ঢাকা: বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বক্তব্যের পর শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় যে বক্তব্য দিয়েছেন তাকে দুর্বিনীত, রুচি ও শিষ্টাচার বহির্ভূত বলে আখ্যা দিয়েছে বিএনপি। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আজ এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, জয়ের বক্তব্যে রহস্য আরো বেশী ঘণীভুত হয়। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়-চুরির মালের কথা প্রকাশ হয়ে যাওয়াতে জয় সাহেব অস্থির হয়ে পড়েছেন। এমনকি জয়ের অপকীর্তি সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নিজেও।
রিজভী বলেন, গত মঙ্গলবার কুমিল্লার আদালতে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে কোটি টাকার মানহানির মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে। ঘৃণ্য রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এই মামলা দায়েরের বিরুদ্ধে আমি বিএনপির পক্ষ থেকে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ এবং অবিলম্বে তা প্রত্যাহারের জোর দাবি জানাচ্ছি।
রাজধানীর নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়। এ সময় বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা উপস্থিত ছিলেন।
এতে লিখিত বক্তব্যে রিজভী বলেন, আওয়ামী অনুরাগী এক ভূঁইফোড় সংগঠনের নেতা কুমিল্লা আদালতে কোটি টাকার মানহানির মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে। বেগম খালেদা জিয়া মে দিবসের জনসভায় আমেরিকান আদালতের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন- ‘প্রধানমন্ত্রীর পুত্রের ব্যাংক একাউন্টে তিনশো মিলিয়ন ডলারের হদিস মিলেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা-এফবিআই-এর একজন এজেন্টকে ঘুষ দিয়ে এক প্রবাসী বাংলাদেশী তরুণ বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর পুত্রের ব্যাপারে কিছু তথ্য সংগ্রহ করেছেন। সেখানে দেখা গেছে-সজীব ওয়াজেদ জয়ের একটি একাউন্টেই তিনশো মিলিয়ন ডলার তথা পঁচিশ শো কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। এটি সন্দেহজনক লেনদেন।’
রিজভী বলেন, এই টাকার উৎস কী তা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া জানতে চেয়েছেন। এই ঘটনা শুধু বেগম জিয়াই নয়, বাংলাদেশ সহ গোটা বিশ্বের মানুষের মনে প্রশ্ন- জয়ের এই টাকার উৎস কী ? এখন এই ঘটনার ব্যাখা ও নিজেকে নির্দোষ প্রমাণিত করার দায়িত্ব জয়ের, বেগম খালেদা জিয়ার নয়। তার একাউন্টে বিপুল পরিমান অর্থ যদি বৈধ হয় তাহলে তা জনসম্মুখে উপস্থাপন করতে সমস্যা না থাকারই কথা। এ নিয়ে সাংবাদিকসহ দেশ-বিদেশের যেকোনো অনুসন্ধানী সংগঠন বা সংস্থাই খোঁজখবর নিতে পারে। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়ার বক্তব্যের পর জয় সাহেব অস্থির হয়ে পড়েছেন।
তিনি আরো বলেন, শেখ হাসিনার শিরঃপীড়া এখন জয়কে নিয়ে। জয়ের অপকীর্তি সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী। আর প্রধানমন্ত্রী যখন কোনো কিছু সামাল দিতে পারেন না তখন অত্যাচার হুমকি উৎপীড়ণের পথ ধরে বিরোধী পক্ষের ওপর ক্রমাগত বিষাক্ত আক্রমণ চালাতে থাকেন। প্রধানমন্ত্রীর গুণধর পুত্রের গুণকীর্তন দেশে বিদেশে যেভাবে প্রচার হচ্ছে তাতে মনে হয় আওয়ামী তরী আর বেশিদিন পানিতে ভাসিয়ে রাখা যাবে না। প্রধানমন্ত্রী গত পরশু বলেছেন, ব্যবসা নয় মানুষের কল্যাণ করতে এসেছি। তিনি ঠিকই বলেছেন, সবকিছু দেখে মনে হচ্ছে তিনি দেশের বারোটা বাজিয়ে জয়ের কল্যাণ করতেই অধিকতর সময় ব্যয় করছেন। কারণ দেশের মানুষ এখনো শেয়ার বাজার লুটের টাকার হসিদ পায়নি, দেশের ব্যাংকগুলোর লুটের টাকার সন্ধান পায়নি। রাজকোষের রিজার্ভের চুরি হওয়া টাকা কিভাবে পাচার হলো তা কিন্তু জনগণের জানতে বাকি নেই।
রিজভী বলেন, গত পরশু প্রধানমন্ত্রীর পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে বেগম খালেদা জিয়া সম্পর্কে অশোভন ও রাজনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত মন্তব্য করেছেন। তিনি তো এ ধরণের মন্তব্য করতেই পারেন, কারণ আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চোরদের আপনার মা দেশপ্রেমিক খেতাব দেন। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এত বিপুল পরিমান অর্থ হাওয়া হয়ে গেল অথচ যে অর্থের পাহারাদার ছিলেন গভর্নর, সেই গভর্নরের বিদায়ে প্রধানমন্ত্রী কেঁদেছেন এবং সততার সার্টিফিকেট দিয়েছেন। যে ভোটারবিহীন সরকার চৌর্যবৃত্তিকে প্রাতিষ্ঠানিক রুপ দেন, বৈধতা দান করেন সেই অবৈধ সরকার প্রধানের পুত্র যখন দেশের একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও দেশের জনপ্রিয় একটি রাজনৈতিক দলের প্রধানের বিরুদ্ধে অশোভন কথা বলেন, তখন মানুষ হতবাক হয়ে যায়, তার পারিবারিক সংস্কৃতি নিয়ে বড় ধরণের প্রশ্ন চলে আসে। একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে সম্বোধন করাও তিনি শেখেননি, দেশের রাজনৈতিক দলের প্রধানের পুত্র হিসেবে বিপক্ষ রাজনৈতিক দলের প্রধানের বিরুদ্ধে কথা বলতে গিয়ে যতটুকু ভদ্রতা প্রদর্শন করা দরকার সেটির লেশমাত্রও তার মধ্যে নেই। একজন প্রধানমন্ত্রীর পুত্রের তিমিরাচ্ছন্ন চেতনা, জমিদারের বেপরোয়া তনয়ের মতো, যে উদ্ধত, অসহিষ্ণুতা আর মানুষকে অবজ্ঞা করাই হচ্ছে তার স্বভাব। এই ছেলে যদি কখনো রাষ্ট্রক্ষমতা হাতে পায়, তাহলে সজ্জন ভদ্রলোকদের দেশে বাস করাই কঠিন হয়ে পড়বে।