চাইলেই ব্যবস্থা নেওয়া যায় না: সেতুমন্ত্রী

0
458
blank

ঢাকা: চাইলেই পরিবহন মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যায় না বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, পরিবহন মালিকরা অনেক প্রভাবশালী। গাড়ি না নামালে দেশের বাস্তবতা অনুযায়ী চাইলেই তাদের বিরুদ্ধে কি কিছু করা যায়? তারা সংখ্যায় অনেক। বাস্তবতার নিরিখে চাইলেই ব্যবস্থা নেওয়া যায় না। চালক-মালিকরা যখন অন্যায় করে তখন সরকার ব্যবস্থা নিলে তারা গাড়ি নামায় না। তখন জনদুর্ভোগের পুরো দায়ভারটা মন্ত্রণালয়ের ঘাড়ে চাপে।
মঙ্গলবার সচিবালয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বিআরটিসি বাসে চাপা পড়ে মৃত্যুবরণকারী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী নাফিয়া গাজীর পরিবারকে আড়াই লাখ টাকার চেক হস্তান্তরকালে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এ কথা বলেন।
সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত নাফিয়া গাজীর পরিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ১০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করেছিল। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে এই টাকা চার কিস্তিতে নাফিয়া গাজীর পরিবারকে দেওয়া হবে। আজ প্রথম কিস্তি দেওয়া হয়।
মন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান, গণপরিবহনের নৈরাজ্য পর্যালোচনায় বৈঠকে বসছেন পরিবহন মালিক, বিআরটিএ, বিআরটিসিসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো। আগামীকাল বুধবার এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। তবে কোথায়, ঠিক কখন এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে, তা জানাননি মন্ত্রী।
সরকার কি গণপরিবহনে নৈরাজ্য ঠেকাতে ব্যর্থ, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সফলতা-ব্যর্থতা দুটোই তো আছে। নৈরাজ্য ঠেকাতে ব্যবস্থা না নিলে আপনারা (সাংবাদিকরা) লেখেন, সরকার নৈরাজ্য ঠেকাতে ব্যর্থ। আবার নৈরাজ্য ঠেকাতে রুট পারমিট বাতিল করতে গেলে মালিকরা একজোট হয়ে বাস নামায় না। তখন জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হলে আপনারা এর জন্য সরকারকে দোষারোপ করে লেখেন।’

পরিবহন মালিকরা ফের সিটিং সার্ভিস চালুর পাঁয়তারা করছে কিনা, জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘এটা তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসলেই বোঝা যাবে, তারা কী চায়।’
সরকারের চেয়েও কি পরিবহন মালিকরা প্রভাবশালী, জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘শোনেন, সরকারের চেয়ে প্রভাবশালী এ কথাটা ঠিক নয়। সরকার যখন এটা বাঁধন-কষণ শুরু করবে তখন ফস্কা গেরো হয়ে যায়। তখন আপনারাও বলেন সরকার বাড়াবাড়ি শুরু করেছে।’
তিনি বলেন, সরকার যখন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে যায় তখন কী হয়- রাতের অন্ধকারে তারা জ্বালাও-পোড়াও করে। সীতাকুণ্ডে ওয়েস্কেল মেশিন পুড়িয়ে দিল বিক্ষোভ মিছিল করে। তখন সরকারকে একাই ব্যবস্থা নিতে হয়। তারপর কিন্তু আর কেউ সামনে আসে না।
গণপরিবহনে জনদুর্ভোগের কথা তুলে ধরা হলে তিনি বলেন, জনগণের দুর্ভোগ হচ্ছে, কষ্ট হচ্ছে অনেকের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি সক্রিয় বিবেচনায় নিয়ে সমাধানের চেষ্টা চলছে।’
মন্ত্রী বলেন, বিআরটিএর চেয়ারম্যানকে আমি সকালে ডেকে এনেছি, মালিক সমিতির দু-তিনজনের সঙ্গেও কথা বলেছি। তাদের বলেছি, বিষয়টি রিভিউ করার জন্য। তারা যে সিদ্ধান্ত নিয়ে অভিযান করছে, এ বিষয়টি জনস্বার্থে রিভিউ করতে বলেছি।
ভোগান্তি কমাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিআরটিসি জনগণের পাশে দাঁড়াবে। সর্বোচ্চ সামর্থ্য দিয়ে রাস্তায় গাড়ি নামানো হবে বলেও জানান তিনি।
দীর্ঘদিন ধরে পরিবহন খাতের কাছে দেশবাসী জিম্মি, আপনি সরকারের একজন প্রভাবশালী ও তৎপর মন্ত্রী হওয়া সত্ত্বেও আপনি এ সমস্যা সমাধান করতে পারছেন না। এ বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমি রিজাইন করব আপনি চান? আমি প্রভাবশালী মন্ত্রী এ শব্দটাই খারাপ, ইয়েস আই অ্যাম অ্যাকটিভ, নো ইনফ্লুয়েন্টশিয়াল। বর্তমানে পরিবহন সেক্টর কি আগের তুলনায় ভালো নয়? দু-একটি ব্যাপার নিয়ে বলবেন মন্ত্রী সাহেব আপনি একেবারে ব্যর্থ। ব্যর্থতার ভাগ আছে, সব তো ব্যর্থ নয়।’
এ সময় উপস্থিত ছিলেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এম এ এস ছিদ্দিকসহ বিআরটিসি, বিআরটিএর শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা।