমান মঞ্জু। তিনি বলেছেন, তারা আবদুর রাজ্জাককে এখনো ‘অ্যাপ্রোচ’ করেননি। ভবিষ্যতে করতে পারেন।

সংস্কারপন্থিদের নতুন রাজনৈতিক উদ্যোগ গভীর চাপ ও উদ্বেগে ফেলেছে জামায়াতের মূল নেতৃত্বকে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে মুক্তিযুদ্ধের সময় ভূমিকার জন্য জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়াসহ দলের সংস্কার ঠেকাতে বিভাগ ও জেলা পর্যায়ে সাংগঠনিক সফর কর্মসূচি শুরু করেছেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতারা। তারা এসব সফরে সংস্কারপন্থি নেতাদের অবস্থানের বিরুদ্ধে কথা বলছেন।

জানা যায়, নীতিনির্ধারকেরা এখন নতুন দল গঠনের চেয়ে সংস্কারপন্থীদের সামাল দেওয়াতেই বেশি মনোযোগ দিয়েছেন। এ লক্ষ্যে অধিকাংশ কেন্দ্রীয় নেতা সারা দেশে সাংগঠনিক সফর শুরু করেছেন। তারা মাঠপর্যায়ের কর্মী-সমর্থকদের যে কোনো পরিস্থিতিতে ঐক্যবদ্ধ ও সংস্কারপন্থিদের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে বলছেন। তারা কর্মীদের বোঝানোর চেষ্টা করছেন, দলের দুঃসময়ে বিভিন্ন দাবিতে যারা দল ছেড়েছেন, তারা দলের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন।

এরই মধ্যে সেক্রেটারি জেনারেল শফিকুর রহমান সিলেট মহানগর, নায়েবে আমির মিয়া গোলাম পরওয়ার খুলনা, রফিকুল ইসলাম খান সিরাজগঞ্জ ও রাজশাহী এবং ডা. আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের কুমিল্লা সফর করেন। এরপর আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের অতিসম্প্রতি কুমিল্লার একটি আদালতে আত্মসমর্পণ করলে আদালত তাকে কারাগারে পাঠান।

[বিডি২৪লাইভ]